স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,৪ মে: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘আলঝেইমার চিকিৎসার নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি আমরা। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে এই রোগের দ্বিতীয় ওষুধ বের হয়েছে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধগুলো শিগগিরই সহজলভ্য হবে। এমনটা কিছুদিন আগেও ভাবা যায়নি।যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি এলি লিলি বলেছে, তাদের ওষুধ ডোনানেমেব আলঝেইমার রোগের সংক্রমণের গতি এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে দিতে পারে। যদিও ট্রায়ালে দুজন স্বেচ্ছাসেবী এবং সম্ভবত তৃতীয় একজন মস্তিষ্কে ওষুধের প্রতিক্রিয়ার কারণে মারা গেছেন।লেকানেমেব ওষুধের কারণে আলঝেইমার রোগের সংক্রমণের গতি কমে যায়। আলঝেইমার প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী এটা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। ডোনানেমেব ওষুধটিও একই কাজ করে।এই দুটি ওষুধই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে শরীরকে সুরক্ষিত রাখতে অ্যান্টিবডি হিসেবে কাজ করে। এই অ্যান্টিবডিগুলো মস্তিষ্ক থেকে বেটা অ্যামাইলয়েড দূর করে। এই বেটা অ্যামাইলয়েড আলঝেইমার রোগের অন্যতম কারণ।
অ্যামাইলয়েড মস্তিষ্কের কোষগুলোর মধ্যে তৈরি হয়। এটি আলাদা একটি স্তর তৈরি করে। এটি আলঝেইমার রোগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হসপিটাল ফর নিউরোলজি অ্যান্ড নিউরোসার্জারির কগনিটিভ-ডিজঅর্ডার ক্লিনিকের প্রধান ও চিকিৎসক ক্যাথ মামারি বলেন, আলঝেইমার রোগের চিকিৎসার খোঁজ চলছে কয়েক বছর ধরে। এখন এই গবেষণা ও অনুসন্ধানে বদল এসেছে। ক্যাথ মামারি আরও বলেন, ‘আমরা এখন এমন যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত কাউকে উপশম ও দীর্ঘ মেয়াদে সেবা দেওয়ার বদলে চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা নির্ধারণ করা হয়েছে।’এলি লিলির ট্রায়ালের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রকাশ করা হবে। তবে এটা নিয়ে কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
যেমন:
- আলঝেইমার রোগে প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত ১ হাজার ৭৩৪ জন ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন।
- মস্তিষ্কের আলাদা স্তরগুলো সরে না যাওয়া পর্যন্ত এক মাস ধরে ডোনানেমেব প্রয়োগ করা হয়।
- রোগ ছড়িয়ে পড়ার গতি ২৯ শতাংশের ক্ষেত্রে ধীর হয়ে পড়েছিল। আর ৩৫ শতাংশ রোগী আরও দ্রুত সাড়া দেবেন বলে আশা করা হয়েছে।
- যাঁদের ওষুধ দেওয়া হয়েছিল তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে গাড়ি চালানো, নিজের শখের চর্চা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
তবে ট্রায়ালে অংশ নেওয়া এক-তৃতীয়াংশ রোগীর মস্তিষ্ক ফুলে যাওয়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বেশির ভাগের ক্ষেত্রে এই উপসর্গ হালকা ছিল। তবে ১ দশমিক ৬ শতাংশের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের এই ফুলে যাওয়া বিপজ্জনকভাবে দেখা গেছে। এ কারণে দুজন স্বেচ্ছাসেবীর মৃত্যু হয়েছে। তৃতীয় একজন এ ঘটনার পরে মারা গেছেন।এলি লিলি গ্রুপের নিউরোসায়েন্স গবেষণা ও উন্নয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক মিনটুন বলেছেন, চিকিৎসাক্ষেত্রে ডোনানেমেব ব্যবহারের সুফল নিয়ে তাঁরা উৎসাহী। যদিও রোগের গুরুতর পর্যায়ে এর কার্যকারিতা নিয়ে ঝুঁকি রয়েছে।এলি লিলি গ্রুপ আরও বলেছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই ওষুধ হাসপাতালে ব্যবহারের অনুমতি পাবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির চিকিৎসক লিজ কোলথার্ড বলেছেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব থাকলেও এই ওষুধ আলঝেইমার রোগীকে দীর্ঘদিন ভালোভাবে বাঁচিয়ে রাখতে সহায়তা করে।যুক্তরাজ্যের ডিমেনশিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জন হার্ডি বলেছেন, প্রতিযোগিতার জন্য এই দুটি ওষুধ থাকা খুবই ভালো। ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক সুসান কোলহাস বলেন, ‘আমরা আলঝেইমার রোগের প্রথম প্রজন্মের চিকিৎসার দ্বারপ্রান্তে রয়েছি। এক দশক আগেও এটি অনেকে অসম্ভব বলে মনে করেছিল।’তবে এ ধরনের ওষুধ মস্তিষ্ক পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগেই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কার্যকর হবে। যদি যুক্তরাজ্যে এই ওষুধগুলো অনুমোদন পায় তাহলে রোগটি কীভাবে শনাক্ত করা যায়, সে ক্ষেত্রেও বিপ্লব হবে।কেবল ১-২ শতাংশ রোগীর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে থাকা তরলের পরীক্ষা করে দেখা হয় যে তাদের আসলে আলঝেইমার আছে নাকি ডিমনেশিয়ার অন্য কোনো ধরন আছে। সে ক্ষেত্রে এই ওষুধগুলো অকার্যকর হতে পারে।ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তাঁরা এর ব্যয় নির্বাহ করতে পারবে কি না। লিকানেমেব ব্যবহারে প্রতিবছরে একেকজনের পেছনে ২১ হাজার ইউরোর বেশি খরচ হয়।