স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২ মার্চ: ইসরায়েলের নির্মম অবরোধ ও নির্বিচার হামলার মধ্যে দুর্ভিক্ষের মুখে থাকা ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় বিমান থেকে খাদ্য ত্রাণ ও অন্যান্য সরবরাহ ফেলবে মার্কিন সামরিক বাহিনী, জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।বৃহস্পতিবার গাজা সিটির কাছে ত্রাণের জন্য ভিড় করা শতাধিক ফিলিস্তিনির মৃত্যুর পরদিন শুক্রবার বাইডেন এ পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।বাইডেন জানান, যুক্তরাষ্ট্র আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলা শুরু করবে।কিন্তু বিস্তারিত আর কিছু জানাননি তিনি। তবে ফ্রান্স ও জর্ডানসহ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই গাজায় বিমান থেকে ত্রাণ ফেলা শুরু করেছে; জানিয়েছে রয়টার্স।বাইডেন সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমাদের আরও বেশি কিছু করা দরকার। যুক্তরাষ্ট্র আরও কিছু করবে। গাজায় ত্রাণের প্রবাহ কোনোভাবেই পর্যাপ্ত নয়।”
গাজায় বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সরবরাহ করতে কোনো সামুদ্রিক করিডোর সম্ভব কি না, যুক্তরাষ্ট্র তা খুঁজে দেখছে বলে জানান তিনি।মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনি বা রোববার থেকেই গাজায় তাদের ত্রাণ ফেলা শুরু হতে পারে।হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কারবি জানিয়েছেন, প্রথম ফেলা ত্রাণগুলোতে ‘তৈরি খাবার’ থাকবে।জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দপ্তরের ভাষ্য অনুযায়ী, গাজা ভুখণ্ডের অন্তত ৫ লাখ ৭৬ হাজার বাসিন্দা দুর্ভিক্ষ থেকে আর এক পা দূরে আছে।তীব্র খাদ্য সংকটে থাকা গাজার ফিলিস্তিনিরা পশুখাদ্য ও এমনকী ক্যাকটাস খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। চিকিৎসা কর্মীরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে শিশুরা তীব্র অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় ভুগে মারা যাচ্ছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এমন মানবিক সংকট সত্ত্বেও গাজায় ত্রাণ নিয়ে যেতে তাদের ‘অপ্রতিরোধ্য বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে’।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোরে গাজা সিটির কাছে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা একটি ত্রাণ বহরের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১১২ জন নিহত হয়।৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় পাঁচ মাসে ফিলিস্তিনি ছিটমহলটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পানি, খাবার ও নিরাপদ স্থানের অভাবে গাজাবাসী ক্রমাগত মরিয়া পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।বাইডেন বলেছেন, “নিরপরাধ লোকজন ভয়ানক একটি যুদ্ধের মধ্যে আটকা পড়ে গেছে, তারা তাদের পরিবারকে খাবারও দিতে পারছে না। তারা যখন ত্রাণ পাওয়ার চেষ্টা করেছে কী হয়েছে আপনারা দেখেছেন। আমাদের আরও কিছু করা দরকার আর যুক্তরাষ্ট্র আরও কিছু করবে।”বিবিসি জানিয়েছে, জর্ডানের বিমান বাহিনীর পাইলটরা এরইমধ্যে গাজায় ৩৩ টন খাদ্য ও চিকিৎসা ত্রাণ ফেলেছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, জর্ডানের বিমানগুলো গাজায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পাঠানো ত্রাণও ফেলেছে। পাশাপাশি ফ্রান্স, মিশর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে বিমানযোগে ত্রাণ ফেলেছে।কিন্তু বিমানযোগে ত্রাণ ফেলার প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল ও এভাবে সরবরাহ করা ত্রাণ অপর্যাপ্ত হওয়ায়, এর সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো।ত্রাণ সংস্থা অক্সফাম বলেছে, “গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণ ফেলার বিষয়টি অক্সফাম সমর্থন করে না, এটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তাদের বিবেকের দায় থেকে মুক্তি দিতে কাজ করবে যাদের নীতি গাজায় চলমান নৃশংসতা এবং দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে অবদান রাখছে।“যেখানে গাজার ফিলিস্তিনিদের একেবারে প্রান্তে ঠেলে দেওয়া হয়েছে সেখানে কোনো নিরাপদ বিতরণের পরিকল্পনা ছাড়া তুচ্ছ, প্রতীকী পরিমাণ ত্রাণ গাজায় ফেলা কোনো সাহায্য করবে না এবং এটি ফিলিস্তিনিদের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর হবে।”এর বদলে ‘ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহের প্রবাহ বন্ধ করা নিয়ে’ যুক্তরাষ্ট্রের কাজ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।জার্মানির ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করার আবেদন জানিয়ে শুক্রবার নিকারাগুয়া আন্তর্জাতিক আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইসরায়েলকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র সরবরাহ করা অন্যতম দেশ জার্মানি।