স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৮ নভেম্বর: যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা চালাতে ইউক্রেইনকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।মার্কিন নীতির বড় পরিবর্তনের এ তথ্য সংবাদমাধ্যম সিবিএসকে জানিয়েছেন দেশটির এক কর্মকর্তা।বিবিসি লিখেছে, কয়েক মাস ধরেই ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এটিএসিএমএস নিজের দেশের বাইরে ব্যবহারের অনুমতি চাইছিলেন।নতুন সিদ্ধান্তের খবরে রোববার তিনি বলেছেন, “এই ধরনের বিষয় ঘোষণা করা হয় না, ক্ষেপণাস্ত্রই নিজেদের কথা বলে।”
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর আগে পশ্চিমা দেশগুলোকে এ ধরনের পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে কিইভ হামলা চালালে তা যুদ্ধে নেটো সামরিক জোটের ‘সরাসরি অংশগ্রহণের’ শামিল হবে।তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবশেষ সিদ্ধান্তের বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। তবে ক্রেমলিনের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকরা ওই সিদ্ধান্তকে গুরুতর উত্তেজনা বৃদ্ধির উপাদান হিসেবে বর্ণনা করেছেন।এটিএসিএমএস নিয়ে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্ত ছিল, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে ইউক্রেইনীয় বাহিনী, যেখানে কিইভ গত অগাস্টে আকস্মিক আক্রমণ শুরু করে।
বিবিসি লিখেছে, বাইডেন প্রশাসন কার্যত ইউক্রেইনকে বলছে যে ভবিষ্যতে যে কোনো সম্ভাব্য আলোচনার জন্য একটি শক্তিশালী দর কষাকষির হাতিয়ার হিসাবে বর্তমানে দখল করা রাশিয়ার ভূখণ্ডের ক্ষুদ্র অংশটিই কাজে দেবে।কিইভভিত্তিক ইউক্রেইনিয়ান সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন সেন্টারের চেয়ারম্যান সেরহি কুজান বিবিসিকে বলেন, জো বাইডেনের সিদ্ধান্ত দেশের জন্য ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’।”এটি এমন কিছু নয়- যা যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করবে; তবে আমি মনে করি, এটি আমাদের বাহিনীকে আরও সমকক্ষ করবে।”
এটিএসিএমএস ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের নিশানায় আঘাত হানতে পারে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তারা নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের ইউক্রেইনে যুদ্ধ করার যে অনুমতি রাশিয়া দিয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন এটিএসিএমএস ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছেন।কুজান বলেন, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেইনীয় বাহিনীকে সরাতে রুশ ও কোরীয় সেনারা কয়েকদিনের মধ্যে আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। ওই হামলার আগেই রোববার ইউক্রেইনকে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন বাইডেন।
এর আগে ইউক্রেইন দাবি করেছিল, কুরস্কে উত্তর কোরিয়ার ১১ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে।বিবিসি লিখেছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নতুন সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের যৌথভাবে বানানো দূরপাল্লার ‘স্টর্ম শ্যাডো’ ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার ভেতরে ব্যবহারের অনুমতি পাবে ইউক্রেইন।অবশ্য বাইডেনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে যুক্তরাজ্য বা ফ্রান্স কেউ এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
গত মাসে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে প্রথমবারের মত দূরপাল্লার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলে ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়া রুশ সেনাদের হটাতে কয়েক মাস ধরেই ইউক্রেইন লড়াই করছে। রুশ বাহিনী ওই অঞ্চলের মূল শহর পোকরোভস্কের দিকে আগাতে চাইছে, যে শহর ইউক্রেইনীয় বাহিনীর একটি প্রধান সরবরাহ কেন্দ্র।ইউক্রেনে ড্রোন হামলাও ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে মস্কো। ইউক্রেইনের জেনারেল স্টাফের হিসাবে, অক্টোবরে দুই হাজারের বেশি এ ধরনের হামলা হয়েছে, যা এ যুদ্ধে সর্বোচ্চ।
রাশিয়া কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমন্বিত হামলা চালায় শনিবার রাতে, যাতে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে। জেলেনস্কি বলেছেন, প্রায় ১২০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ৯০টি ড্রোন ব্যবজার হয়েছে ওই হামলায়।রোববার সন্ধ্যাতেও হামলা চলছিল, রুশ সীমান্তের কাছে একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর দুই শিশুসহ আটজন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছেন সুমি অঞ্চলের কর্মকর্তারা।ব্রায়ানস্কের সীমান্ত অঞ্চলে রুশ কর্মকর্তারা রোববার রাতে ইউক্রেইনের একটি ড্রোন হামলার কথা জানালেও তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী ২৬টি ড্রোন ভূপাতিত করার কথা জানিয়েছে।
ইউক্রেইন কয়েক মাস ধরে দাবি করে আসছিল, তাদের কার্যকরভাবে আত্মরক্ষার অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নে মিত্ররা পর্যাপ্ত সহায়তা করেনি।জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজ ছাড়তে যাওয়া জো বাইডেন ইউক্রেইনকে আরও সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।বিবিসি লিখেছে, বাইডেনের উত্তরসূরি ডনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেইনকে সমর্থন কমিয়ে বা থামিয়ে দেবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউক্রেইনে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্প সামরিক সমর্থনকে মার্কিন সম্পদের অপচয় হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং যুদ্ধ শেষ করার ঈংগিত দিয়েছেন। তবে তা কীভাবে ঘটবে তার ব্যাখ্যা তিনি দেননি।জার্মান গবেষণা সংস্থা কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির হিসাবে, যুদ্ধের শুরু থেকে গত জুনের শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ৫৫.৫ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে বা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।