স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২০জানুয়ারি:দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে গত মাস থেকে শুরু হওয়া অশান্তিতে কয়েক ডজন লোকের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ কয়েক হাজার মানুষ রাজধানী লিমায় বিক্ষোভ দেখিয়ে প্রেসিডেন্ট দিনা বলুয়ার্তের পদত্যাগ, আগাম নির্বাচন এবং সংবিধান পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবারের এ বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেকেই দেশটির আদিবাসী অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দা বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। বিক্ষোভে সাড়ে তিন হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে বলে ধারণা দিয়েছে পুলিশ। তবে এই সংখ্যা পুলিশের অনুমানের দ্বিগুণেরও বেশি, ভাষ্য অন্যদের।এদিন লিমার অনেক রাস্তাতেই নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া বিক্ষোভকারীদের মোকাবেলায় অস্ত্রধারী দাঙ্গা পুলিশ দেখা গেছে।শহরটির কেন্দ্রে একটি ঐতিহাসিক ভবনে আগুন লাগারও খবর পাওয়া গেছে।সান মার্টিন প্লাজার ওই ভবনে আগুন লাগার সময় সেটি খালি ছিল। কীভাবে আগুন লেগেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি স্থানীয় রেডিওকে বলেছেন দমকল বাহিনীর এক কমান্ডার।
কানাডাভিত্তিক খনি কোম্পানি হাডবে পরে এক বিবৃতিতে জানায়, বিক্ষোভকারীরা পেরুতে তাদের ইউনিটের একটি স্থাপনায় ঢুকে সেটির ক্ষতিসাধন করেছে, গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ও যানবাহন পুড়িয়ে দিয়েছে।“এটা বিক্ষোভ হতে পারে না, যা চলছে তা আইনের শাসন নস্যাতে উদ্দেশ্যমূলক নাশকতা,” বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট বলুয়ার্তে ও অন্যান্য মন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে বলেন প্রধানমন্ত্রী আলবের্তো ওতারোলা।সামজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকেই বলছেন, লিমার ওই ভবনে আগুন ধরেছে এক পুলিশ কর্মকর্তার ছোড়া কাঁদুনে গ্যাসের গ্রেনেড থেকে। তবে পেরুর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই ভাষ্য খারিজ করে দিয়েছেন।গত মাস থেকে পেরুতে খণ্ড খণ্ড কখনো টানা কয়েকদিন যেসব সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে, তেমনটা দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দেখা যায়নি।এসব বিক্ষোভে দরিদ্র, গ্রামাঞ্চলের মানুষরা জিনিসপত্রের বাড়তে থাকা দাম, অসাম্য নিয়ে লিমার ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, কপারসমৃদ্ধ আন্দিজ দেশটির গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরীক্ষা নিচ্ছে।
তারা ১৯৯০ এর দশকে ডানপন্থি লৌহমানব আলবের্তো ফুজিমোরির সময়ে করা বাজারবান্ধব সংবিধান বদলে নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও বলুয়ার্তেকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারণ এবং আগাম নির্বাচনও চাইছে।“আমরা দখলদার দিনা বলুয়ার্তের পদত্যাগ এবং নতুন নির্বাচনের ঘোষণা শুনতে চাই,” বলেছেন বিক্ষোভকারী হোসে দে লা রোজা।দাবি না মানলে সামনের দিনগুলোতে বিক্ষোভ আরও প্রকট হবে বলেও ধারণা দিয়েছেন তিনি।গত মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশটির বামপন্থি সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদ্রো ক্যাস্তিয়োকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকে দক্ষিণ আমেরিকার এ দেশটিতে ভয়াবহ অস্থিরতা বিরাজ করছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে ক্যাস্তিয়ো বেআইনিভাবে কংগ্রেস বিলুপ্ত করার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের।বৃহস্পতিবার হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে, বাসে চড়ে লিমায় এসে বিক্ষোভ দেখায়। পতাকা ও ব্যানার নিয়ে তারা দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আয়াকুচো ও হুলিয়াকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জন্য সরকার ও পুলিশের ওপর ক্ষোভ উগরে দেয়।
অস্থিরতা এরই মধ্যে রাজধানীর বাইরে দূরের শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে।স্থানীয় টেলিভিশনের ফুটেজে দক্ষিণাঞ্চলীয় আরেকিপায় বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করা কয়েকশ বিক্ষোভকারীর ওপর পুলিশকে কাঁদুনে গ্যাস ছুড়তে দেখা গেছে। কর্তৃপক্ষ পরে আরেকিপা ও কুস্কো বিমানবন্দরের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে দেয়।এই দুই বিমানবন্দরের পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর হুলিয়াকায় আরেকটি বিমানবন্দরে ‘সমন্বিতভাবে হামলা হয়েছে’ বলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দাবি করেছেন বলুয়ার্তে।ভাংচুরকারীদের শাস্তি দেওয়ারও অঙ্গীকার করেন তিনি।দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে সাম্প্রতিক অস্থিরতা এরই মধ্যে ৪৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারি ন্যায়পাল।দেশটির ২৫টি অঞ্চলের ১৮টিতেই বিক্ষোভকারীদের সড়ক অবরোধ করতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন কর্মকর্তারা।পুলিশ লিমার সব প্রবেশপথের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে; অনেক রাজনীতিকই বিক্ষোভকারীদের শান্ত হতে অনুরোধ জানাচ্ছেন।