স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৮ জুলাই : চিনের মদতপুষ্ট সামরিক জুন্টার বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে উত্তর মায়ানমারের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নিল বিদ্রোহী জোটের অন্যতম সহযোগী ‘কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি’ (কেআইএ)-র বাহিনী। ইতিমধ্যেই চিন সীমান্তের বেশ কয়েকটি এলাকা তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী আউং সান সু চির সমর্থক স্বঘোষিত ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইরাওয়াদি’ জানিয়েছে।
কেআইএ-র বাহিনী ইতিমধ্যেই কাচিন এলাকার খনির শহর বামো ঘিরে ফেলেছে। আশপাশের সমস্ত এলাকাও তারা দখল করেছে। চিন সীমান্ত থেকে ওই শহরের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারেরও কম। এই পরিস্থিতিতে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সরকার সোমবার সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছে কেআইএ-কে। জানিয়ে দিয়েছে, বামো শহর দখল থেকে বিরত না হলে চিন কেআইএ পরিচালিত খনিগুলি থেকে ভারী খনিজ কিনবে না।
বিশ্বের প্রায় অর্ধেক ডাইস্প্রোশিয়াম এবং টারবিয়াম জাতীয় বিরল ভারী খনিজ কাচিন রাজ্যের খনিগুলো থেকে উত্তোলিত হয়। সেই খনিজ চিনে আমদানি করে ইলেকট্রিক গাড়ি ও উইন্ড টারবাইনের জন্য ব্যবহৃত চুম্বক নির্মাণ করে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গত বছরের শেষপর্বে কাচিন রাজ্যের অধিকাংশ খনিই দখল করে নিয়েছে কেআইএ এবং তার সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি। এর পর তারা খনির ওপর কর বৃদ্ধি করে ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ওই খনিজগুলির দাম বেড়েছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে মায়ানমার থেকে ১২,৯৪৪ মেট্রিক টন রেয়ার আর্থ আমদানি করেছে। যা গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় অর্ধেক। মায়ানমার অন্যতম শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী কেআইএ-তে প্রায় ১৫ হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা হয়েছে। তাদের অস্ত্রভান্ডারে রয়েছে, ভারী মেশিনগান, মর্টার, বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। কেআইএ-র অর্থের উৎস স্থানীয় কর ও প্রাকৃতিক সম্পদ। তারা মনে করে, চিন শেষ পর্যন্ত খনিজের চাহিদার কারণে খনিজ আমদানি বন্ধ করবে না।
প্রসঙ্গত, মায়ানমারে গৃহযুদ্ধ থামাতে গত এক বছর ধরেই চিন তৎপর। গত জানুয়ারিতে বেজিংয়ের মধ্যস্থতায় বিদ্রোহী জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’-এর দ্বিতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ) সে দেশের সামরিক জুন্টা নিয়ন্ত্রিত সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি করেছিল। কিন্তু ‘আরাকান আর্মি’ (এএ), ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ)-র পাশাপাশি কেআইএ-ও জুন্টার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। ১৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘চিন-মায়ানমার অর্থনৈতিক করিডরে’র একাংশ ইতিমধ্যেই বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে। ফলে মায়ানমারে বিনিয়োগ ঘিরে জিনপিং সরকারের উপর চাপ বাড়ছে।