স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,,১ মে: বেসামরিক লোকজনকে সরে যেতে দেওয়ার জন্য যুদ্ধবিরতি নতুন করে আরও বাড়ানোর ঘোষণার পরও সুদানের রাজধানী খার্তুমে বিমান হামলা চলছে।সেনাবাহিনী বলেছে, তারা আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড রেসপন্স ফোর্সকে (আরএসএফ) নির্মূল করতে নগরীতে হামলা চালাচ্ছে।সুদানে ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতি আরও তিনদিন বাড়ানোর কথা বলার পরও হামলা জোরদার হচ্ছে।সুদানের সেনাবাহিনী রোববার যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার আগেই জানায়, তারা নগরীরর কেন্দ্রস্থলের উত্তরে আরএসএফ সেনাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে।গত ১৫ এপ্রিলে সুদানে সশস্ত্র বাহিনী এসএএফ ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ এর মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে ৫ শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে হাজারো মানুষ।
এ লড়াইয়ে রাজধানী খার্তুম ও আশপাশের আবাসিক এলাকাগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতাল ও অন্যান্য পরিষেবা।এমন পরিস্থিতিতে মানবিক ত্রাণ কাজ সহজ করতে দুপক্ষ প্রাথমিকভাবে ৭২ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতিতে রাজি হয়েছিল। সুদানের স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।তার আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই সুদানের সেনাবাহিনী এর মেয়াদ বাড়িয়ে আরেক দফায় ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর প্রতিপক্ষ আরএসএফও যুদ্ধবিরতি নবায়নে রাজি হয়।যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘসহ সুদানের প্রতিবেশী দেশগুলোর কূটনৈতিক চেষ্টার ফলে দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়িয়েছিল। কিন্তু এর মেয়াদ শেষের আগে শনিবার সন্ধ্যাতেই খার্তুমে প্রচণ্ড লড়াই শুরু হলে এ যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যায়।
যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের জন্য এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করেছে। সর্বশেষ এই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ছিল রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত। তারপর আবার তা বাড়ানোর মধ্যেই বিমান হামলা শুরু হল।‘তাহরির ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্ট পলিসি’র হামিদ খালাফাল্লাহ খার্তুম ছেড়ে যেতে পারেননি। তিনি সংঘাত পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, “যখন বিকট শব্দে বোমা পড়ার আওয়াজ খুব কাছে চলে আসে তখন আমরা ঘরের ঠিক মাঝখানে চলে যেতে চেষ্টা করি। দরজা, জানালা ও দেয়াল থেকে দূরে সরে যাই। যতক্ষণ বোমা হামলা চলে ততক্ষণ মেঝেতে শুয়ে থাকি। যখন বোমার শব্দ কিছুটা দূরে সরে যায় তখন দ্রুত বাইরে বের হয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আবার ঘরে ঢুকে পড়ি। এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরও করতে হয়।”
কেনিয়া থেকে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা বিবিসি’র কূটনৈতিক প্রতিবেদক পল অ্যাডামস বলেছেন, সুদানের সেনাবাহিনীর পক্ষে খার্তুম থেকে আরএসএফ-কে নির্মূল করা কঠিন হবে। সেনাবাহিনী ক্ষমতাধর হলেও নগরীতে লড়াই করা আরএসএফ এর জন্য বেশি উপযোগী।সুদানে সংঘাতের কারণে বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে। যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, নাগরিকদের সরিয়ে আনতে সোমবার তারা শেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে।সৌদি আরবের জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে পোর্ট সুদানে পৌঁছেছে জাহাজ।সুদানের চলমান সংকট নিয়ে বিশ্বনেতাদের সতর্ক করে দিয়ে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদক বলেছেন, সুদানের অবস্থা সিরিয়া এবং লিবিয়ার চেয়েও খারাপ হতে পারে। লড়াই চলতে থাকলে তা বিশ্বের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে।