স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৪ ডিসেম্বর: যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর পুরো গাজা জুড়ে ইসরায়েলের সেনারা হামাসের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই করছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। এর অর্থ গাজার দক্ষিণাঞ্চল, যেখানে সংঘাতের প্রথম দিকে উত্তরাঞ্চলের থেকে পালিয়ে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিল সেখানেও এখন যুদ্ধ শুরু হচ্ছে।
ইসরায়েল অবশ্য আগেই তাদের পদাতিক বাহিনীর গাজার দক্ষিণাঞ্চলে স্থল অভিযান শুরুর পরিকল্পনা বিষয়টি প্রকাশ করেছিল।গত শুক্রবার গাজায় সাত দিনের যুদ্ধবিরতি শেষ হয়। ওই সাত দিনে হামাস ১০৫ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ইসরায়েলের নাগরিক। বিনিময়ে ইসরায়েল তাদের কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়। যুদ্ধবিরতির সময়ে ত্রাণ নিয়ে বেশ কিছু ট্রাক ও লরি গাজায় প্রবেশ করেছে।গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২শ’র বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাস। জিম্মি করে নিয়ে যায় ২৪২ জনকে । প্রতিশোধ নিতে ওইদিন থেকেই গাজায় তীব্র আকাশ হামলা শুরু করে ইসরায়েল। যা এখনো অব্যাহত আছে। গত মাস থেকে ইসরায়েলের পদাতিক বাহিনী গাজায় প্রবেশ করে সম্মুখ যুদ্ধ শুরু করেছে। এরই মধ্যে তারা গাজার উত্তরের অনেকাংশ অবরুদ্ধ করে ফেলেছে। এখন ইসরায়েলি বাহিনীর নজর মিশর সীমান্তবর্তী গাজার দক্ষিণাঞ্চল।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজা থেকে হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল না করা পর্যন্ত তিনি থাকবেন না।এদিকে হামাসের সঙ্গে লড়াইয়ের শুরু থেকেই দৃঢ়ভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্র এখন গাজার সাধারণ ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও ক্ষয়ক্ষতি যতটা সম্ভব কম করার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু ইসরায়েল তাদের সর্ববৃহৎ এই মিত্রের আহ্বান আমলে নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।কারণ, যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ইসরায়েলের হামলার ব্যাপকতা এবং তীব্রতা উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে।গাজার বাসিন্দারা রোববার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, শীঘ্রই দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরু হতে চলেছে। ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলো খান ইউনিস ও দেইর আল-বালাহ শহরের মধ্যে সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী খুবই কার্যকরভাবে গাজাতে তিন টুকরো করে ফেলেছে।
রয়টার্স জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী সোমবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার ) এ একটি পোস্টে গাজার বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন নির্দেশ জারি করেছে। সেখানে গাজার প্রায় ২০টি এলাকা বা ব্লক খালি করে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা গাজার দক্ষিণের একটি মানচিত্র দিয়ে সেখানে তিনটি তীর চিহ্ন দিয়ে তিনটি জায়গা নির্দেশ করেছে। এবং গাজার বাসিন্দাদের সেখানে চলে যেতে বলেছে।ইসরায়েল বলেছে, তারা গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি কমাতে তাদের জন্য ‘নিরাপদ এলাকা’ চিহ্নিত করছে। কিন্তু জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এবং গাজার বাসিন্দারা বলছেন, গাজায় ইন্টারনেট ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুৎও থাকছে না। ফলে তারা অনলাইনে যেসব নির্দেশ দিচ্ছে সেগুলো অনুসরণ করা সাধারণ ফিলিস্তিনিদের জন্য খুবই কঠিন।লেবানন ভিত্তিক হামাস কর্মকর্তা ওসামা হামদান রোববার এ বিষয়ে বলেন, “গাজায় নিরাপদ জায়গা বলে কিছু নেই।”গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিস ও রাফাহ তে এখনো স্থল অভিযান শুরু না হলেও যুদ্ধবিমান এবং কামান থেকে গোলা বর্ষণ চলছে। যার ফলে প্রচুর মানুষ হতাহত হচ্ছে। হাসপাতালগুলো আহতদের জায়গা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।