স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ০৮ ডিসেম্বরঃ সোমবার ভারত-বাংলাদেশ বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক রয়েছে। ঢাকায় যাচ্ছেন বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। তার আগে রবিবার ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে মিছিল করল বিএনপি। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে প্রধান শক্তিধর রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে উঠে এসেছে খালেদা জিয়ার বিএনপি। রবিবারের এই কর্মসূচিতে বিএনপির তিনটি শাখা যোগ দেয় — ছাত্র দল, যুব দল এবং স্বেচ্ছাসেবক দল। ঢাকার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয় মিছিল। তবে ভারতীয় দূতাবাসের কাছে পৌঁছোনোর আগেই মিছিল আটকে দেয় বাংলাদেশের পুলিশ। রামপুরার কাছে ব্যারিকেড করে বিএনপির মিছিল থামানো হয়। সেখান থেকে একটি প্রতিনিধিদল ভারতীয় দূতাবাসে যায় এবং স্মারকলিপি জমা দেয়।
সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ এবং সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির পর থেকে ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের তদারকি সরকারকে বার বার ভারত অনুরোধ করেছে, সে দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। চিন্ময়কৃষ্ণের আইনি অধিকার নিশ্চিত করার জন্যও বলা হয়েছে। তবে এ সব নিয়ে মন্তব্য বিশেষ পছন্দ করছে না বাংলাদেশ। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ পছন্দ নয় ইউনূসের প্রশাসনের। তাদের দাবি, সে দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদেই রয়েছেন। সম্প্রতি, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভের সময়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী এড়িয়ে প্রবেশ করে যান এক দল মানুষ। ওই ঘটনার নিন্দা করেছে বিদেশ মন্ত্রক। একাধিক গ্রেফতারিও হয়েছে।
রবিবার ভারতীয় দূতাবাসে জমা দেওয়া বিএনপির স্মারকলিপিতেও আগরতলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি দু’দেশের টানাপড়েনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে ‘অবন্ধুসুলভ’ বলেও মনে করছে তারা। বাংলাদেশ ত্যাগের পর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে। তা নিয়েও অসন্তোষ বিএনপির। তাদের দাবি, ভারতের ‘নিরাপদে আশ্রয়ে’ থেকে হাসিনা বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। এটি বাংলাদেশের জনগণ ইতিবাচক ভাবে নিচ্ছে না বলে দাবি খালেদার দলের। ভারতীয় দূতাবাসে জমা দেওয়া স্মারকলিপিতে বিএনপি জানিয়েছে, সমতা, পরস্পরের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস এবং সম্মানের ভিত্তিতে দু’দেশের সম্পর্ক মজবুত হবে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দু’দেশের স্থিতিশীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করছে তারা।
ঘটনাচক্রে, সোমবার বাংলাদেশের বিদেশ সচিবের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রীর। ঢাকায় দু’দেশের বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে রবিবার বিএনপির এই মিছিল এবং স্মারকলিপি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। অনেকের মতে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপিই সে দেশে প্রধান রাজনৈতিক দল হিসাবে উঠে এসেছে। সম্প্রতি মুহাম্মদ ইউনূস সে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে বৈঠক ডাকেন। সেখানেও আওয়ামী লীগ কিংবা জাতীয় পার্টি (এরশাদ)-এর কোনও প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ছিল এক মাত্র বিএনপি।
রবিবার বিএনপির মিছিলের জন্য ঢাকার রাজপথ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে হড়ে। নয়া পল্টন থেকে রামপুরা সেতু পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে মিছিল। রামপুরায় পুলিশ ব্যারিকেড করে মিছিল আটকে দেয়। ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, রামপুরা সেতুর কাছে এক ঘণ্টারও বেশি সময় রাস্তা অবরুদ্ধ ছিল মিছিলের জন্য।