Saturday, March 15, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদকৃষ্ণ সাগরের মার্কিন ড্রোনের ঘটনা নিয়ে যা জানা গেছে

কৃষ্ণ সাগরের মার্কিন ড্রোনের ঘটনা নিয়ে যা জানা গেছে

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,১৫ মার্চ: ইউক্রেইনে চলা যুদ্ধের মধ্যে কৃষ্ণ সাগরের আকাশে যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি ড্রোনের সঙ্গে রাশিয়ার জঙ্গি বিমানের সংঘর্ষকে গত এক বছরের বেশি সময়ের মধ্যে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে ঘটা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংঘাতের ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে।যুক্তরাষ্ট্র ও নেটোভুক্ত অন্য দেশগুলো এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়ার আকাশসীমার আশপাশে নজরদারি মিশন পরিচালনা করে ইউক্রেইনকে গোয়েন্দা তথ্য ও অন্যান্য তথ্য সরবরাহ করেছে, তবে এ যুদ্ধে পশ্চিমা এ দেশগুলো সরাসরি জড়িত নয় বলে জোর দাবি করে আসছে।

কোথায় ঘটনাটি ঘটেছে?

ঘটনাটি ঠিক কোথায় ঘটেছে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়া নির্দিষ্টভাবে কিছু জানায়নি। আমেরিকানরা দাবি করেছে, ড্রোনটি কৃষ্ণ সাগরের উপরে ‘আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় উড়ছিল’। রাশিয়ার বলেছে, ড্রোনটি ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ এর জন্য প্রতিষ্ঠিত সংরক্ষিত আকাশসীমার ভেতরে ছিল, কয়েক মাস আগেই ওই আকাশসীমার বিষয়ে সবাইকে ভালোভাবে জানানো হয়েছিল। রাশিয়ার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে ড্রোনটি ক্রাইমিয়ার সেভাস্তোপোল বন্দর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে ছিল বলে জানানো হয়েছে; তবে তা নিশ্চিত হয়নি।

কী ধরনের ড্রোন ছিল সেটি?

ভেঙে কৃষ্ণ সাগরে পড়া এমকিউ-৯ রিপারটি মূল এমকিউ-১ প্রিডেটর ড্রোনকে সংস্কার করে বানানো হয়েছে। মার্কিন সামরিক বাহিনী এমকিউ-৯ রিপারকে একটি ‘সামরিক পর্যবেক্ষণ, নজরদারি ও গোয়েন্দা’ (আইএসআর) প্লাটফর্ম বলে বর্ণনা করেছে। নিশ্চিতভাবেই এটি আইএসআর কাজে ব্যবহারের উপযুক্ত হলেও প্রাথমিকভাবে এই রিপারটি একটি ‘হান্টার-কিলার’, এটি ১৭০০ কেজি ভরের লেজার নিয়ন্ত্রিত পেইভওয়ে বোমা অথবা কয়েকটি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক জেনারেল ডায়নামিক্সের তৈরি করা এই চালকবিহীন আকাশযানটির পাখার বিস্তার ২০ মিটার এবং এটি ৯৫০ হর্সপাওয়ারের টার্বোপ্রপ ইঞ্জিনের শক্তিতে চলে এবং ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৮০ থেকে ৩১০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ২০২১ সাল থেকে এ ধরনের প্রায় ৩০০টি ড্রোন পরিচালনা করে আসছে।

ড্রোনটি সেখানে ছিল কেন?

২০২২ এর ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেইনে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও নেটো বাল্টিক সাগরে ও কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার ওপর নজরদারি বাড়িয়ে দেয়। ওয়াশিংটন বারবার নিশ্চিত করেছে, তারা কিইভকে অস্ত্রশস্ত্র, সামরিক রসদ ও অর্থ দেওয়ার পাশাপাশি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্যস্থল করতে প্রয়োজনীয় বুদ্ধি, পরামর্শ ও গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে আসছে; একইসঙ্গে তারা এও বলে আসছে এই যুদ্ধে তারা কোনো পক্ষ নয়। রাশিয়া অভিযোগ করে বলেছে, সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত কমান্ড ইচ্ছাকৃতভাবে সেন্ট পিটার্সবার্গের দিকে পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন বি-৫২ বোমারু বিমান পাঠায়, কিন্তু ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ঠিক আগে সেটি ঘুরে চলে যায়।

ভেঙে পড়া ড্রোনটির কী হয়েছে?

রাশিয়ার জঙ্গি বিমানের সঙ্গে সংঘর্ষের পর দূর থেকে ড্রোনটি পরিচালনা করা মার্কিন পাইলটরা এটিকে কৃষ্ণ সাগরে ফেলে দিতে বাধ্য হন। এরপর ড্রোনটির কী হয়েছে সে বিষয়ে ওয়াশিংটন মুখ বন্ধ করে রেখেছে। এটি কোথায় পড়েছে বা রাশিয়ার নৌবাহিনী এটিকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেছে কিনা সে বিষয়ে পেন্টাগন কিছু বলেনি। শুধু বলেছে, ড্রোনটির কোনো অংশই রাশিয়া উদ্ধার করেনি; কিন্তু তারা মার্কিন সাংবাদিকদের আর কোনো তথ্য দেয়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অডিও রেকর্ডিংগুলো থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, রাশিয়া এগুলো উদ্ধার করার জন্য অভিযান চালাচ্ছে; কিন্তু বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি, কারণ মস্কোও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপেন-সোর্স গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযানের পর রাশিয়ার নৌবাহিনী ড্রোনটি বেশ কিছু অংশ উদ্ধার করেছে আর পি-৮এ ও জি-৫৫০ নজরদারি বিমানগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও নেটো তা দেখেছে। এ ধরনের স্পর্শকাতর নজরদারির প্রযুক্তি রাশিয়ার হাতে পড়লে নিশ্চিতভাবেই ওয়াশিংটনের খুশি হওয়ার কথা না।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য