Friday, February 7, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদযুদ্ধদিনের শান্তির নোবেলে নাগরিক সমাজের শক্তির স্বীকৃতি

যুদ্ধদিনের শান্তির নোবেলে নাগরিক সমাজের শক্তির স্বীকৃতি

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা,৮ অক্টোবর: যুদ্ধের মধ্যেই এল নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণার পালা, আর এবারের পুরস্কার গেল সেই ইউক্রেইন, রাশিয়া আর প্রতিবেশী বেলারুশেই।যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরতে অসাধারণ ভূমিকা রাখায় এ বছর শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়েছে বেলারুশের নাগরিক অধিকার কর্মী আলেস বিয়ালিয়াৎস্কিকে, যিনি বিচার ছাড়াই আটক রয়েছেন কারাগারে।তার সঙ্গে যৌথভাবে এবারের নোবেল পাচ্ছে ইউক্রেইনের সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিস এবং রাশিয়ার বন্ধ করে দেওয়া মানবাধিকার সংগঠন মেমোরিয়াল।নোবেল কমিটির প্রধান বেরিট রেইস-অ্যান্ডারসেন বলেন, “মানবাধিকার, গণতন্ত্র আর তিন প্রতিবেশী দেশ বেলারুশ, রাশিয়া ও ইউক্রেইনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে কাজ করা তিনি চ্যাম্পিয়নের প্রতি এবার সম্মান জানাতে চায় নরওয়ের নোবেল কমিটি।ইউক্রেইনের মানবাধিকার সংগঠন সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ।

“কেবল একজন ব্যক্তি নয়, একটি প্রতিষ্ঠান নয়, কিংবা খুব সহজে মুশকিল আসানের কোনো কৌশলে নয়; এটা হল সেই ঐক্যের শক্তি, যাকে আমরা বলি নাগরিক সমাজ, যে ঐক্য স্বৈর শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ করতে পারে।”বিবিসি লিখেছে, ৬০ বছর বয়সী বিয়ালিয়াৎস্কি মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন নব্বইয়ের দশকে। বেলারুশের সড়কে বিক্ষোভকারীদের ওপর কর্তৃত্ববাদী শাসক আলেকসান্দর লুকাশেঙ্কোর মর্মান্তিক সাঁড়াশি অভিযানের প্রতিবাদে ১৯৯৬ সালে তিনি গড়ে তুলেছিলেন ‘ভিয়াসনা (স্প্রিং) হিউম্যান রাইটস সেন্টার’।ভিয়াসনার কাজ ছিল রাজনৈতিক কারাবন্দিদের ওপর বেলারুশ কর্তৃপক্ষের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা এবং জেলে যাওয়া বিক্ষোভকারী ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো।নওরেজিয়ান নোবেল কমিটির প্রধান বেরিট রেইস-অ্যান্ডারসেন বলেন, “নিজ দেশে গণতন্ত্র এবং শান্তির জন্য তিনি (বিয়ালিয়াৎস্কি) জীবন উৎসর্গ করেছেন।”

নোবেল পুরস্কারের আগে বিয়ালিয়াৎস্কি অসংখ্য মানবাধিকার পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১১ সালে কর ফাঁকির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে তিন বছর কারাগারে বন্দি রাখা হয়। সে দফা তিনি মুক্তি পান ২০১৪ সালে।এরপর ২০২১ সালে বেলারুশের সড়কে ব্যাপক বিক্ষোভের জেরে ফের তাকে আটক করা হয়। বেলারুশ সরকারবিরোধীরা ওই বিক্ষোভ থেকে লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন।নোবেল কমিটির প্রধান বলেন, “সরকারি কর্তৃপক্ষ বারবার আলেস বিয়ালিয়াৎস্কিকে থামানোর চেষ্টা করেছে। ব্যক্তি জীবনে কঠিন সময় সত্ত্বেও মানবাধিকারেরর প্রশ্নে সংগ্রাম থেকে তিনি এক ইঞ্চি সরে আসেননি।”

বিবিসি জানিয়েছে, দুই বছর আগে গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে বিয়ালিয়াৎস্কিক ফেইসবুকে লিখেছিলেন, “বেলারুশ কর্তৃপক্ষ জবরদখলের রাজ্য চালাচ্ছে। বেলারুশ জুড়ে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী এবং তাদের মধ্যে শত শত মানুষ আটক হয়েছেন।”কারাবন্দি বিয়ালিয়াৎস্কির স্বাস্থ্যের অবস্থা জানতে পারেনি বিবিসি। তার স্ত্রী নাতালিয়া পিনচুক বলেছেন, স্বামীর পুরস্কার জয়ের খবরে তিনি আবেগ্লাপুত।রাশিয়ার মানবাধিকার সংগঠন মেমোরিয়াল। তিনি বলেন, “আলেসের কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য নোবেল কমিটি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, তার সহকর্মী ও সংগঠনের কাছে আমি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”বিবিসি লিখেছে, পশ্চিমাদের কাছে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো পরিচিত ইউরোপের সর্বশেষ স্বৈরশাসক হিসেবে। ১৯৯৪ সাল থেকে ২৮ বছর ধরে তিনি দেশ শাসন করছেন।লুকাশেঙ্কো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। চলমান যুদ্ধে বেলারুশ সীমান্ত ব্যবহার করে ইউক্রেইনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর সুযোগ তিনি পুতিনকে দিয়েছেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রুশ স্থলবাহিনীর চলাচল এবং অস্ত্রশস্ত্র পরিবহনে সীমান্ত ব্যবহারের সুযোগ তিনি দিয়েছেন।

সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ

ইউক্রেইনের নেতৃস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ (সিসিএল) একটি। সোভিয়েত পরবর্তী নয়টি দেশের মানবাধিকার গ্রুপগুলোর নেতারা ২০০৭ সালে কিইভে আন্তঃসীমান্ত সহায়তা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। তখনই সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজের (সিসিএল) সূচনা।কাজ শুরুর পর থেকেই সিজিএস ক্রিমিয়ায় রাজনৈতিক নিপীড়ন পর্যবেক্ষণ করে আসছে। ইউক্রেইনের দক্ষিণের অংশ ক্রিমিয়া ২০১৪ সালে দখল করে নেয় রাশিয়া। ইউক্রেইনের পূর্বে দনবাস অঞ্চলে যুদ্ধপরাধ ও মানবাধিকার বিরুদ্ধ অপরাধের চিত্র তারা তুলে ধরেছে। রাশিয়ার রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবিতে আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইনও পরিচালনা করছে সংগঠনটি।রাশিয়া ইউক্রেইনে পুরোদমে আক্রমণ শুরু করলে সিসিএল রাশিয়ার সম্ভাব্য যুদ্ধপরাধের অনুসন্ধানে কাজে নেমে পড়ে।শুক্রবার নোবেল ঘোষণার পর সিসিএল টুইটারে এক বিবৃতিতে বলেছে, নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়ে তারা গর্বিত।

মেমোরিয়াল

বিয়ালিয়াৎস্কি ও ইউক্রেইনের মানবাধিকার সংগঠন সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজের সঙ্গে যৌথভাবে এবার শান্তিতে নোবেল পেয়েছে রাশিয়ার মানবাধিকার সংগঠন মেমোরিয়াল। রুশ সরকার এ বছরের শুরুতে সংগঠনটি বন্ধ করে দেয়।সোভিয়েত যুগের লাখ লাখ নিরীহ মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া এবং কারাগারে বন্দি করে রাখা ও নিপীড়নের ঘটনাগুলো নিয়ে ত্রিশ বছর ধরে কাজ করে আসছিল সংগঠনটি। তাদের এ কাজে রাশিয়া কখনোই স্বস্তি বোধ করেনি।মেমোরিয়ালকে ২০০৬ সালে প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হয়। ২০১৪ সালে একে ‘বিদেশি এজেন্ট’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে রুশ সরকার।তারা যে ‘বিদেশি এজেন্ট’ নয়, তার প্রমাণ হাজির করতে না পারার অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট মেমোরিয়াল ও এর শাখাগুলোর কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয়। ২০১২ সালের বিদেশি এজেন্ট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।বিবিসি লিখেছে, ওই রায় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদালতে থাকা ব্যক্তিরা রায়ের বিরুদ্ধে ‘লজ্জা লজ্জা’ বলে স্লোগান দিয়েছিলেন।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য