স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৪ মার্চ : মাগুরায় ৮ বছরের বালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তেতে উঠেছে বাংলাদেশ। বামপন্থী ছাত্র সংগঠন থেকে শুরু করে বিএনপি – সকলেই কার্যত একসুরে বাজছে। তাদের স্পষ্ট বার্তা, বর্তমান কেয়ারটেকার সরকারের অপদার্থতার জন্যই সমাজে অপরাধীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে। লাগাতার বাড়ছে নারী নির্যাতন। নিজেকে বলি দিয়ে যার খেসারত দিতে হল ৮ বছরের ওই বালিকাকে। বামেরা তো মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতেও সরব হয়েছেন।
অন্যদিকে, বালিকার মৃত্যুর পর ঘটনায় অভিযুক্তদের বাড়িতে – অর্থাৎ – নিহত নিগৃহীতার দিদির শ্বশুরবাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে উন্মত্ত, ক্ষুব্ধ জনতা! সব মিলিয়ে এই ঘটনা ঘিরে ফের একবার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, গত কয়েক দিন ধরেই একের পর এক ঘটনার প্রেক্ষিতে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব বাংলাদেশের সুশীল সমাজ। ইউনুস প্রশাসনের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও। গত মঙ্গলবারই এ নিয়ে ইউনুসকে ন’দফা দাবিতে স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়ে পুলিশের ঠ্য়াঙানি খান প্রতিবাদীরা। যা নিয়ে আর এক প্রস্থ জলঘোলা হয়।
এই প্রেক্ষাপটে আজ (বৃহস্পতিবার – ১৩ মার্চ, ২০২৫) মাগুরার ঘটনায় নির্যাতিতা বালিকার মৃত্যু হতেই রাস্তায় নামে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলি। এদিন সন্ধ্য়ায় ঢাকার রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মশাল মিছিল করে তারা। সেই মিছিলের স্লোগানগুলি ছিল – খুন-ধর্ষণ-নিপীড়ন/রুখে দাঁড়াও জনগণ, শিশুটি মরল কেন/স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জবাব চাই, এসো ভাই, এসো বোন/গড়ে তুলি আন্দোলন প্রভৃতি।
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্য়মে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এদিনের এই কর্মসূচিতেই গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এই পুলিশ আমার দেশের মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে। এই মশালের আগুন আমাদের বুকের আগুন।’
অন্যদিকে, এই ঘটনায় শোক জ্ঞাপন করে দলের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সরাসরি বলেছেন, ‘দেশজুড়ে ভয়াবহভাবে বেড়েছে ধর্ষণ। দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিতভাবে এমন ঘটনা ঘটছে, যা অনেকেই ভয়ে কিংবা মানসম্মানের কারণে প্রকাশ করেন না। বিভিন্ন বয়সী নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন, বাদ পড়ছে না একরত্তি শিশুও। দেশে এখন যা চলছে তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’
এমনকী, এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পূর্বতন হাসিনা সরকার ও বর্তমান কেয়ারটেকার সরকারকে একই ভাষায় তুলোধোনা করেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অনৈতিক শাসনেরই ধারাবাহিকতা। তাই এখন এই প্রথা ভেঙে রাষ্ট্রকে একটি নৈতিক জায়গায় আনতে হবে। একটি বৈধ সংসদে ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য শাস্তির আইন পাস করতে হবে।’ অর্থাৎ – বর্তমান প্রশাসনের বৈধতা নিয়েই কার্যত প্রশ্ন তুলেছেন তিনি!
মাগুরার ঘটনায় নিহত বালিকা আদতে শ্রীপুর উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা ছিল। ইতিমধ্য়েই তার দেহ কবর দেওয়া হয়েছে। সূত্রের দাবি, তার উপর যারা নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ, তারা আদতে বালিকার দিদির শ্বশুরবাড়ির সদস্য।
এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই বালিকার দিদির স্বামী, ভাসুর, শ্বশুর ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বালিকার মৃত্যুর খবর চাউর হতেই ক্ষিপ্ত জনতা অভিযুক্তদের বাড়ি ভাঙচুর করে সেখানে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।