স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৮ জুন: একের পর এক কথার বাণ ছুড়লেন ডনাল্ড ট্রাম্প, যদিও যার অধিকাংশই ছিল মিথ্যা তথ্যে ভরা। তবে সেগুলোর জবাব দিতে গিয়েই মাঝেমধ্যে হোঁচট খাচ্ছিলেন প্রতিপক্ষ জো বাইডেন।নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাঠে নামার আগে বৃহস্পতিবার প্রথম টেলিভিশন বিতর্কে মুখোমুখি হয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট বাইডেন আর রিপাবলিকান ট্রাম্প, যেখানে বয়সী দুই প্রার্থী একে অপরের প্রতি শানিয়েছেন ব্যক্তিগত আক্রমণ।দুইজনই গর্ভপাত, অভিবাসন, ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধ, অর্থনীতি এমনকি নিজেদের গলফ খেলা নিয়েও একে অপরকে খোঁচা দিয়েছেন। গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন জনমত জরিপে যেসব বিষয় উঠে এসেছে, সেগুলো নিয়েই মূলত তারা বিতর্কে লিপ্ত হন।
হোয়াইট হাউজের দুই জন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিতর্কে নামার আগে থেকে সর্দিতে ভুগছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্টের নড়বড়ে পারফরম্যান্সে কিছুটা হলেও বিচলিত হতে পারেন ডেমোক্র্যাটরা, এমনকি ৮১ বছর বয়সী বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে পরবর্তী চার বছর সামাল দিতে পারবেন কি না, তা নিয়েও ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হতে পারে।যদিও বিতর্কের পর বাইডেনের প্রচার দল এবং সহযোগীরা অনেকটা সাহসী মুখ করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু প্রেসিডেন্টের এমন নড়বড়ে অংশগ্রহণ সাময়িক সময়ের জন্য হলেও তাদেরকে একটা বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাইডেনের এক শীর্ষ তহবিল যোগানদাতা তো তার পারফরম্যান্সে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেই ফেলেছেন, প্রেসিডেন্ট ‘অযোগ্য’ প্রমাণিত হয়েছেন। অগাস্টে দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে বাইডনের ভোটের লড়াই থেকে সরে যেতে নতুন করে আহ্বান জানানো হবে বলে তিনি আশা করছেন।বিতর্ক শেষে অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তিনি বাইডেনের পারফরম্যান্সকে ‘ধীরে শুরু’ বলে উল্লেখ করার পাশাপাশি ভোটারদের দুই প্রার্থীকে তাদের কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে বিবেচনা করা উচিত বলে মত দিয়েছেন।সিএনএনকে হ্যারিস বলেন, “যেখানে আমি (বাইডেনের) সাড়ে তিন বছরের কর্মকাণ্ড দেখেছি, সেখানে সবশেষ ৯০ মিনিট নিয়ে আমি পুরো রাত কাটিয়ে দিতে চাই না।”
বিতর্ক শুরুর প্রথম আধাঘণ্টার মধ্যে বাইডেনকে বেশ কয়েকবারই কর্কশকণ্ঠে কথা বলতে গিয়ে হোঁচট খেতে দেখা গেছে। তবে মাঝামাঝি সময়ে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে ট্রাম্পকে আক্রমণ করার মধ্যে দিয়ে তিনি পায়ের তলায় মাটি পেতে শুরু করেন। বাইডেন এ সময় প্রতিপক্ষকে ‘অপরাধী’ বলেও সম্বোধন করেন।জবাবে মাদককাণ্ড এবং আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় নিয়ে প্রেসিডেন্টের ছেলে হান্টার বাইডেনের আইনি ঝামেলায় জড়ানোর বিষয় সামনে আনেন।কিছুক্ষণ পরই বাইডেন বলেন, ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য এমনকি সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সেও তার (ট্রাম্পের) প্রচারে সমর্থন দেননি।
“তারা তাকে (ট্রাম্প) ভালো করেই জানেন, তার সঙ্গে কাজও করেছেন। তারপরও কেন সমর্থন দেননি,” প্রশ্ন তোলেন বাইডেন।এরপরই বাইডন প্রশাসনের বিরুদ্ধে সমালোচনার স্রোত বইয়ে দেন ট্রাম্প। যদিও সেসবের অধিকাংশই ছিল মিথ্যা তথ্যে ভরা এবং অনেকদিন ধরেই বলে আসা পুরনো বিষয়। অভিবাসীদের কারণে আমেরিকায় অপরাধ বাড়ছে, এমন সমালোচনাও ছিল এসবের মধ্যে। শিশুহত্যায় ডেমোক্র্যাটদের সমর্থনের অভিযোগ এবং ২০২০ সালের নির্বাচনে আসলে তিনি জিতেছিলেন বলেও দাবি করেন ট্রাম্প।প্রেসিডেন্ট হতে নিজেদের ফিটনেস প্রমাণের জন্য বাইডেন এবং ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প- দুইজনই চাপে আছেন। বাইডেনের বয়স এবং তীক্ষ্ণতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন সময়, অন্যদিকে উস্কানিমূলক বক্তব্য ও একের পর এক আইনি সমস্যা নিয়ে বিতর্কিত ট্রাম্প।
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে সমর্থকদের হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই ঘটনার দায় নিজে ঘাড়ে নিতে অস্বীকার করেন, পাশাপাশি দাবি করেন, ওই ঘটনায় অনেক নিরাপরাধ মানুষকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।জবাবে বাইডেন বিদ্রুপ করে বলেন, “এই মানুষটির আমেরিকার গণতন্ত্র সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই।”ট্রাম্প বলেন, বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত নিরাপদ রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন, যার ফলে অনেক অপরাধী প্রবেশ করেছে।“আমি একে বাইডেনের অভিবাসন অপরাধ বলি।”জবাবে বাইডেন বলেন, “তিনি আবারও বাড়াবাড়ি করছেন, মিথ্যা বলছেন।”বিভিন্ন জরিপের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, স্থানীয়দের তুলনায় অভিবাসীদের অপরাধের হার বেশি নয়।