স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,২১ জুলাই: কয়েক দশক আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা হেনরি কিসিঞ্জার চীন সফরে গিয়ে দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার পর হোয়াইট হাউস আক্ষেপ করে বলেছে, শতবর্ষী সাবেক এ শীর্ষ কূটনীতিক বেইজিংয়ের কাছে যতটা গুরুত্ব পেয়েছেন এখন দায়িত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কর্মকর্তাই তা পাননি।গত শতকের ৭০-র দশকে ওয়াশিংটন আর বেইজিংয়ের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার অন্যতম কারিগর ছিলেন সেসময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা কিসিঞ্জার। তিনি পরে সাবেক দুই মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও জেরাল্ড ফোর্ডের প্রশাসনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও ছিলেন।তাইওয়ানসহ নানান ইস্যুতে এখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে তুমুল বিরোধ দেখা যাচ্ছে।
ওই বৈরিতা নিরসনে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের নানামুখী উদ্যোগের মধ্যেই বৃহস্পতিবার কিসিঞ্জারকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ‘পুরনো বন্ধুর’ মতো সাদরে বরণ করে নেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।হোয়াইট হাউস পরে জানায়, তারা কিসিঞ্জারের চীন ভ্রমণ সম্বন্ধে অবগত, তবে এটি কেবলই এক মার্কিন নাগরিকের ব্যক্তিগত সফর।১০০ বছর বয়সী কিসিঞ্জার চীন গিয়ে কেবল শি জিনপিংয়েরই দেখা পাননি, তিনি দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শ্যাংফুর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।জেনারেল লি এর আগে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।২০১৭ সালে রাশিয়ার সর্ববৃহৎ অস্ত্র রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রোসোবোরনএক্সপোর্টের কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র কেনায় পরের বছর যুক্তরাষ্ট্র লি-র ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, যা এখনও বহাল আছে।চীনের কর্মকর্তারা বারবারই বলেছেন, তারা চান, যে কোনো আলোচনার আগে ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক।“দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, একজন সাধারণ মার্কিন নাগরিক (চীনের) প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারছেন, যোগাযোগ করতে পারছেন, যা যুক্তরাষ্ট্র পারছে না,” বলেছেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবি।
“এটা এমন একটা বিষয়, যার সমাধান করতে চাই আমরা। এই কারণেই আমরা সামরিক পর্যায়ে যোগাযোগের লাইন খোলা রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, কেননা যখন এ ধরনের লাইন থোলা থাকে না এবং উত্তেজনা এখনকার মতো চরমে থাকে, হিসাবে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা চরমে থাকে, তখন ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়,” বলেছেন তিনি। কিসিঞ্জার ফিরলে তার কাছ থেকে তিনি চীনে যা দেখেছেন, জেনেছেন, শুনেছেন তা শুনতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন মুখিয়ে আছে, বলেছেন কারবি।ইউক্রেইনে যুদ্ধ, তাইওয়ান ও বাণিজ্যে বিধিনিষেধসহ নানান ইস্যুতে বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যে যে উত্তেজনা চলছে, তা নিরসনে যোগাযোগের চ্যানেল পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সম্প্রতি একাধিক মার্কিন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা চীন সফর করেছেন।জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা প্রসঙ্গে বুধবার বেইজিংয়ের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূত জন কেরি; যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও গত মাসে বেইজিং গিয়েছিলেন।জুনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, শিগগিরই তিনি শি-র সঙ্গে বৈঠক করতে চান।মার্কিন কর্মকর্তাদের আশা, সেপ্টেম্বরে নয়া দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনেই দুই প্রেসিডেন্টকে মুখোমুখি বসাতে পারবেন তারা, তা না হলে নভেম্বরে সান ফ্রান্সিসকোতে হতে যাওয়া এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশনেও ওই শীর্ষ বৈঠক করা যাবে।শি-বাইডেন বৈঠকের ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কিনা, বেইজিং বা ওয়াশিংটন কারো দিক থেকেই এ বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।