স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ৪ নভেম্বর: জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস দেশে-বিদেশে তীব্র বিতর্কের মধ্যেই ব্যবসায়িক নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে একদিনের চীন সফরে গেছেন।শুক্রবার সকালে তিনি চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে পৌঁছেছেন। সেখানে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি খাখিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।২০১৯ সালে কোভিড মহামারী শুরুর পর থেকে শলৎসই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রথম শীর্ষ নেতা এবং বিশ্বের ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭ এর একজন নেতা হিসেবে চীন সফরে গেলেন৷কিন্তু চীনের জিরো-কোভিড নীতি এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে বাড়তে থাকা উত্তেজনার কারণে শক্তিধর কোনও পশ্চিমা দেশের নেতার বেইজিং সফর যেখানে অকল্পনীয় হয়ে উঠেছে, সেখানে দেশটিতে শলৎসের এই সফরে যাওয়া নিয়ে খোদ জার্মানি, ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া পরিবর্তিত বিশ্বের বাস্তবতা তুলে ধরেছে৷তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত রাশিয়ার ইউক্রেইন আগ্রাসনের জেরে জার্মানিতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে ব্যবসায়িক স্বার্থে চ্যান্সেলর শলৎস বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।রাশিয়ার উপর লাগামহীন নির্ভরতার পরিণাম কী তা জার্মানি এখন ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে৷ বিশেষ করে রাশিয়া থেকে গ্যাসসহ জ্বালানি আমদানি কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জার্মানিকে মরিয়া হয়ে দ্রুত বিকল্পের সন্ধান করতে হচ্ছে৷ সেকারণে চীনের মতো একনায়কতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও জার্মানি এখন নরম মনোভাব দেখাচ্ছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, চীনের ওপর বেশি নির্ভর করতে গিয়ে জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎস এখন একই ভুল করছেন, যে ভুল তিনি এর আগে করেছিলেন রাশিয়ার ওপর নির্ভর করে।
সম্প্রতি হামবুর্গে একটি বন্দর প্রকল্পে চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোম্পানি ‘কসকো’-র অংশগ্রহণ নিয়ে জার্মানির সরকারের উপর মহলে তিক্ত বিরোধ দেখা দেয়। কিন্তু মন্ত্রিসভার ছয় মন্ত্রীর বিরোধিতা উপেক্ষা করে শলৎস কসকোর অংশগ্রহণ অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নরম মনোভাব দেখান৷উপরন্তু এবার শলৎস চীন সফরে যাওয়ায় তার ভূমিকা নিয়ে জার্মানিতে অস্বস্তি বাড়ছে৷ বর্তমান পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে চীনের প্রতি জার্মানি এবং ইইউ-র নীতি কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে কোনও ঐকমত্যে না পৌঁছেই তিনি বেইজিংয়ে গেলেন।তবে চীনকে নিয়ে জার্মানিতে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা এড়িয়ে যাবেন না বলে সফরের আগেই আশ্বাস দিয়েছিলেন শলৎস। তিনি বলেছিলেন, দুই পক্ষের স্বার্থ পূর্ণ হলে জার্মানি তবেই সহযোগিতা চাইবে৷ কিন্তু বিতর্কও এড়িয়ে যাওয়া হবে না৷বেইজিং সফরকালে তিনি বিতর্কিত নানা বিষয় তুলে ধরার আশ্বাস দিয়েছেন৷ নাগরিক স্বাধীনতা, চীনের শিংজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার, তাইওয়ান ইস্যু, মুক্ত ও অবাধ বিশ্ব বাণিজ্যের মতো বিষয় তিনি আলোচ্যসূচিতে রাখবেন বলে জানিয়েছেন৷ওদিকে, সমালোচকদের আশ্বাস দিয়ে শলৎস বলেছেন, তিনি চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমান পারস্পরিক অধিকারের উপর জোর দেবেন৷ তিনি জার্মানির সংকীর্ণ স্বার্থে ইউরোপের স্বার্থ খর্ব না করারও অঙ্গীকার করেন৷