Tuesday, January 14, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদ‘অন্তর্মুখী বিস্ফোরণে’ টুকরো টুকরো হয়ে যায় টাইটান

‘অন্তর্মুখী বিস্ফোরণে’ টুকরো টুকরো হয়ে যায় টাইটান

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৩ জুন: পাঁচ আরোহী নিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া ডুবোযান টাইটান ‘ভয়ঙ্কর অন্তর্মুখী বিস্ফোরণে’ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েগেছে বলে ধারণা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড।বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তা রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মাগার বলেন, ধ্বংসস্তূপের যে চিত্র পাওয়া গেছে তা ‘বিপর্যকর অন্তর্মুখী বিস্ফোরণের’ সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।একশ বছরের বেশি সময় আগে সেই ১৯১২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যাওয়া সেই সময়ের সর্ববৃহৎ ‍জাহাজ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গত রোববার পর্যটকদের নিয়ে ডুব দিয়েছিল পর্যটন সংস্থা ওশানগেইটের ডুবোযান টাইটান।আটলান্টিকের পানিতে ডুব দেওয়ার পৌনে দুই ঘণ্টার মাথায় টাইটানের সঙ্গে পানির ওপরে থাকা নিয়ন্ত্রক জাহাজ পোলার প্রিন্সের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারপর থেকে চলছিল টাইটানের উদ্ধার অভিযান।উদ্ধারকারীদের আশা ছিল হয়ত কোনো কারণে টাইটান পানির নিচে তলিয়ে গেছে, ভেসে উঠতে পারছেন না। যে কারণে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উদ্ধারকর্মীরা টাইটানের অবস্থান শনাক্ত করে সেটাকে তুলে আনতে চাইছিলেন। তাদের ভয় ছিল, ডুবোযানে সংরক্ষিত অক্সিজেন শেষ হয়ে গেলে আরোহীরা দম বন্ধ হয়ে মারা পড়তে পারেন।ডুবোযানটিতে মোট পাঁচজন আরোহী ছিলেন। হিসাব মতে বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে ডুবোযানটিতে সংরক্ষিত অক্সিজেন শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। ওশানগেইট কর্তৃপক্ষ তেমনটাই জানিয়েছিলেন।বৃহস্পতিবার সকালে টাইটানের ‍খোঁজে একটি রিমোটলি অপারেটেড ভেহিকেল বা আরওভি আটলান্টিকের তলদেশে পৌঁছায়।পানির তলদেশে চলাচলে সক্ষম ওই রোবটযানটি কানাডার জাহাজ হরাইজন আর্কটিক থেকে পরিচালনা করা হচ্ছিল।অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ার সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও উদ্ধারকর্মীরা আশা ছাড়তে রাজি ছিলেন না। তাই তারা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যেতে থাকেন।তারমধ্যেই স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে খবর আসে, আটলান্টিকের তলদেশে পাঠানো রোবটযানটি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে অন্য কিছুর ধ্বংসস্তূপ খুঁজে পেয়েছে।

পরে রোবটযানের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে সংবাদ সম্মেলন ডাকে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড। সেই সংবাদ সম্মেলনে রোবটযানের খুঁজে পাওয়া ধ্বংসস্তূপ ডুবোযান টাইটানের বলে নিশ্চিত করা হয়।বলা হয়, যে এলাকায় ধ্বংসস্তূপ খুঁজে পাওয়া গেছে সেটি টাইটানিকের ধ্বাংসাবশেষ থেকে প্রায় ১৬০০ ফুট দূরে এবং সেখানে টাইটানিকের কোনো ধ্বংসাবশেষ পড়ে নেই।পাঁচ আরোহীর মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া নিয়েও কোনো আশা দেখাতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। বরং রিয়ার এডমিরাল জন মাগার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “ওই পাঁচজনের লাশ হয়ত কখনও মিলবে না।‘‘সেখানে পরিবেশ অবিশ্বাস্যরকম নির্মম।”ওশানগেইট থেকেও এক বিবৃতিতে তারা ‘দুঃখজনকভাবে হারিয়েই গেছেন’ বলে জানানো হয়।টাইটানের ক্যাপসুলে থাকা পাঁচ আরোহীর মধ্যে ওশানগেইটের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টকটন রাশও (৬১) ছিলেন।

এছাড়া ছিলেন- ব্রিটিশ ধনকুবের, বিমান সংস্থা অ্যাকশন এভিয়েশনের চেয়ারম্যান হামিশ হার্ডিং (৫৮), পাকিস্তানের এংরো করপোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাদা দাউদ (৪৮) ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ (১৯), ফরাসি পর্যটক পল অঁরি নারজিলে (৭৭)।ট্রাকের আকারের টাইটানের দৈর্ঘ্যে ছিল ২২ ফুট। বৃহস্পতিবার আটলান্টিকের তলদেশে রোবটযানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার খবর আসার পর জানা যায় ওই ধ্বংসাবশেষ আসলে টাইটানের বহিরাংশ থেকে খুলে পড়া অংশ।১৯১২ সালে ইংল্যান্ডের নিউ সাউদাম্পটন থেকে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে প্রথম যাত্রায় বিশাল আইসবার্গের ধাক্কায় ডুবে গিয়েছিল তখনকার সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ টাইটানিক, প্রাণ গিয়েছিল দেড় হাজার মানুষের।দুটুকরো হয়ে যাওয়া টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষটি রয়েছে আটলান্টিকের ৩ হাজার ৮০০ মিটার নিচে। ১৯৮৫ সালে ওই ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। আটলান্টিক মহাসাগরের এ এলাকাটি কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেইন্ট জোন্স থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণে।আইসবার্গের ধাক্কায় বিশালাকারের টাইটানিকের ডুবে যাওয়ার ঘটনা সে সময়ে মানুষের কাছে অনেকটাই অবিশ্বাস্য ছিল। নিজের প্রথম যাত্রাতেই ডুবে যাওয়া টাইটানিকের নাম এখনো ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বল করছে। পুরো বিশ্বের মনযোগ কেড়ে নেওয়া আরো একটি দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গেলো এই টাইটানিকের নাম।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য