Friday, August 15, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদইরানি পরমাণু কেন্দ্রে কেন হামলা চালাল ইজ়রায়েল

ইরানি পরমাণু কেন্দ্রে কেন হামলা চালাল ইজ়রায়েল

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৩ জুন : দুই দেশই চিরশত্রু। দু’পক্ষের সংঘাতের ইতিহাসও খুব নতুন নয়। তবে ইরান-ইজ়রায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাতের নেপথ্যে একাধিক অঙ্ক খুঁজে পাচ্ছেন ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।

রবিবার ওমানে পরমাণু বৈঠকে বসার কথা আমেরিকা এবং ইরানের। আমেরিকা চায় না ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাক। একাধিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরান ইতিমধ্যেই ইউরেনিয়ামের বিশুদ্ধতা ৬০ শতাংশে নিয়ে গিয়েছে। পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে এই বিশুদ্ধতার পরিমাণ আরও কয়েক শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে ইরানকে। কিন্তু আমেরিকা চায় এখানেই থেমে যাক ইরান।

বুধবারই আমেরিকার উপর চাপ বাড়িয়ে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে বলেন, ‘‘পরমাণু চুক্তি নিয়ে ষষ্ঠ দফার আলোচনা ব্যর্থ হলে এবং সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ইরান আঞ্চলিক (পশ্চিম এশিয়ার) মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাবে।’’ ওয়াশিংটনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যদি আমাদের উপর সংঘাতের পরিস্থিতি চাপিয়ে দেওয়া হয়, মনে রাখবেন, এই অঞ্চলের সমস্ত মার্কিন সেনাঘাঁটি কিন্তু আমাদের নাগালে রয়েছে।’’ বুধবারই একটি প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প ইরানের নাম না-করেই বলেছিলেন, “ওদের হাতে পরমাণু অস্ত্র থাকতে পারে না। খুব সহজ বিষয় এটি। আমরা এটা হতে দেব না।”

দু’পক্ষের এই বাগ্‌যুদ্ধের পর অনেকেই মনে করেছিলেন আলোচনা ভেস্তে যেতে চলেছে। তবে বৃহস্পতিবার সংবাদ সংস্থা এপি ওমানের বিদেশমন্ত্রী বদর-অল-বুসাইদিকে উদ্ধৃত করে জানায়, রবিবার সে দেশে এই বিষয়ে আমেরিকা এবং ইরানের মধ্যে ষষ্ঠ পর্যায়ের আলোচনা হবে। পরে দুই তরফেই বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু ইজ়রায়েল-ইরান সংঘাতের পর এই বৈঠকের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ইরানের উপর হামলা চালানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসও।

ইরান পরমাণু শক্তিধর হয়ে উঠুক, তা চায় না ইজ়রায়েল। কারণ শিয়া ধর্মাবলম্বী ইরানের শাসকেরা ইহুদিপ্রধান ইজ়রায়েলের অস্বিত্বই স্বীকার করতে চান না। বরং প্রায়ই তাঁদের পৃথিবীর মানচিত্র থেকে ইজ়রায়েলকে মুছে ফেলার হুঁশিয়ারি দিতে শোনা যায়। সম্প্রতি গাজ়া ভূখণ্ডে ইজরায়েল-হামাস সংঘাত অবশ্য ইরানকে বিকল্প উপায় ভাবতে বাধ্য করেছে। প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস কিংবা লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজ়বুল্লাকে ব্যবহার করে বেশ কয়েক বছর ইজ়রায়েলকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিল ইরান। কিন্তু ইজ়রায়েলি হানায় ওই দুই সংগঠনই এখন কোণঠাসা। তাই রণাঙ্গনে নামতে হচ্ছে ইরানকেই। ইরান অবশ্য দাবি করছে, পরমাণু অস্ত্র নয়, ওষুধ কিংবা বিদ্যুৎ তৈরির মতো কাজেই তারা ইউরেনিয়াম ব্যবহার করতে চায়।

সব মিলিয়ে আলোচনা ভেস্তে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালানো হল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে আমেরিকার ভূমিকাকেও সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখতে চাইছেন না অনেকেই। প্রকাশ্যে অবশ্য আমেরিকা বলছে, তারা রবিবারের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং আধিকারিকদের উদ্ধৃত করে সংবাদপত্র ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ দাবি করেছে, আমেরিকার সাহায্য ছাড়া ইজ়রায়েলের পক্ষে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে ওই ভাবে হামলা চালানো সম্ভব নয়। ইরানের কয়েকটি পরমাণু কেন্দ্র মাটির অনেক গভীরে রয়েছে। সেখানে হামলা চালানোর জন্য বিশেষ বোমার প্রয়োজন। তাতেই আমেরিকার সাহায্য দরকার। আরও এক ধাপ এগিয়ে ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর প্রতিবেদনে দাবি, ইরান পাল্টা হামলা চালালে ইজ়রায়েল আমেরিকার সাহায্য চাইতেই পারে। সে ক্ষেত্রে আমেরিকা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দেশকে সাহায্য করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, অতীতেও এ ঘটনা ঘটেছে।

সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে যে, আমেরিকা আদৌ কি ইরানের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে চায়? তবে ইরানও বুঝিয়ে দিয়েছে, যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই তারা পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চায়। এই সংঘাত শেষ অবধি কোন দিকে গড়ায়, রবিবারের বৈঠক আদৌ হয় কি না, সে দিকেই এখন নজর সকলের

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!