Friday, February 7, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদঅণু গঠনের নতুন কৌশল উদ্ভাবনে রসায়নের নোবেল

অণু গঠনের নতুন কৌশল উদ্ভাবনে রসায়নের নোবেল

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৭ অক্টোবর :  নতুন ধরনের অনুঘটক ব্যবহার করে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে অনু গঠনের কৌশল উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে ওষুধ শিল্পের জন্য নতুন দুয়ার উন্মোচনের স্বীকৃতিতে চলতি বছর রসায়ন শাস্ত্রের নোবেল পেয়েছেন দুই বিজ্ঞানী।

রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস বুধবার এ পুরস্কারের জন্য জার্মান বিজ্ঞানী বেনিয়ামিন লিস্ট এবং ব্রিটিশ গবেষক ডেভিড ম্যাকমিলানের নাম ঘোষণা করে।নোবেল কমিটি বলছে, অ্যাসিমেট্রিক অরগানোক্যাটালিস্ট নামে যে অনুঘটক তারা তৈরি করেছেন, তা ব্যবহার করে একটি অণুর হুবুহু প্রতিরূপ তৈরি করা যায়।তাদের উদ্ভাবিত ওই কৌশল অনেক নতুন ওষুধ তৈরির পথ খুলে দিয়েছে। সেই সাথে নতুন অণু তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, যা সৌরবিদ্যুতের সেল তৈরিতে কাজে লাগে। 

অনেক শিল্পেই পণ্যের মানোন্নয়নের বিষয়টি নির্ভর করে নতুন ও কার্যকর উপাদান তৈরি করতে পারার ওপর। সেটা টেকসই ও হালকা নতুন জুতা তৈরির জন্যই হোক, কিংবা সূর্যের আলো থেকে শক্তি ধরে রাখতে পারে এমন ব্যাটারি তৈরির জন্য। ল্যাবরেটরিতে নতুন উপাদান তৈরির সেই কাজটা করেন কেমিস্টরা।ওষুধ তৈরির জন্য তাদের প্রায়ই এমন নতুন অণু তৈরি করতে হয়, যেগুলো গঠনগতভাবে হবে একটি আরেকটির হুবুহু প্রতিরূপ বা মিরর ইমেজ, কিন্তু বৈশিষ্ট্য হবে আলাদা। লিমোনিন হল এরকম একটি অণু, যার একটি থেকে লেবুর গন্ধ পাওয়া যায়, কিন্তু ঠিক তার প্রতিরূপই কমলার গন্ধের অনুভূতি জাগায়।

অর্থাৎ, দুটো মলিকিউল বা অণু গাঠনিকভাবে হুবুহু একরকম হলেও আমাদের শরীর ওই দুটোকে আলাদাভাবে চিনতে পারে। ওষুধের ক্ষেত্রেও তাই হয়।কিন্তু ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে ওই মিরর ইমেজ তৈরি করার কাজটি অত্যন্ত জটিল, যা শরীরে কেবল কাঙ্ক্ষিত প্রভাব ফেলবে।রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে সঠিক অনুঘটক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। একসময় ধারণা করা হত, অনুঘটক হয় শুধু দুই ধরনের। একটি হল ধাতব, অন্যটি প্রাণীর শরীরের এনজাইম।

বিজ্ঞানী বেনিয়ামিন লিস্ট এবং ডেভিড ম্যাকমিলান সম্পূর্ণ আলাদা গবেষণায় তৃতীয় এক ধরনের অনুঘটক তৈরি করেন, যা হল এই অ্যাসিমেট্রিক অরগানোক্যাটালিস্ট। যার ফলে ওই মিরর ইমেজ মলিকিউল তৈরি করা অনেক সহজ হয়ে গেল।নোবেল কমিটির ভাষায়, তাদের এই উদ্ভাবন নতুন অণু তৈরির কেমেস্ট্রিকে অন্য স্তরে নিয়ে গেছে। এই কৌশল একদিকে যেমন সশ্রয়ী, অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব।জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর কোলেনফরশুংয়ের পরিচালক বেনিয়ামিন লিস্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড ম্যাকমিলান দুজনেরই বয়স এখন ৫৩ বছর। তারা একই সময়ে অ্যাসিমেট্রিক অরগানোক্যাটালিস্ট নিয়ে গবেষণা করেছেন, যদিও শুরুতে তারা অন্যজনের কাজের বিষয়ে জানতেন না।

এবারের নোবেল পুরস্কারের এক কোটি সুইডিশ ক্রোনার সমানভাগে ভাগ করে নেবেন এ দুই গবেষক। জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে ডিএনএ সম্পাদনার ‘সূক্ষ্মতম’ কৌশল উদ্ভাবনের স্বীকৃতিতে জার্মানির গবেষক ইমানুয়েল কার্পেন্টার এবং যুক্তরাষ্ট্রের জেনিফার এ ডাউডনার গতবছর রসায়ন শাস্ত্রের নোবেল পান।

বরাবরের মতই চিকিৎসা বিভাগের পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সোমবার চলতি বছরের নোবেল মৌসুম শুরু হয়। মানবদেহে উষ্ণতার অনুভূতি কীভাবে ছড়ায়, সেই গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক ডেভিড জুলিয়াস ও অডার্ম প্যাটাপুটেনকে এবার যৌথভাবে চিকিৎসার নোবেল জিতেছেন।আর মানুষের কর্মকাণ্ড কী করে পৃথিবীর জলবায়ুর নিয়মে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, সেই গবেষণার স্বীকৃতিতে চলতি বছর পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সুকুরো মানাবে, জার্মাইনর ক্লাউস হাসেলমান এবং ইতালির জর্জিও পারিসি।

বৃহস্পতিবার আসবে সাহিত্যের নোবেল ঘোষণা। এরপর শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ১১ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য