Friday, January 24, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদহ্যারিসের রানিং মেট টিম ওয়ালজের চীন যোগ, অনলাইনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

হ্যারিসের রানিং মেট টিম ওয়ালজের চীন যোগ, অনলাইনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৮ আগস্ট: যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস তার রানিং মেট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে যাকে বেছে নিয়েছেন, সেই টিম ওয়ালজ বিশ্বে সুদূর চীন পর্যন্ত নজর কেড়েছেন।ওয়ালজের সঙ্গে চীনের বেশ ভাল যোগও রয়েছে। ওয়ালজের হৃদয়ে আছে চীনের জন্য এক বিশেষ স্থান। কারণ, দেশটিতে তিনি অন্তত ৩০ বার ভ্রমণ করেছেন, সেখানে করেছেন হানিমুন।চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশে শিক্ষকতাও করেছিলেন তিনি। আর চীনে তার এই শিক্ষকতার সিদ্ধান্তের বিষয়ে একবার ওয়ালজ বলেছিলেন, “সেটি ছিল তার এযাবৎকালের সবচেয়ে ভাল কাজগুলোর অন্যতম।”

৬০ বছর বয়সী মিনেসোটার এই গভর্নর রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে ছিলেন ইতিহাসের একজন শিক্ষক এবং ফুটবল কোচ। চীনে গুয়াংডংয়ের একটি স্কুলে তিনি ইংরেজি এবং আমেরিকার ইতিহাস পড়িয়েছিলেন।তবে ওয়ালজ যে সময়টিতে চীনের স্কুলে শিক্ষকতা করেছিলেন, সে সময়টি ছিল চীনের সামরিক বাহিনীর গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভ দমনের বছর, ১৯৮৯ সাল।ওই বছরের ৪ জুন গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভ গুঁড়িয়ে দিতে রাজধানী বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে হাজারো বিক্ষোভকারীর ওপর চড়াও হয়েছিল চীনা ট্যাংক। রক্তক্ষয়ের মধ্য দিয়ে দিনটির অবসান হয়েছিল। সেদিন ঠিক কতজন মরেছিল, তার সঠিক হিসাব আজও পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, মৃতের সংখ্যা ছিল অন্তত ১০ হাজার বা তারও বেশি।

১৯৮৯ সালেই ওয়ালজ প্রথম চীন সফর করেছিলেন। আবার বিয়েও করেছিলেন এই স্পর্শকাতর দিবসের পঞ্চম বর্ষপূর্তির দিনে। তাই পুরো বিষয়টি ঘিরে চীনে মানুষের মধ্যে নানা সন্দেহ-প্রশ্ন দানা বেঁধেছে। স্যোশাল মিডিয়াতেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে। উইবোতে বিষয়টি ট্রেন্ড হয়েছে। ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ তা দেখেছে।যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস মঙ্গলবার তার রানিং মেট হিসাবে টিম ওয়ালজের নাম ঘোষণার পরদিনই চীনের স্যোশাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে দেখা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

চীনে তিয়েনআনমেন বিক্ষোভ দমন নিয়ে কথা বলার ওপর কড়াকড়ি থাকায় স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদেরকে প্রচ্ছন্নভাবেই ওয়ালজের চীন সফরের সময় নিয়ে মন্তব্য করতে দেখা গেছে।টিম ওয়ালজ কলেজ গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর প্রথমেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় ১৯৮৯ সালে চীনের গুয়াংডং প্রদেশের ফোশান নগরীতে যান। সেখানে একটি স্থানীয় হাই স্কুলে একবছর পড়িয়েছিলেন তিনি।বুধবার চীনের স্যোশাল মিডিয়ায় ওই সময়ে চীনে ওয়ালজের আগমনের আসল উদ্দেশ্য কি ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। উইবোতে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “তিনি চীনে এসেছিলেন বিশৃঙ্খলার এক সময়ে। এতেই স্পষ্ট যে, তার কোনও মিশন ছিল।”

“তিনি কি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ থেকে এসেছিলেন?” লিখেছেন আরেকজন। “সালটা দেখুন, সন্দেহ না করে পারবেন না”, লেখেন একজন। অন্য একজন লেখেন, “ওই সময়ে চীনে যে বিদেশিরা ছিলেন, তারা ছিলেন সবচেয়ে বেশি চীন-বিরোধী।” “এই প্রার্থী (ওয়ালজ) খুবই ভিন্ন একটি সময়ে চীনে ছিলেন, তখন পরিবেশ ছিল খুবই ভিন্ন,” লেখেন আরেকজন।আবার ওয়ালজকে নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্যও করেছেন অনেকেনই। উইবোর এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ওয়ালজের চমৎকার যে পটভূমি আছে তাতে চীন সম্পর্কে তার সত্যিকারের দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের সম্পর্কের সবচেয়ে কঠিন এই সময়ে দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ঘটাতে পারবেন।”

উইবোতে এক রাজনৈতিক ভাষ্যকার এবং হংকং ভিত্তিক একটি থিংক ট্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা কুই ঝেনহাই বলেন, “ওয়ালজের যদি চীনের সঙ্গে এই যোগ না থাকত, তাহলে হ্যারিস হয়ত চীনের প্রতি আরও কঠোর হতে পারতেন।” আবার আরেকজন লেখেন, “ওয়ালজ চীনে শিক্ষকতা করেছেন, আর হানিমুন করেছেন- কেবলমাত্র সেই পটভূমিতে চীনের জন্য তার দরদ থাকবে এমন ভাবাটা বোকামি।”চীনের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের কারণে ওয়ালজ তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে প্রায়ই দেশটিকে নিয়ে কথা বলে এসেছেন। অনেক সময়ই তিনি যেমন একজন চীনপ্রেমীর মতো কথা বলেছেন, তেমনি কখনও কখনও প্রকাশ্যে চীনের মানবাধিকার রেকর্ডের নিন্দাও করেছেন। চীন সংক্রান্ত কোনও আইন প্রণয়ন কিংবা প্রস্তাবনা পাস নিয়ে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে কাজও করেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন। সেকারণে, হ্যারিস রানিং মেট হিসাবে টিম ওয়ালজের নাম ঘোষণার পর মার্কিন সমালোচকদেরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মুখে পড়েছে তার এই চীন যোগ।ওয়ালজকে চীনের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসাবেই চিত্রিত করছেন তারা। স্যোশাল মিডিয়াতেও ওয়ালজের চীন সম্পৃক্ততা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমলের অনেক কর্মকর্তাই ওয়ালজের চীন সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কটাক্ষ করে স্যোশাল মিডিয়ায় নানা পোস্ট দিচ্ছেন। একজন লিখেছেন, “ওয়ালজ চীনকে সমস্যা বলে মনে করেন না।”

আরেকজন লিখেছেন, “হ্যারিসের রানিংমেট হিসাবে ওয়ালজকে পেয়ে কমিউনিস্ট চীন খুব খুশি।” ট্রাম্প আমলের আরও এক সাবেক কর্মকর্তা লেখেন, “মার্ক্সবাদী ওয়ালজের চেয়ে বেশি চীনপন্থি আর কেউ নেই।”তবে অন্য আরও অনেকেই চীনের বিষয়ে ওয়ালজের অভিজ্ঞতাকে সম্পদ হিসাবেই দেখছেন। সাবেক সিআইএ এবং এনএসএ পরিচালক মাইকেল হেডেন, যিনি ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান দুই প্রশাসনেই কাজ করেছেন, তিনি বলেন, “ওয়ালজ চীন সম্পর্ অনেক কিছু জানেন। এটি চমৎকার ব্যাপার।”তাইওয়ান ভিত্তিক রাজনীতিবিজ্ঞানের এক অধ্যাপকও ওয়ালজের চীন বিষয়ক অভিজ্ঞতাকে ইতিবাচক বলেই বর্নণা করেছেন।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য