স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,১৮ মার্চ: ফ্রান্সে পেনশন পাওয়ার বয়সসীমা বাড়ানোর সরকারি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে রাজধানী প্যারিসে হওয়া প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বিক্ষোভকারীরা।সরকারের এই পেনশন পরিকল্পনা নিয়ে বাড়তে থাকা অস্থিরতার মধ্যে চলতি বছরের শুরু থেকে একের পর এক ধর্মঘট দেখেছে ফ্রান্স, এর প্রতিবাদে প্যারিসের রাস্তায় রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে পয়োবর্জ্যের স্তূপ, যা ২০১৮ সালের তথাকথিত ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলনের পর প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সরকারকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।রয়টার্স টেলিভিশনের ফুটেজে শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে দেশটির জাতীয় পার্লামেন্ট ভবনের কাছে প্যারিসে প্লেইস দে লা কনকর্ডে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে কাঁদুনে গ্যাস ছুড়তে দেখা গেছে, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এ সময় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো দাঙ্গা পুলিশের সামনে যুদ্ধংদেহী ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে থাকা কিছু আন্দোলনকারীকে ‘ম্যাক্রোঁ, ক্ষমতা ছাড়ো’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে।পেনশন সংস্কার বিলটিকে পার্লামেন্টের ভোটাভুটি ছাড়াই পার করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। তার এ সিদ্ধান্তের পর বৃহস্পতিবার রাতেও প্যারিসজুড়ে অস্থিরতা দেখা গিয়েছিল।সরকারের সংস্কার পরিকল্পনায় ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয়ভাবে পেনশন পাওয়ার বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে ৬৪ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পেনশন ব্যবস্থাপনাকে ধসে পড়ার হাত থেকে বাঁচাতে এই সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মত সরকারের। তবে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো এবং বেশিরভাগ ভোটারেরই এতে দ্বিমত আছে।
আরটিএল রেডিওর জন্য একটি জরিপে অংশ নেওয়া প্রতি ১০ জনের মধ্যে আটজনেরও বেশি ভোটার পার্লামেন্টে ভোট এড়াতে সরকারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানিয়েছেন। জরিপে অংশ নেওয়াদের ৬৫ শতাংশ বলেছেন, তারা চান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ অব্যাহত থাকুক।“ভোট ছাড়া অগ্রসর হওয়ার মানে হচ্ছে গণতন্ত্রকে অস্বীকার করা, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাস্তায় রাস্তায় যা হচ্ছে, তাকে পুরোপুরি অস্বীকার করা। এটা আর নেওয়া যাচ্ছে না,” বলেছেন ৫২ বছর বয়সী মনোবিজ্ঞানী নাথালি আলকিয়ে।ফ্রান্সের প্রধান শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়নগুলোর একটি বিস্তৃত জোট জানিয়েছে, তারা পেনশন আইনে পরিবর্তন নিয়ে সরকারকে পিঁছু হটতে বাধ্য করার চেষ্টায় জনগণকে সংগঠিত করা অব্যাহত রাখবে।তারা আগামী শনি ও রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিক্ষোভ করার পরিকল্পনা করছে, বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে শিল্পকারখানায় কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।শিক্ষক ইউনিয়নগুলো আগামী সপ্তাহে ধর্মঘট ডেকেছে, যা হাইস্কুলের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।সরকারের পেনশন সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে চলতি বছরের মধ্য জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে ৮ দিন বিক্ষোভ দেখেছে ফ্রান্স; স্থানীয় পর্যায়ে শিল্প-কারখানাগুলোতে নানান কর্মসূচিও হয়েছে; তবে বৃহস্পতি আর শুক্রবারের অস্থিরতা লোকজনকে ২০১৮ সালে জ্বালানির দাম বৃদ্ধিকে ঘিরে হওয়া ‘ইয়োলো ভেস্ট’ বিক্ষোভের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
সেবারের আন্দোলন ম্যাক্রোঁকে কার্বন করের বিষয়ে আংশিক পিঁছু হটতে বাধ্য করেছিল।বিল নিয়ে পার্লামেন্টে ভোট এড়াতে ম্যাক্রোঁর সরকার সংবিধানের বিশেষ অনুচ্ছেদ ৪৯ দশমিক ৩ বলবৎ করার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় পার্লামেন্টে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন বাম ও মধ্যপন্থি সদস্যরা।গত বছর পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের নির্বাচনে ম্যাক্রোঁ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও বিরোধীদের এই অনাস্থা প্রস্তাব সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ; কেবল কট্টর-ডান থেকে শুরু করে কট্টর-বাম সব অংশের আইনপ্রণেতাদের নজিরবিহীন কোনো জোট হলেই সরকার ফেলে দেওয়ার এই অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হতে পারে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।রোববার বা মঙ্গলবার ফ্রান্সের পার্লামেন্টে এই অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট হতে পারে।