Friday, July 25, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদদীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে পবিত্র হজ পালনে সৌদিতে তাঁরা

দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে পবিত্র হজ পালনে সৌদিতে তাঁরা

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৮ জুন: করোনা মহামারির কারণে গত তিন বছর সীমিত আকারে পবিত্র হজ পালিত হয়েছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে ২০২০ ও ২০২১ সালে অন্য দেশের কাউকে হজ করার অনুমতি দেয়নি সৌদি আরব সরকার। ২০২২ সালে পুনরায় বিদেশিদের হজে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও তখন বয়সের একটা সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। এতে গত বছরও অনেকে হজ করার সুযোগ পাননি।তবে চলতি বছর হজ পালনের ক্ষেত্রে সব বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাহরাম ছাড়া নারীদের হজ করার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে এবার অনেকেরই হজে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে।

প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দমে যাননি জাকুত

অনেক দিন ধরেই হজে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বাসিন্দা হুদা জাকুত (৬৪)। যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ডে ১০ সন্তানকে লালনপালন করা সহজ কাজ ছিল না। তবে তিনি এ ক্ষেত্রে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন। ১০ সন্তান আর ৩০ নাতি-নাতনিকে নিয়ে সুখের সংসার তাঁর। আর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তাঁকে বিচ্ছিন্ন হতে হয়নি। তিনি হজ পালনে সৌদি আরবে আসতে পেরেছেন।তবে সৌদি আরবের একটি বিধির কারণে জাকুতের পবিত্র হজ করার বহু দিনের ইচ্ছা পূরণসম্ভব হচ্ছিল না। ওই বিধির আওতায় নারীদের মাহরাম ছাড়া হজে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু জাকুতের সঙ্গে গাজা থেকে মক্কা পর্যন্ত যাওয়ার মতো সামর্থ্য তাঁর ছেলেদের ছিল না। তবে এবার সৌদি আরব সে বিধি প্রত্যাহার করায় হজ করার সুযোগ পেয়েছেন এই ফিলিস্তিনি নারী।

হুদা জাকুত বলেন, ‘গাজা একটি কারাগারের মতো। সব দিক এবং সীমান্ত থেকে আমরা অবরুদ্ধ।’২০১০ সালে হজের জন্য নিবন্ধন করলেও হজে যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছিলেন না জাকুত। হজ করার সুযোগ না পেয়ে চলতি বছর ওমরাহ করেন তিনি। এরপর বাড়ি ফিরে রেডিওর মাধ্যমে জানতে পারেন, এ বছর তিনি হজে যেতে পারবেন। এ কথা জানতে পেরে আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন হুদা জাকুত।গাজার বাসিন্দাদের জন্য মক্কায় হজ করতে যাওয়াটা বেশ কঠিন। ভূমধ্যমসাগর উপকূলে অবস্থিত ছোট এলাকাটি ২০০৭ সাল থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল ও মিসর। হজযাত্রীদের ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হলেও যাত্রাপথ সহজ নয়। প্রথমে বাসে করে কায়রোর বিমানবন্দরে যেতে হয়। এ জন্য সময় কমপক্ষে ১৫ ঘণ্টা লাগে। অনেক সময় সীমান্তে কিংবা সিনাইয়ে মিসরের তল্লাশিচৌকিতে দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে দ্বিগুণ সময়ও লেগে যায়।

তবে কষ্টকর এ যাত্রায় দমে যাননি জাকুত। ইউটিউবে ভিডিও দেখে দেখে হজের নিয়মকানুন শিখতে থাকেন তিনি। তাঁর পায়ে ব্যথা ছিল। কিন্তু জাকুত জানেন, হজে গেলে তাঁকে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। এ জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পায়ে ফিজিওথেরাপি নেন।হুদা জাকুত মনে করেন, হজ তাঁর জীবনের শেষ চাওয়া। তাঁর কোনো দেনা নেই, তাঁর সন্তানেরা বিবাহিত এবং তাঁদের পরিবার আছে। ফিলিস্তিনি এই নারী বলেন, ‘এরপর এ জীবনে আমার আর কিছু প্রয়োজন নেই।’

হজে যেতে কয়েন জমাতেন ইন্দোনেশিয়ার হুসিন

জাকুতের মতো করে এবার ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক হুসিন বিন নিসানেরও হজে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। জাকার্তার বাইরের একটি গ্রামের বাসিন্দা তিনি। ৮৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে নিজ এলাকায় ‘পাক ওগাহ’ বা ট্রাফিক ওয়াড্রেন হিসেবে কাজ করছেন। প্রতিদিন তিনি চালকদের কাছ থেকে যে বকশিশ পেতেন, তাই দিয়ে সংসার চালাতেন। তবে তাঁর স্বপ্ন ছিল এক দিন পবিত্র হজ পালন করবেন। এ জন্য আলাদা করে কিছু পয়সা জমাতেন। অবশেষে ১৫ বছর অপেক্ষার পর তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।

কান্নাভেজা চোখে হুসিন বলেন, হজে যাওয়ার সামর্থ্য দেওয়ার জন্য তিনি নিয়মিত আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন।বিশ্বের সবচেয়ে মুসলিমের বাস ইন্দোনেশিয়ায়। দেশটির অনেক মানুষই হজে যাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষায় আছেন। করোনা মহামারির কারণে গত তিন বছরে সীমিত পরিসরে হজ হওয়ায় তাঁদের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হয়েছে। ২০২২ সালে আবারও বিদেশিদের হজে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও বয়সসীমার কারণে ওই বছর ইন্দোনেশিয়ার যতসংখ্যক মানুষের হজ করার সুযোগ ছিল, তার অর্ধেকের কম মানুষ হজ করতে পারেন।

চলতি বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে ২ লাখ ২৯ হাজার মানুষ হজে যাওয়ার সুযোগ পান, যা এ এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। এ ক্ষেত্রে বয়স্কদের অগ্রাধিকার দিয়েছে ইন্দোনেশীয় কর্তৃপক্ষ। হজযাত্রীদের মধ্যে প্রায় ৬৭ হাজারের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। এর মধ্যে ১১৮ বছর বয়সী এক নারীও আছেন।হুসিন বিন নিসান জানান, তাঁর চার সন্তান ও ছয় নাতি-নাতনি আছে। তিনি এখনো নিয়মিত কাজ করেন।জুনের শুরুর দিকে ব্যাগ গুছিয়ে হজের উদ্দেশ্যে রওনা করেন উল্লেখ করে হুসিন বলেন, ‘এখন আমি যেকোনো সময় শান্তিতে মরতে পারব। কারণ, খোদা আমার প্রার্থনা শুনেছেন।’

মহামারির সময় হজের তাগিদ বোধ করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাদিহা

যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা সাদিহা খালিক ১১ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে হজে যোগ দিয়েছেন। ৪১ বছর বয়সী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই মার্কিন প্রকৌশলী অঙ্গরাজ্যটির নাশভিল শহরের কাছে থাকেন।কয়েক বছর ধরে হজ করার পরিকল্পনা করছিলেন সাদিহা। বিভিন্ন জায়গায় হজবিষয়ক লেখা পড়ে এবং ভিডিও দেখে তিনি রীতিগুলো জানার চেষ্টা করেছেন। যাঁরা আগে হজ করেছেন, তাঁদের অনেকের অভিজ্ঞতার কথা শুনেছেন। করোনা মহামারি চলাকালে তিনি আরও গভীরভাবে হজ করার প্রয়োজন অনুভব করেন।এ বছর নিজের জন্য এবং মা–বাবার জন্য হজের আবেদন করেন সাদিহা। এর আগেও তাঁরা তিনজন মক্কায় গিয়েছিলেন। তবে এবারই প্রথম হজের উদ্দেশ্যে সেখানে যাওয়া।সাদিহা খালিকের জন্ম যুক্তরাজ্যে। ১৯৯০-এর দশকে তাঁর পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়। এরপর তাঁরা টেনেসিতে থাকতে শুরু করেন। তাঁর বাবা গণিতের অধ্যাপক।সাদিহা বলেন, ‘জীবন খুব ছোট। সত্যিকার অর্থে আপনি যা করতে চান, সেগুলো পূরণ করার সুযোগ খুব সীমিত থাকে।’সাদিহা বিশ্বাস করেন, যদি কারও মনে নেতিবাচক কিছু থাকে, তাহলে তাঁর পক্ষে হজ পালনের উদ্দেশে মক্কায় পা রাখা কঠিন। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো আমার মন পরিচ্ছন্ন করার কাজ করে চলেছি।’

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!