Thursday, January 16, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদপুরো বাংলাদেশে জারি কারফিউ, মৃত্যু বেড়ে ১০৫! নামল সেনা

পুরো বাংলাদেশে জারি কারফিউ, মৃত্যু বেড়ে ১০৫! নামল সেনা

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,  ২০ জুলাই ২০২৪  :- অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি ক্রমেই জটিলতর হচ্ছে বাংলাদেশে। বাড়ছে মৃতের সংখ‌্যাও। অবস্থা শান্ত হওয়ার লক্ষণ নেই। আজ, শনিবার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে কোটা মামলার শুনানি হওয়ার কথা। কিন্তু শুক্রবার ছুটির দিন সত্ত্বেও চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ। ঝরেছে রক্ত। শনিবার ঢাকা মেট্রো স্টেশনেও আন্দোলনকারীদের আগুন লাগিয়ে দেওয়ার খবর সামনে এসেছে

আর এর মধ্যেই শুক্রবার রাতে পুরো বাংলাদেশে কারফিউ জারি করে সেনা নামিয়েছে হাসিনা সরকার। শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (সংবাদমাধ‌্যম) ফারুক হোসেন ঘোষণা করেন যে, শুক্রবার দুপুর থেকেই পরবর্তী নির্দেশ ঘোষণা না-হওয়া পর্যন্ত রাজধানীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। এই উত্তেজনাকর অবস্থার মধে‌্যই শুক্রবারও আরও অন্তত ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বেসরকারি সূত্রে খবর। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ‌্যা বেড়ে দঁাড়াল ১০৫-এ।

যদিও সরকারি তরফে নির্দিষ্ট করে মৃতের সংখ‌্যা বলা হয়নি। শুক্রবারও বাংলাদেশ জুড়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠন। এই আবহে আন্দোলনকারীরা শুক্রবার বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ঢাকার উত্তরা, মহম্মদপুর, বাড্ডা-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধেছে আন্দোলনকারী ছাত্রদের। শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যদের দেখা যায়। কিন্তু আওয়ামি লিগের বহু নেতা-কর্মীও লাঠি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে আন্দোলন দমন করতে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে এদিন সকাল থেকে হেলিকপ্টারে টহল দেওয়া হয়। অন‌্যদিকে, উত্তপ্ত অবস্থার জেরে বাতিল হয়েছে মৈত্রী এক্সপ্রেস। জানানো হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ঢাকায় কোনও ট্রেন প্রবেশ করবে না। ঢাকা থেকে কোনও ট্রেন কোথাও যাবেও না।

তবে বাংলাদেশে থাকা প্রত্যেক ভারতীয়ই নিরাপদ রয়েছেন বলেই জানিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। পরিজনদের আশ্বস্ত করে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রত্যেকেই সুস্থ রয়েছেন। ভারতীয় ও ভারতীয় পড়ুয়াদের জন্য পরামর্শ বার্তা জারি করা হয়েছে ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে। গণপরিবহণ এড়াতে ও বাইরে যতটা সম্ভব কম বেরোতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, জরুরি নম্বর চালু করা হয়েছে ভারতীয়দের জন্য। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহি, খুলনার মতো জেলার জন্য আলাদা আলাদা ফোন নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেওয়া হয়েছে ভারতীয় দূতাবাসের তরফে। তবে বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি বিদেশ মন্ত্রক। বিষয়টিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ভারতের প্রায় সাড়ে আট হাজার ছাত্রছাত্রী রয়েছে। বিপুল সংখ্যক সেখানে মেডিক্যাল পড়ে। প্রত্যেকেই নিরাপদ এবং সুস্থ রয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে। আমরাও তাদের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ রাখছি। কোনওরকম সাহায্যের প্রয়োজন হলে প্রস্তুত।’’ সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন যে, ‘‘এস জয়শঙ্কর নিজে গোটা বিষয়টির উপর নজর রাখছেন।’’ প্রসঙ্গত, সংরক্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে দিনকয়েক ধরেই তপ্ত বাংলাদেশ। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে উত্তাল ভারতের পড়শি দেশের পথে নেমেছেন হাজার হাজার পড়ুয়া। তাঁদের রুখতে নামে পুলিশ-প্রশাসন। আন্দোলনকারীরাও আন্দোলন থামাতে নারাজ। এদিন, নরসিংদীর কারাগারে হামলা চালিয়েছে আন্দোলনকারীরা। কারাগারের কয়েকশো বন্দি পালিয়ে গিয়েছে। আন্দালনকারীরা ওই কারাগারে আগুন ধরিয়ে দেয়।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার বিকেল তিনটেয় ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ডেকেছিল বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। শাসকদল আওয়ামি লিগ সমাবেশ ডেকেছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে। ঢাকা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বড় ধরনের হিংসা ও প্রাণহানির আশঙ্কাতেই জমায়েতে রাশ টানার চেষ্টা শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারও হিংসা ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছে। ইতিমধে‌্যই হিংসায় উসকানি ঠেকাতে সাময়িকভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসিনা সরকার। সংবাদমাধ্যমের পরিষেবা কিছুটা ফেরানো হয়েছে। তবে সরকারি টেলিভিশনের সম্প্রচার শুক্রবারও শুরু হয়নি। শুক্রবারও রাজধানী ঢাকা-সহ ওই দেশের বিভিন্ন শহর বন্‌ধের চেহারাই নিয়েছিল। হাসপাতাল এবং জরুরি পরিষেবা ছাড়া প্রায় সমস্ত বেসরকারি দপ্তর, দোকান-বাজার বন্ধ।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য