স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৪ মার্চ। ইউক্রেইন যু্দ্ধের জেরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে বাকি বিশ্ব থেকে রাশিয়া প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে নাগরিক জীবনে ভোগান্তি শুরু হয়েছে। দোকানগুলোতে কয়েক ঘণ্টা ধরে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে নিতপণ্য কিনতে হচ্ছে সাধারণ রুশ নাগরিকদের। যেরকম লম্বা লাইন চোখে পড়ত সোভিয়েত যুগে।
ওই সময় কিছু কিছু খাবারের জন্য মানুষকে লাইনে দাঁড়াতে হত। আজ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার এত বছর পর রাশিয়ায় আবার দেখা যাচ্ছে সেই পুরোনো দৃশ্যপট।রাশিয়ায় প্রধান খাদ্যদ্রব্যের জন্য মানুষের হুমড়ি খেয়ে পড়া এমন আশঙ্কাই জাগিয়ে তুলছে যে, ইউক্রেইনে ক্রেমলিনের আগ্রাসনের জেরে পণ্যস্বল্পতা কিংবা সোভিয়েত ইউনিয়ন যুগের দীর্ঘ লাইনের সারির দিন ফিরে আসতে চলেছে।সোভিয়েত ইউনিয়ন যুগের অর্থনীতির পুরোভাগেই ছিল খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যের স্বল্পতা। দোকানে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে জিনিস কেনা তখন মানুষের জীবনের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ দিনগুলোতেও রুটির জন্য দোকানে দেখা গেছে মানুষের দীর্ঘ সারি।
সেই একই পণ্যস্বল্পতা আবার ফিরে আসছে। দেড়/দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও রুশ নাগরিকদের অনেকেই প্রয়োজনীয় পণ্য পাচ্ছেন না। এ মাসের শুরু থেকেই স্থানীয় বাজারগুলোতে চিনি ও বাজরার বস্তাগুলো দ্রুত খালি হতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে ‘দ্য গার্ডিয়ান’। এর মাত্র এক সপ্তাহ আগে ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া।পরিস্থিতি সামাল দিতে গত সপ্তাহে রাশিয়ার দক্ষিণপশ্চিমের নগরী সারাতভের মেয়রের কার্যালয় থেকে যখন ঘোষণা করা হয়, নিত্যপণ্য বিক্রির জন্য তারা বিশেষ বাজারের ব্যবস্থা করবে, তখন থেকে সেখানে লম্বা লাইন।
স্থানীয় বাসিন্দা ভিক্টোর নাজারভ বলেন, ‘‘লোকজন পরষ্পরের সঙ্গে কোথায় চিনি পাওয়া যাবে সেই তথ্য শেয়ার করছে। এটা পাগলামি।” গত সপ্তাহে নাজারভের দাদি নিজে গিয়ে তাকে শিখিয়েছে কীভাবে বিশেষ বাজারে গিয়ে পণ্য কিনতে হয়।তিনি বলেন, ‘‘এটা দুঃখজনক এবং একইসঙ্গে হাস্যকরও। আমার মনে হচ্ছে, একমাস আগেও সব ঠিকঠাক ছিল এবং এখন আমরা আবার ১৯৯০ এর দশক নিয়ে কথা বলছি, বেশি করে পণ্য কিনছি…..কারণ, আমার ভয় পাচ্ছি ওটার যোগান হয়তো শেষ হয়ে যাবে।”নাজারভ জানান, নগরীর প্রধান স্কয়ারে দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে তিনি পাঁচ কেজি ওজনের মাত্র একটি বাজারের ব্যাগ পেয়েছেন।অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া নানা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার অন্যান্য নগরীতে বাজারে চিনির জন্য ক্রেতাদের মধ্যে রীতিমত লড়াই হচ্ছে। যদিও কর্মকর্তারা এখনও বলে যাচ্ছেন, এটা কৃত্রিম সংকট। রাশিয়ার ওমস্ক অঞ্চলের গভর্নর বলেন, ‘‘এখন চিনি নিয়ে যা হচ্ছে সেটির লক্ষ্য সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করা।”
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হঠাৎ করেই রাশিয়ায় নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দেওয়া কেবল ধাক্কার শুরু। সামনে অর্থনীতি আরও ব্যাপক পরিসরে ছোট হয়ে যাওয়া, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, এবং বাকি বিশ্ব থেকে নজিরবিহীনভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া- সবমিলিয়ে এবছর পুরোটাই কঠিন যাবে রাশিয়ার।
‘ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স’ এর উপ প্রধান অর্থনীতিবিদ এলিনা রিবাকোভা বলেন, “আমার মনে হয় আমরা ক্রমাগত সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে ফেরত যাচ্ছি।”রাশিয়ার সেনারা যখন ইউক্রেইনে প্রবেশ করে তখন থেকেই বড় বড় রুশ নগরীতে ট্যাম্পনের মত জরুরি পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। গুঁড়া সাবান, পোশাক, টুথপেস্টের মত পণ্য যেগুলো বিদেশ থেকে আমাদানি করতে হয় সেগুলোর দাম আকাশ ছুঁয়েছে।তবে সরকারের দাবি, নিত্যপণ্যের দাম এতটা বেড়া যাওয়ার কারণ মানুষের আতঙ্ক। পরে পাওয়া যাবে না ভেবে লোকজন অতিরিক্ত কিনে বাড়িতে মজুদ করছে।
রাশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী ভিক্টোরিয়া আব্রামচেনকো বলছেন, পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
‘‘২০২০ সালের মত আমি এখনও নাগরিকদের নিশ্চিত করে বলতে চাই: আমরা নিজেরাই নিজেদের চিনি ও বাজরার চাহিদা পরিপূর্ণভাবে পূরণ করব। আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত পণ্য কেনার কোনও প্রয়োজন নেই। সবার জন্য যথেষ্ট পণ্য রয়েছে।”তবে সরকার যাই বলুক, বাস্তব পরিস্থিতি এরইমধ্যে ভিন্ন কথা বলতে শুরু করেছে। ইনস্যুলিনের মত জরুরি ওষুধ রাশিয়ার ফার্মাসির তাক থেকে উধাও হতে শুরু করেছে।কয়েকটি জনমত জরিপ বলছে, রাশিয়ার চিকিৎসকরা ফার্মাসিতে ৮০টির বেশি ওষুধ পাচ্ছেন না। যেগুলোর মধ্যে শিশুদের প্রাদাহ রোধ করে এমন ওষুধও রয়েছে।
রাশিয়ায় এবছর মূল্যস্ফ্রীতি ২০ শতাংশের উপরে উঠবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবীদ এলিনা রিবাকোভা। তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়ার সাধারণ মানুষের জন্য এর মানে দাঁড়াবে- দারিদ্র্য, দুর্দশা এবং বেপরোয়া হয়ে ওঠা।”‘‘শুধু বেঁচে থাকার জন্যই এখন লোকজনকে অনেক ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ, খাদ্য এবং সর্বনিন্ম অবসরভাতার উপর নির্ভর করে তারা বাঁচার লড়াই করছে….এই সংকটে লোকজন শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।”
“তাদের কোনো সঞ্চয় নেই, আগেও তারা বিশেষ কিছু জমাতে পারেনি। আর এখন তাদেরকে দিনের পর দিন লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, এমনকী মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধও তারা পাবে না।”