Friday, March 29, 2024
বাড়িবিশ্ব সংবাদগুজরাটের সেতু দুর্ঘটনায় গ্রেপ্তার ৯

গুজরাটের সেতু দুর্ঘটনায় গ্রেপ্তার ৯

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক,আগরতলা,১ নভেম্বর: ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে ব্রিটিশ আমলের একটি ঝুলন্ত সেতু ধসের ঘটনার সঙ্গে যোগ থাকার অভিযোগে নয় ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।রোববার সন্ধ্যায় মোরবি জেলায় মাচ্চু নদীর উপর ওই ঝুলন্ত সেতুটি কয়েকশ মানুষ নিয়ে হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ে, এতে অন্তত ১৩৫ জন নিহত হয়।স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সোমবার সকালে নিহতের সংখ্যা ১৪১ বলে জানিয়েছিল, পরে তা সংশোধন করা হয়। সে সময় সেতুতে থাকা অনেকেই অন্ধকারের মধ্যে ছিটকে নদীতে পড়ে যান। সোশাল মিডিয়ায় আসা ভিডিওতে ভেঙে পড়া সেতু থেকে বহু মানুষকে ঝুলে থাকতেও দেখা গেছে। এ সময় সাহায্য পাওয়ার জন্য অনেকে চিৎকার করছিলেন।  নিহতদের মধ্যে বহু শিশু, নারী ও বৃদ্ধ লোক আছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে কাউকে খুঁজে পাওয়ার আশা ক্রমেই মিলিয়ে যাচ্ছে।আহমেদাবাদ থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯ শতকে, ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সময়। স্থানীয়দের কাছে জুল্টো পুল নামে পরিচিত ২৩০ মিটার দীর্ঘ ওই সেতুতে অনেকেই বেড়াতে যান।সাত মাস বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ সেরে মাত্র পাঁচ দিন আগে গুজরাতের নববর্ষের দিন সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছিল। কেন সেটি ভেঙে পড়ল তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে গুজরাট প্রশাসন।পুলিশ জানিয়েছে, যে নয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা সবাই ওরেভা গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, এই কোম্পানি সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। এই গোষ্ঠীর অন্তর্গতসংস্থা অজন্তা ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে সেতু সংস্কারের কাজ নিয়েমোরবি পৌরসভার চুক্তি হয় বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। 

উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা অশোক কুমার যাদব জানিয়েছেন, তাদের সবাইকে অপরাধমূলক হত্যার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।   এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এই নয় জনের মধ্যে দুই জন সেতুস্থলে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন আর অন্য দুই জন টিকেট বুকিং কেরানি।”বাকি পাঁচ জনের মধ্যে দুই জন সেতু সংস্কারের ঠিকাদারি কাজ পেয়েছিলেন ও অপর তিন জন নিরাপত্তা রক্ষী যাদের কাজ ছিল ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা।এই গ্রেপ্তারের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ওরেভা গ্রুপ কোনো মন্তব্য করেনি বলে জানিয়েছে বিবিসি।এর আগে কোম্পানিটির একজন মুখপাত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রকে বলেন, “যদিও আমরা আরও তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছি, প্রথম দৃষ্টিতে বলা যায়, সেতুটির মাঝামাঝি জায়গায় অতিরিক্ত লোক থাকায় সেটি ধসে পড়েছে, তারা সেতুটিকে দোলনার মতো দোলাচ্ছিল।”ওরেভা গ্রুপ এক সময় নিজেদের ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঘড়ি নির্মাতা কোম্পানি’ হিসেবে বর্ণনা করেছিল। পরে তারা ব্যাটারি চালিত বাইক, গৃহস্থলীয় যন্ত্রপাতি ও টেলিভিশন নির্মাণ শুরু করেছিল। এ রকম একটি কোম্পানিকে কেন সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সেতুটি খুলে দেওয়ার আগে নিরাপত্তা পরীক্ষা ঠিকমতো করা হয়েছিল কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সংস্কারের জন্য সেতুটি আট থেকে ১২ মাস বন্ধ রাখার কথা থাকলেও মাত্র সাত মাসের মাথায় কেন খুলে দেওয়া হল প্রশ্ন উঠেছে এ নিয়েও। পৌরসভার ‘ফিটনেস ছাড়পত্র’ ছাড়াই সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার সেতুটিতে ওঠার জন্য চারশরও বেশি লোকের কাছে ১২ রুপি ও ১৭ রুপির টিকেট বিক্রি করা হয়েছিল, এতে ঝুলন্ত সেতুটিতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত লোক উঠে পড়ে, ফলে সেতুটির পুরনো ধাতুর কেবলগুলো ছিঁড়ে যায়।অতিরিক্ত লোকের ভারেই সেতুটি ধসে পড়েছে বলে গুজরাটের ফরেনসিক ল্যাবরেটরির তদন্তে দেখা গেছে বলে কয়েকটি সূত্র এনডিটিভিকে জানিয়েছে।তবে ঘটনার সময় সেতুটিতে মোট কতোজন লোক ছিলেন তা শেষ খবর পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ জানায়নি। অনুমান করা হয়, তখন সেখানে ৪০০ থেকে ৫০০ জনের মতো ছিলেন।এ পর্যন্ত ১৭৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।  

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য