স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৩ ফেব্রুয়ারি। রহস্যজনক ‘হাভানা সিনড্রোম’ অসুস্থতার কিছু কিছু ঘটনায় স্পন্দিত তড়িৎচৌম্বকীয় শক্তিই ‘সম্ভাব্য ব্যাখ্যা’ হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের নতুন এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বজুড়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের দেহে যেসব রহস্যজনক উপসর্গের দেখা মিলছে তা কি কোনো যন্ত্রের কারণে হচ্ছে নাকি স্বাভাবিক মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা তা নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যে নতুন এ প্রতিবেদনটি এল।মার্কিন গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সর্বসাম্প্রতিক এ প্রতিবেদনে কর্মকর্তারা যেসব উপসর্গের কথা জানিয়েছিলেন সেগুলোকে ‘সত্যিকারের ও বাদ দেওয়া যায় না’ এমন উপসর্গ হিসেবে উল্লেখ করেছেন; বাইরের কোনো উৎসের কারণে এগুলো হতে পারে বলেও ধারণা দিয়েছেন তারা।তবে কারা এজন্য দায়ী হতে পারে, প্যানেলটি সে খোঁজ করেনি বলে জানিয়েছে বিবিসি।
২০১৬ সালে কিউবার রাজধানী হাভানায় প্রথম মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও কূটনীতিকরা তাদের দেহে অনেকগুলো অস্বাভাবিক লক্ষণের কথা জানান। পরে এই লক্ষণ বা উপসর্গগুলোই ‘হাভানা সিনড্রোম’ নামে পরিচিতি পায়।আক্রান্তরা বলেন, তাদের হঠাৎ হঠাৎ মাথার ভেতর চাপ অনুভব করা ও নির্দিষ্ট একটি দিক থেকে আসা অদ্ভুত গুঞ্জন শুনতে পাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেকে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, তীব্র মাথাব্যথা ও স্মৃতি হারানোর মতো উপসর্গের কথাও জানিয়েছেন।
প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারই ব্যাপারটি নিয়ে গা করেনি। কিন্তু গত বছর থেকে তারা ব্যাপারটিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে, মার্কিন কর্মকর্তাদেরকে এ ধরনের কোনো উপসর্গ দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা জানাতে উৎসাহও যোগানো হয়। ফলশ্রুতিতে বিশ্বের বিভিন্ন অংশ থেকে এ ধরনের হাজারো ঘটনার খবর মেলে।
তবে এ বছরের জানুয়ারিতে সিআইএ-র এক অনুসন্ধানে এসব ঘটনার সঙ্গে বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়। বেশিরভাগ ঘটনাকেই প্রাকৃতিক কারণ বা মানসিক চাপের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় বলেও জানায় তারা।
অবশ্য বেশকিছু ঘটনাকে যে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না, তাও স্বীকার করে নেয় তারা।
বিশেষজ্ঞ প্যানেলের নতুন গবেষণায় সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষণে ভোগা একদলের ওপর মনোযোগ নিবদ্ধে হাজারের বেশি গোপন নথি পর্যালোচনা করা হয়, নেওয়া হয় অনেকের সাক্ষ্য।
গবেষণা শেষে তারা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে সুনির্দিষ্ট ওই লক্ষণ কোনো পরিবেশগত বা মেডিকেলজনিত পরিস্থিতি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না এবং এসব উপসর্গ সম্ভবত বাইরের কোনো উৎস বা যন্ত্রের কারণে সৃষ্টি হয়েছে।
“আমরা অনেককিছু শিখেছি,” বলেছেন বিশেষজ্ঞ প্যানেলের কাজের সঙ্গে পরিচিত একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
প্যানেলটি রহস্যজনক ওই উপসর্গগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী চারটি ‘মূল বৈশিষ্ট্য’ খুঁজে বের করে, যার মধ্যে আছে চাপ অনুভব করা এবং সুনির্দিষ্ট কোনো দিক বা স্থান থেকে কিছু আসা।
প্যানেল পরে এর পেছনে সম্ভাব্য ৫টি কারণ খতিয়ে দেখে এবং কোনো গোপন যন্ত্র এ ধরনের উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে কিনা তার অনুসন্ধান চালায়। তাদের গবেষণা বলছে, কেবল মনস্তাত্ত্বিক বা সামাজিক বিভিন্ন কারণ দিয়ে এসব উপসর্গকে ব্যাখ্যা করা যায় না, তবে এসব কারণ আক্রান্তদের সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলতে ভূমিকা রাখতে পারে।গবেষণাটি বলছে, সুনির্দিষ্টভাবে বেতারকম্পাঙ্ক পরিসীমায় পাঠানো স্পন্দিত বিদ্যুৎচৌম্বকীয় শক্তি উপসর্গগুলোর মূল বৈশিষ্ট্যের সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে; যদিও এই তথ্যের মধ্যে এখনও অনেক ফাঁক বিদ্যমান।নন-স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্টেনা’র মাধ্যমে মানবশরীরে ওই উপসর্গগুলো সৃষ্টি করা যেতে পারে। এ ধরনের উৎস সহজেই গোপন রাখা যায় এবং এগুলো ব্যবহারে শক্তিও কম লাগে। এর তরঙ্গ বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে এবং ভবনের দেয়াল ভেদ করতে পারে।তবে যন্ত্রটি কেমন হতে পারে প্রতিবেদনে তার কোনো ধারণা কিংবা এ ধরনের যন্ত্র ব্যবহারের উদ্দেশ্য সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষতিসাধন নাকি কোনো ধরনের নজরদারিতে এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে তার কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি।
মার্কিন সরকারের অনেক কর্মকর্তাই এসব ঘটনার পেছনে রাশিয়া দায়ী বলে মনে করেন; বিভিন্ন বৈঠকে এ সংক্রান্ত ইস্যু তোলাও হয়েছে, যদিও নিজেদের ধারণার পেছনে কোনো অকাট্য প্রমাণ হাজির করতে পারেননি তারা।
প্যানেলের মতে, রহস্যজনক এসব উপসর্গের আরেকটি ‘সম্ভাব্য ব্যাখ্যা’ হতে পারে কোনো ধরনের আল্ট্রাসাউন্ড, তবে এটি ভবনের দেয়ালের ভেতর দিয়ে সহজে যাতায়াত করতে পারে না। যার অর্থ হচ্ছে- আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে এমন কিছু করতে হলে উৎসটিকে তার ‘টার্গেটের’ খুব কাছে অবস্থান করতে হবে।
বিশেষজ্ঞ প্যানেল তাদের প্রতিবেদনে এ ‘সিনড্রোম’ সংক্রান্ত আরও তথ্য সংগ্রহ এবং অত্যাধুনিক শনাক্তকরণ প্রযুক্তির ব্যবহারসহ একাধিক সুপারিশও করেছে, যার অনেকগুলো গোপন রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এই প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছেন আর যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের দুই শীর্ষ কর্তা এক যৌথ বিবৃতিতে সত্য উদঘাটনে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।“আমরা লেগে থাকবো, যত সময় লাগে লাগুক,” বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক এভ্রিল ডি হেইনস ও সিআইএর পরিচালক উইলয়াম জে বার্নস।