Sunday, January 26, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদযুক্তরাষ্ট্রের নিম্নকক্ষ: স্পিকার নির্বাচনের ভোটে ম্যাককার্থির হারের পর বিশৃঙ্খলা

যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নকক্ষ: স্পিকার নির্বাচনের ভোটে ম্যাককার্থির হারের পর বিশৃঙ্খলা

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,৪জানুয়ারি: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পদে একের পর এক ভোটে রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাককার্থির হার যে রাজনৈতিক নাটকের জন্ম দিয়েছে, গত এক শতকে এমনটা দেখেনি মার্কিন কংগ্রেস।শেষ পর্যন্ত কোনো স্পিকার ঠিক না করেই মঙ্গলবার রাতে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের অধিবেশন মুলতুবি করতে হয়।বিবিসি জানিয়েছে, ১৯২৩ সালের পর এবারই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ প্রথম রাউন্ডের ভোটে নেতা ঠিক করতে পারল না।   

অথচ নভেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে নিম্নকক্ষের দখল ফিরে পাওয়া রিপাবলিকানদের শুরুটা হওয়ার কথা ছিল বিজয়োল্লাসে।তার বদলে ম্যাককার্থিকে দেখতে হল দলীয় সহকর্মীদের বিদ্রোহ, আর নিজে এমন রেকর্ডে জড়ালেন, যেখানে ভবিষ্যতেও কেউ তার সঙ্গী হতে চাইবে না।  ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত এ সাংসদ মঙ্গলবার স্পিকার নির্বাচনের তিনটি ভোটে হেরেছেন।বুধবার নিম্নকক্ষের অধিবেশন বসলে ফের নির্বাচন হবে, তাতে জিততে তিনি কী পথ বেছে নিতে পারেন তাও অজানা।নতুন স্পিকার ঠিক না হওয়া পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদ অন্য কোনো কাজ করতে পারবে না, সে কারণে কেউ একজন তার সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ না দেওয়া পর্যন্ত নিম্নকক্ষকে একের পর এক ভোটের ভেতর দিয়েই যেতে হবে।শেষ পর্যন্ত ম্যাককার্থি জিতলেও পরবর্তী দুই বছর উদার ও ডানপন্থি রিপাবলিকানদের বিরোধ নিয়েই যে প্রতিনিধি পরিষদ টালমাটাল থাকবে, মঙ্গলবার তারই ইঙ্গিত পাওয়া গেল বলে বলছেন বিশ্লেষকরা।

নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচন নিম্নকক্ষের দখল এনে দিলেও ৪৩৫টির মধ্যে মাত্র ২২২টি আসন পাওয়া রিপাবলিকানদের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের ব্যবধান খুবই কম। স্পিকার হতে গেলে ম্যাককার্থিকে দলের অন্তত ২১৮ সাংসদের সমর্থন নিশ্চিত করা লাগবে, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কট্টরপন্থি রক্ষণশীলরা ম্যাককার্থির বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে।তার সঙ্গে কট্টরপন্থি রিপাবলিকানদের এই বিরোধ অনেকদিন ধরেই চলছিল।“কেভিন ম্যাককার্থি দীর্ঘদিন ধরেই রিপাবলিকান ককাসের সুনির্দিষ্ট অংশের কাউকে বন্ধু বানাতে পারেননি, তিনি অনেক শত্রু বানিয়েছেন। রিপাবলিকানদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা তাকে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত কারণে পছন্দ করেন না,” বলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিপাবলিকান এক লবিস্ট।কট্টর রিপাবলিকানরা ম্যাককার্থিকে অনেক বেশি মূলধারার লোক ও ক্ষমতাপ্রিয় হিসেবে দেখে আসছে। ক্যালিফোর্নিয়ার এ সাংসদ অবশ্য সম্প্রতি দলে তাকে অপছন্দ করা অংশের সঙ্গে মধ্যস্থতারও চেষ্টা করেছিলেন।এক পর্যায়ে তিনি প্রতিনিধি পরিষদে স্পিকারকে গদিচ্যুত করার নিয়ম সহজ করার ব্যাপারেও রাজি হন, কিন্তু তাও কট্টর রক্ষণশীলদের মন জিততে পারেননি।

দুই পক্ষের বিরোধ মঙ্গলবার প্রতিনিধি পরিষদে দৃশ্যমান হয়।টানা তিনটি ভোটে কোনোবারই ম্যাককার্থি প্রয়োজনীয় ২১৮টি সাংসদের সমর্থন জিততে পারেননি, কট্টর-ডান ১৯ রিপাবলিকান তার জন্য বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।এক পর্যায়ে ওই রক্ষণশীল অংশ রিপাবলিকান সাংসদ জিম জর্ডানকে ম্যাককার্থির বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে দেন; অথচ জর্ডান নিজেই স্পিকার পদে ম্যাককার্থিকে সমর্থন দেন এবং তার পেছনে সব রিপাবলিকানকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান।শেষ পর্যন্ত তৃতীয় রাউন্ডের ভোটে জর্ডানের পক্ষে ২০ রিপাবলিকানের ভোট পড়ে, ম্যাককার্থির আর ২১৮ ভোট ছোঁয়া হয় না।ডেমোক্র্যাটদেরকে এদিন তাদের নতুন নেতা নিউ ইয়র্ক থেকে নির্বাচিত হাকিম জেফরির পেছনে ঐক্যবদ্ধ থাকতেই দেখা গেছে। কেউ কেউ রিপাবলিকানদের দুর্দশা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মশকরাও করেছেন।ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এখন নাটকের সমাপ্তি কীভাবে হতে পারে তা নিয়ে একের পর এক তত্ত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।

কারও হিসেব বলছে, শেষ পর্যন্ত গোঁ ধরে থাকা ম্যাককার্থিই স্পিকার হবেন; কেউ বলছেন, ম্যাককার্থির সেকেন্ড ইন কমান্ড লুইজিয়ানার প্রতিনিধি স্টিভ স্কেলাইজের কপাল খুলে যাচ্ছে। কেউ আবার ভাবছেন, বিরক্ত ৫ রিপাবলিকানের ভোট নিয়ে ডেমোক্র্যাট জেফরিই নিম্নকক্ষের নতুন স্পিকারের শপথ নিতে পারেন।এখন পরিস্থিতি যা, তাতে ম্যাককার্থি তার দলের একাংশের হাতে জিম্মি হয়ে আছেন, বলেছেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রুথ ব্লচ রুবিন।ম্যাককার্থি বলছেন, তিনি আর কোনো ধরনের ছাড় দেবেন না। তবে শেষ পর্যন্ত হয়তো নিজের এ কথায় অনড় থাকতে পারবেন না তিনি; কট্টরপন্থিদেরকে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কমিটির দায়িত্ব দিয়ে কিংবা দলের ভেতরই নানান গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া লাগতে পারে তার।বুধবার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের সদস্যরা স্পিকার ঠিক করতে চতুর্থবার বসবেন, কিন্তু এবারও যে অচলাবস্থা ভাঙবে, তার কোনো ইঙ্গিত মিলছে না।  “ম্যাককার্থির কাছ থেকে এখন পর্যন্ত নতুন কিছু শুনিনি আমরা। তার মানে আমাদের অবস্থান আগের মতোই থাকবে,” সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছেন ম্যাককার্থিবিরোধী শিবিরের অন্যতম প্রভাবশালী সাংসদ কলোরাডোর লরেন বোবার্ট।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য