স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৫ আগস্ট: রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কুর্স্ক অঞ্চলে আচমকা ইউক্রেইনের সেনা ঢুকে পড়ার পর থেকে রুশ বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই এক সপ্তাহ পেরিয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে।রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই সেনাদেরকে রাশিয়ার ভূখণ্ড থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে শাসালেও এখন পর্যন্ত তা করতে পারেনি।আর রাশিয়া যে কেবল ইউক্রেইনের সেনাদের তাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে তাই নয়, বরং তারা রুশ ভূখন্ডের আরও ভেতরে শত্রুসেনাদের অগ্রযাত্রা এমনকি ঠেকাতেও পারছে না বলেই মনে হচ্ছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর এই প্রথম কিইভের সেনারা শত্রুভূমির অনেকখানি ভেতরে ঢুকতে সক্ষম হয়েছে। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কুর্স্ক অঞ্চলে ইউক্রেইনের সেনারা গত ৬ অগাস্টে হঠাৎ করেই ঢুকে পড়ে।এরপর সাত দিনেই রাশিয়ার ভূখন্ডের ১ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা দখলে নেওয়ার দাবি করেছে ইউক্রেইন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার সেনারা এখনও রাশিয়ার ভূখণ্ডের আরও ভেতরে অগ্রসর হয়ে চলেছে।
তিনি বলেন, কুর্স্ক অঞ্চলে কয়েকটি দিকে ইউক্রেইনীয় সেনারা অগ্রসর হয়েছে এবং লড়াইয়ের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তাদের কব্জায় এসেছে ১০০ জনেরও বেশি রুশ সেনা।বিবিসি জানায়, লড়াইয়ের মুখে কুর্স্কের পাশেই আরেকটি রুশ অঞ্চল বেলগোরোদে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে। সেখানে ড্রোন ও গোলা হামলায় বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অঞ্চলটির গভর্নর।
ইউক্রেইনীয় সেনাদের ঠেকাতে কুর্স্কে শক্তি বাড়াচ্ছে রাশিয়া। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভিতে কুর্স্কে পাঠানোর জন্য ট্যাংক লোড করতে দেখা গেছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, শত্রুসেনাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্যে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর পর্যাপ্ত রিজার্ভ নেই।রাশিয়ার নিয়োগ করা সেনাদের মায়েরা সাংবাদিকদের বলেছেন, তাদের তরুণ ছেলেদেরকে শিগগিরই ওই অঞ্চলে পাঠানো হবে। ইউক্রেইনের সেনাদের হটাতে অভিজাত বাহিনীর তেমন প্রয়োজন পড়ে না বললেই চলে।গত কয়েকমাসে রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেইনে হামলা চালিয়েছে। কয়েক কিলোমিটার ভূখণ্ড দখলের জন্য তারা ইউক্রেইনের প্রতিরোধ লাইনে বহু সেনার বন্যা বইয়ে দিয়েছে।
আর এতে লড়াইয়ে মাত্র দুই মাসেই রাশিয়া খুইয়েছে ৭০ হাজার সেনা। অর্থাৎ, দিনে গড়ে প্রায় এক হাজার সেনা মারা পড়েছে। এতেই রাশিয়ার রিজার্ভ সেনায় টান পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেইনের ভাল গোয়েন্দা ব্যবস্থা আছে, তাতে সামিল রয়েছে তাদের পশ্চিমা মিত্রদেশগুলোও। তাদের কমান্ড কাঠামো রাশিয়ার থেকে ভাল।রাশিয়ার লাইনে কিইভ সবচেয়ে দুর্বল জায়গায় হামলা করেছে এবং খুবই সতর্কভাবে পা ফেলা ইউক্রেইনীয় সেনারা রাশিয়ার ভূখন্ডের গভীরে ঢুকে পড়তে পেরেছে।
অন্যদিকে, গতবছর শক্তিশালী রুশ ভাড়াটে সেনাদল ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের ওয়াগনার বাহিনী বিদ্রোহ করায় রাশিয়ার অবস্থান অনেকটাই দুর্বল হয়েছে। ওয়াগনারের সেই বিদ্রোহের পর থেকে এখন পর্যন্ত রুশ সামরিক বাহিনীকে শত্রুসেনাদের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে অপারগ বলেই মনে হচ্ছে।রাশিয়া অবশ্য বুধবার দাবি করেছে, তাদের সামরিক বাহিনী রাজধানী মস্কোর প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের সীমান্ত এলাকায় ইউক্রেইনীয় সেনাদের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিয়েছে।কিন্তু সামরিক ব্লগার এবং উন্মুক্ত সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে এ আভাসই পাওয়া যাচ্ছে যে, ইউক্রেইনের সেনারা কুর্স্কে কয়েকটি এলাকায় লড়াইয়ে সাফল্য অর্জন করেছে।