স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক ,৩জানুয়ারি: দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার হতে পর্যাপ্ত সমর্থন জোগাড়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে রিপাবলিকান সাংসদ কেভিন ম্যাককার্থিকে।স্পিকারের পদে বসতে মঙ্গলবারের ভোটে তাকে অবশ্যই প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদের সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে।অথচ রিপাবলিকানদের বড় একটি অংশ তাকে সমর্থন দিতে রাজি হচ্ছেন না, তাদের মন পেতে ম্যাককার্থি এমনকী শেষ মুহুর্তেও নানা ধরনের ছাড় দিচ্ছেন, কিন্তু তাতেও তার হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
নিম্নকক্ষে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে ব্যবধান সামান্য হওয়ায় স্পিকার হতে হলে ম্যাককার্থিকে অবশ্যই দলের সিংহভাগ ভোটই পকেটে পুরতে হবে।যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারের গুরুত্ব অপরিসীম। এ নিম্নকক্ষই কংগ্রেসের আলোচ্যসূচি, সময়সূচি এবং গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোতে কারা থাকবেন তা নির্ধারণ করে।প্রথম চেষ্টাতেই স্পিকার না হতে পারলে তা ম্যাককার্থির পাশাপাশি রিপাবলিকানদের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলবে; জো বাইডেনের প্রশাসন ও তার ছেলে হান্টার বাইডেনের কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্তে নামার যে পরিকল্পনা রিপাবলিকানরা করছে, তাও ধাক্কা খাবে।নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি খুবই সামান্য ব্যবধানে ডেমোক্র্যাটদের হটিয়ে নিম্নকক্ষের দখল নিশ্চিত করেছ। ৪৩৫ আসনের প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগুরিষ্ঠতা প্রমাণে লাগতো ২১৮ আসন, রিপাবলিকানদের আছে ২২২টি।
এই ফলের পর স্পিকার পদে দলের মনোনয়ন পেতে ভোটে নামেন ম্যাককার্থি, সেখানে তিনি জেতেন ১৮৮টি ভোট। এরপর তিনি বাকি রিপাবলিকানদের মন জয়ে মাঠে নামেন।মঙ্গলবার নতুন কংগ্রেসের যাত্রা শুরু হবে, এদিন ৩৫ নতুন সেনেটরও শপথ নেবেন।ম্যাককার্থি যদি ভোটে জিতে স্পিকার হতে পারেন, তাহলে তিনি ডেমোক্র্যাট ন্যান্সি পেলোসির স্থলাভিষিক্ত হবেন।কিন্তু রিপাবলিকানদের মধ্যে কট্টরপন্থি অনেকেই তাকে সমর্থন দিকে নারাজ; এদিকে কোনো ডেমোক্র্যাটই তাকে ভোট দেবেন বলে মনে হচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে ম্যাককার্থির ভাগ্য আদতেই সুতোর ওপর ঝুলছে।যারা ম্যাককার্থির বিপক্ষে তারা মূলত রিপাবলিকান পার্টিতে কট্টর ট্রাম্প সমর্থক হিসেবেই পরিচিত, এদের অনেকেই ‘কখনোই কেভিন নয়’ এই গোত্রের সদস্য হিসেবেও পরিচিত।
এ তালিকায় বব গুড ও ম্যাট গায়েটজও আছেন, যারা মনে করেন সমাজের যে প্রতিষ্ঠিত অংশ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে ম্যাককার্থি তাদের লোক।“আমি কাল কেভিন ম্যাককার্থিকে ভোট দিবো না। সে সমস্যার অংশ, সমাধানের নয়। এমন কিছুই হয়নি, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে তিনি নেতৃত্বে এসে তার আগের ধরন বদলাবেন,” সোমবার ফক্স নিউজকে বলেছেন গুড।“আমার মনে হয় তিনি (ম্যাককার্থি) এস্টাবলিশমেন্টের হয়ে কাজ করা চতুর একজন,” গত সপ্তাহে ডেইলি কলারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন গায়েটজ।রিপাবলিকানদের অনেকে ক্যাপিটলে দাঙ্গার সময় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপারে ম্যাককার্থির তখনকার দৃষ্টিভঙ্গিতেও অসন্তুষ্ট। ম্যাককার্থি সেসময় ওই দাঙ্গার জন্য ট্রাম্পকেই দায়ী করেছিলেন।
স্পিকারকে সরাতে অল্প সংখ্যক রিপাবলিকান দাবি তুললেই হবে, এমন বিধানও চাইছেন অনেক রিপাবলিকান। তাদের দাবি মেনে নিয়ে রোববার ম্যাককার্থি নতুন যে নিয়মের কথা বলেছেন, তাতে যে কোনো ৫ রিপাবলিকান সাংসদই যে কোনো সময়ে স্পিকারের অপসারণ চাইতে পারবে।অবশ্য এই ছাড়ও অনেক রিপাবলিকানের মন জয় করতে যথেষ্ট নয়। ম্যাককার্থি অবশ্য বেশ আত্মবিশ্বাসী।“আমার মনে হয়, কাল একটি চমৎকার দিন পেতে যাচ্ছি আমরা,” সোমবার সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছেন তিনি।ম্যাককার্থি যদি প্রথম ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন না পান, তাহলে নিম্নকক্ষকে একের পর এক ভোটের মাধ্যমে স্পিকার ঠিক করতে হবে। যা ম্যাককার্থি ও রিপাবলিকান পার্টি উভয়ের জন্যই অসম্মানজনক।স্পিকার ঠিক না হওয়া পর্যন্ত নিম্নকক্ষের অন্য সব কাজও আটকে থাকবে, হবে না কংগ্রেসের নতুন সাংসদদের শপথও।