Thursday, May 29, 2025
বাড়িজাতীয়কলকাতায় ‘নতুন আতঙ্ক’ অ্যাডিনোভাইরাস

কলকাতায় ‘নতুন আতঙ্ক’ অ্যাডিনোভাইরাস

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,১৮ ফেব্রুয়ারি: কোভিড-পরবর্তী সময়ে যখন মাস্ক পরার প্রবণতা কমেছে, স্কুল-কলেজ খোলার পাশাপাশি সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে, সেসময় জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ছে শিশুদের, যাদের বেশিরভাগই আক্রান্ত অ্যাডিনোভাইরাসে।চিকিৎসকদের বরাতে আনন্দবাজার জানিয়েছে, হাসপাতালে আসা শিশুদের শতকরা ৯০ জনেরই শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ (রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন) দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশই ভাইরাল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এবং তাদের মধ্যে বেশির ভাগ আবার অ্যাডিনোভাইরাসের শিকার।কলকাতা ও জেলা হাসপাতালগুলোতে সাধারণ শয্যা ছাড়াও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোতে শিশুদের ভিড় তৈরি হয়েছে। ভেন্টিলেশনে রাখতে হচ্ছে শিশুদের। জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় এক বেডে একাধিক শিশুকে রাখতে হচ্ছে।২০১৮-১৯ সালের পর এবার অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণকে ‘ভয়াবহ’ বলছেন চিকিৎসকরা। এর পেছনে শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতিকে করাণ মনে করছেন তারা।কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায় চৌধুরীর জানান, জ্বর-সর্দিতে আক্রান্তদের মধ্যে অ্যাডিনোর প্রকোপ বেশি। ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের শিশুরোগ চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি জানান, জ্বর-সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শিশুরা আসছে। যাদের বয়স দুই বছরের নিচে, তাদের সমস্যা বেশি।আক্রান্তদের কাউকে ভেন্টিলেশন রাখতে হচ্ছে। ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের আইসিইউতে ১৪টি শয্যায় যারা ভর্তি রয়েছে, তাদের ১০ জনই অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত।

শিশু ছাড়াও বয়স্করাও আসছেন হাসপাতালগুলোতে। বড়দের শ্বাসনালির উপরিভাগ বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। জ্বর ও দীর্ঘ দিন ধরে কাঁশিতে ভুগছেন তাদের অনেকে।জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানান, আবহাওয়ার ঘন ঘন পরিবর্তন ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির বড় কারণ। মাস্ক পরা বন্ধ হয়েছে, স্কুল-কলেজও খুলে গেছে, ফলে আবহাওয়া পরিবর্তনে অল্পতেই কাবু হচ্ছেন আক্রান্তরা।আনন্দবাজার জানিয়েছে, গত জানুয়ারি মাসে আক্রান্তদের ৫০০ নমুনা পরীক্ষা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে ৩২ শতাংশের অ্যাডিনোভাইরাস, ১২ শতাংশের রাইনো ও ১৩ শতাংশের ক্ষেত্রে মিলেছে প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস।ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানান, অ্যাডিনো ডিএনএ ভাইরাস হওয়ায় কোষে বিস্তার, সংক্রমণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উপক্ষো করার বৈশিষ্ট্য আরএনএ ভাইরাসের থেকে আলাদা। এ অবস্থায় মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপ বাড়লেও আক্রান্তদের সকলে ওই ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা জানতে ভাইরাল-প্যানেল পরীক্ষা করা প্রয়োজন বলে জানান ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স’-এর জাতীয় কোঅর্ডিনেটর অতনু ভদ্র।আক্রান্ত শিশুদের শ্বাসের গতি পর্যবেক্ষণে রাখার পরামর্শ দিয়ে শিশুরোগ চিকিৎসক অগ্নিমিতা গিরি বলেন, পাতলা পায়খানা ও প্রস্রাব হচ্ছে কি না, সেটিও দেখতে হবে।

লক্ষণ কী

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্তরা মৃদু থেকে গুরুতর অসুস্থ হতে পারে, তবে মারাত্মক অসুস্থতার প্রবণতা কম দেখা যায়।দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অথবা যাদের আগে থেকেই শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ও হৃদরোগ রয়েছে তাদের এ ভাইরাসে মারাত্মক অসুস্থ হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।এর সাধারণ লক্ষণগুলো হল- সাধারণ সর্দি-জ্বর, গলাব্যথা, তীব্র ব্রংকাইটিস,  নিউমোনিয়া, চোখ-ওঠা রোগ বা কনজাঙ্কটিভাইটিস,  পাকস্থলী বা অন্ত্রের প্রদাহ, যা ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব ও পেটে ব্যথা সৃষ্টি করে।এছাড়া মূত্রাশয়ে প্রদাহ বা সংক্রমণ, নিউরলোজিক ডিজিস যেমন, ব্রেইন ও স্পাইনাল কর্ডে সমস্যা হতে পারে, তবে এটি খুব সাধারণ লক্ষণ নয়।

কীভাবে ছড়ায়

অ্যাডিনোভাইরাস আক্রান্ত একজন থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়াতে পারে। এক্ষেত্রে সিডিসি যে মাধ্যমগুলোর কথা বলছে তা হল-

>> স্পর্শ ও করমর্দনের মত শারীরিক সংস্পর্শ ছড়াতে পারে।

>> হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বাতাসের সাহায্যে ছড়াতে পারে।

>> অ্যাডিনোভাইরাস রয়েছে এমন কিছুতে স্পর্শের পর হাত ভালোভাবে না ধুয়ে নাক-মুখ ও চোখে স্পর্শ করলে ছড়াতে পারে।

>> আক্রান্ত শিশুদের পয়োঃবর্জ্য থেকে ছড়াতে পারে। যেমন- ডায়াপার পরিবর্তনের সময় এই ঝুঁকি থাকে।

সিডিসি বলছে, অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত কেউ সুস্থ হয়ে উঠলেও ওই ব্যক্তির মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। বিশেষ করে যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের মাধ্যমে এটি হতে পারে। এছাড়া অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত, কিন্তু উপসর্গ বা লক্ষণ নেই, এমন ব্যক্তির মাধ্যমে অন্যদের শরীরে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়

অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে কিছু উপায় তুলে ধরেছে সিডিসি।

>> সাবান-পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ভালোভাবে হাত ধোয়া, শিশুদেরও এই অভ্যাস তৈরি করা।

>> অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ না করা।

>> অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।

>> নিজে আক্রান্ত হলে বাড়িতে অবস্থান করা।

>> হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় নাক-মুখ আটকানো।

>> অন্যের ব্যবহৃত জিনিস যেমন, কাপ ও খাবাবের থালা-বাটি ব্যবহার না করা।

>> আক্রান্ত হলে চুম্বন থেকে বিরত থাকা।

>> বাথরুম থেকে ফিরে সাবন-পানি দিয়ে খুব ভালোভাবে হাত ধোয়া, অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত পরিষ্কার করতে হবে।

চিকিৎসা

অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা বা ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ নেই। আক্রান্তদের হাসাপাতালে রেখে নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হতে পারে।বেশিরভাগ অ্যাডিনোভাইরাস সংক্রমণ মৃদু হয় এবং এ থেকে মুক্তি পেতে কেবল বিশ্রাম, পরিচর্যা প্রয়োজন হতে পারে। সেইসঙ্গে উপসর্গগুলো সারাতে জ্বরের ওষুধ কাজে লাগতে পারে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে সেবনের পরামর্শ দিয়েছে সিডিসি।

ভ্যাকসিন

অ্যাডিনোভাইরাসের টাইপ ৪ এবং টাইপ ৭ এর ভ্যাকসিন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে; তবে এ দুটি ধরনে আক্রান্ত বা উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশটির সামরিক কর্মকর্তাদেরই কেবল ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!