স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,১৯ জুলাই: দুই কোরিয়ার কড়া নিরাপত্তাধীন সীমান্ত এলাকা দিয়ে মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়ায় ঢুকে পড়া মার্কিনি যুক্তরাষ্ট্রের এক সেনা সদস্য। যিনি তার বিরুদ্ধে নেওয়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এড়াতে উত্তর কোরিয়া পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।ও সেনাসদস্য বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার হেফাজতে আছে বলেও বিশ্বাস তাদের। এ ঘটনা শত্রু দুই দেশের মধ্যে নতুন করে সংকটের সৃষ্টি করবে।কোরিয়ায় ইউএস আর্মড ফোর্স এর মুখপাত্র কর্নেল ইসাক টেইলর বলেন, দুই কোরিয়ার মধ্যকার যৌথ নিরাপত্তা এলাকা সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর একজন সদস্য ‘ইচ্ছাকৃতভাবে এবং অনুমোদন ছাড়াই সামরিক সীমারেখা অতিক্রম করে ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ কোরিয়ায়’ প্রবেশ করেছে৷‘‘আমাদের বিশ্বাস, সে এখন ডিপিআরকে এর হেফাজতে আছে এবং এই ঘটনার সমাধান করার জন্য আমরা কেপিএ এর সঙ্গে কাজ করছি।” তিনি নর্থ কোরিয়াস পিপুলস আর্মির কথা উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই সেনা সদস্যের নাম পরিচয় বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি।তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের দুইজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ওই সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছিল।দক্ষিণ কোরিয়ার একটি দৈনিক পত্রিকা দেশটির সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওই নাগরিকের নাম ট্রাভিস কিং বলে জানিয়েছিল। যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে প্রাইভেট সেকেন্ড ক্লাস র্যাংকের সেনা। যদিও পরে পত্রিকাটি এই লাইনগুলো মুছে দেয়।সিবিএস নিউজ জানায়, এই ঘটনার আগে শৃঙ্খলা জনিত কারণে ওই সেনাকে পাহারা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ফিরিয়ে আনা হচ্ছিল। কিন্তু বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পার হওয়ার পর তিনি কোনো ভাবে সেখান থেকে বের হয়ে একটি ট্যুর গ্রুপের সঙ্গে সীমান্তের দিকে চলে যেতে সক্ষম হন।ওই ট্যুর গ্রুপের সঙ্গে ছিলেন এমন দাবি করা এক ব্যক্তি সিবিএস নিউজকে বলেন, তারা উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যবর্তী অসামরিক এলাকা পানমুনজম গ্রামে ঘুরতে গিয়েছিলেন। তারা সবেমাত্র সেখানে একটি ভবন ঘুরে দেখেছেন। ওই সময় ‘ওই ব্যক্তি জোরে হা হা হা করে ওঠেন এবং কয়েকটি ভবনের মাঝখান দিতে দৌড়ে চলে যান’।সিবিএস নিউজকে ওই প্রত্যক্ষদর্শী আরো বলেন, পানমুনজম গ্রামে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনারা ওই ব্যক্তি দৌড়াতে শুরু করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার পিছু নেন।
তবে প্রাথমিকভাবে সেখানে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘‘আমি শুরুতে ভেবেছিলাম এটা একটি খারাপ কৌতুক। কিন্তু যখন সে আর ফিরে আসলো না, আমি বুঝতে পারলাম এটা কোনো ভাবেই মজার ছলে করা কিছু না। এবং তার পরপরই সবাই বিষয়টি বুঝতে পেতে নড়ে ওঠে, ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।” যুক্তরাষ্ট্রের সেনা যখন উত্তর কোরিয়ার সীমান্তের দিকে দৌড়ে যান তখন সেখানে দেশটির কোনো সেনাসদস্যকে দেখা যায়নি বলেও জানান ওই প্রত্যক্ষদর্শী। কোনও মার্কিনির কিংবা দক্ষিণ কোরীয়র সীমান্ত পেরিয়ে উত্তর কোরিয়ায় ঢুকে পড়ার ঘটনা খুবই বিরল। যদিও উত্তর কোরিয়ার রাজনৈতিক দমনপীড়ন এবং অর্থনৈতিক দুর্দশা থেকে বাঁচতে ৩০ হাজারেরও বেশি উত্তর কোরীয় দক্ষিণ কোরিয়ায় পালিয়ে গেছে।অসামরিক এলাকা (ডিএমজেড) দুই কোরিয়াকে আলাদা করেছে। বিশ্বে সবচেয়ে কড়া নিরাপত্তাধীন এলাকাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এই এলাকা ভূমিমাইনে ভরা। বৈদ্যুতিক এবং কাঁটাতারের বেড়াসহ নজরদারি ক্যামেরা দিয়ে ঘেরা।
সশস্ত্র প্রহরীরা ২৪ ঘণ্টাই এখানে পাহারায় সজাগ থাকে।২৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ অসামরিক এলাকার ভেতরে রয়েছে পানমুনজম গ্রাম। কোরীয় যুদ্ধের শেষে এই অসামরিক এলাকা প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেখানে মাঝে মাঝে বন্দুকযুদ্ধ এবং রক্তক্ষয়ের ঘটনাও ঘটে।তাছাড়া, অঞ্চলটি বহু বৈঠকের ভেন্যু এবং জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা। এ এলাকা যৌথভাবে দেখাশুনা করে উত্তর কোরিয়া এবং জাতিসংঘ কমান্ড।প্রতিবছরই বহু মানুষ উত্তর কোরিয়া থেকে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু অসামরিক এলাকা (ডিএমজেড) পার হওয়া খুবই বিপজ্জনক এবং এমন ঘটনা বিরল।