স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৯ জানুয়ারি : রাজ্যের টিপল ইঞ্জিন সরকার সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। শিক্ষার পরিকাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। এবং বেসরকারি শিক্ষার প্রসার করছে। গরিব মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েদের পড়াশোনাকে হুমকির মুখে ফেলতে এই চেষ্টায় নেমেছে বিজেপি, আইপিএফটি এবং তিপরা মথার সরকার। এর বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসএফআই এবং টি এস ইউ। বৃহস্পতিবার ছাত্র যুব ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই কথা বললেন এস এফ ওয়াই রাজ্য সম্পাদক সন্দীপন দেব। তিনি বলেন, রাজ্যের বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থার উপর গত ৩০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষামন্ত্রক এবং রাজ্যের বিদ্যালয়ের শিক্ষা দপ্তর এবং সাক্ষরতা সংক্রান্ত দপ্তরের যৌথ সমীক্ষায় এক বিস্ময়কর তথ্য সামনে এসেছে।
এই তথ্যে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়েছে। সে তথ্য তিনি তুলে ধরে বলেন, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি বিদ্যালয় ছিল ৪৩০৯ টি। ২০২৩-২৪ সালের রিপোর্টে দেখা গেছে ত্রিপুরা রাজ্যে সরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা কমে হয়েছে ৪,২৩৮ টি। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে রাজ্যের সরকারি বিদ্যালয় কমেছে ৭১ টি, অপরদিকে বেসরকারি বিদ্যালয় ২০১৮-১৯ সালে ছিল ৩৪৩ টি। ২০২৩-২৪ সালে বেড়ে হয়েছে ৩৯৫ টি। একই সাথে ত্রিপুরায় সরকারি অনুদান প্রাপ্ত বিদ্যালয় ২০১৮-১৯ সালে ছিল ৪৬ টি, বর্তমানে চারটি বিদ্যালয় বন্ধ হয়েছে। ২০১৮-১৯ সালে রাজ্যে সরকারি বিদ্যালয়গুলির মধ্যে শিক্ষক ছিলেন ৩৮,৯৮৬ জন এবং ২০২৩-২৪ সালে কমে হয়েছে ২৮ হাজার ৭১০ জন। অর্থাৎ ৯২৪৮ জন শিক্ষক সরকারি বিদ্যালয় কমেছে। সরকারি অনুদান প্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলির মধ্যে শিক্ষক ছিল ১২১৪ জন এবং ২০২৩-২৪ সালে বেড়ে হয়েছে ১০৬৪ জন। সরকারি অনুদান প্রাপ্ত বিদ্যালয়ে শিক্ষক কমেছে ১৫০ জন। ২০১৮-১৯ সালে ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ছিল ৫ লক্ষ ৭১ হাজার ৮৬৮ জন, ২০২৩-২৪ সালে সরকারি বিদ্যালয়ের ছাত্রের সংখ্যা কমে হয়েছে পাঁচ লাখ আট হাজার ৩৬ জন। অপরদিকে বেসরকারি বিদ্যালয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছাত্র সংখ্যা ছিল এক লক্ষ ২৩ হাজার ৬৬৭ জন। ২০২৩-২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লক্ষ ৪০ হাজার ৭৬৩ জন।
অর্থাৎ সরকারি বিদ্যালয়ে পাঁচ বছরে ছাত্র সংখ্যা কমে হয়েছে ৬৩ হাজার ৮৩২ জন। অপরদিকে বেসরকারি বিদ্যালয়ে ছাত্র সংখ্যা বেড়েছে ১৭ হাজার ৯৬ জন। অপরদিকে সরকার অনুদান প্রাপ্ত বিদ্যালয় গুলিতেও ১৩৩৭ জন ছাত্র সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, রাজ্যের প্রাথমিক স্তরে তৃতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ড্রপ আউটের সংখ্যা ১.৮ শতাংশ। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ড্রপ আউটের সংখ্যা ৪.১ শতাংশ। নবম এবং দশম শ্রেণীতে ড্রপ আউটের সংখ্যা ৮.৯ শতাংশ। কিন্তু, ২০২১- ২২ সালে মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে ড্রপ আউটের সংখ্যা ছিল ৮.৩ শতাংশ। পাশাপাশি ৭৬.০২ শতাংশ সরকারি বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ আছে। প্রায় ১৪ শতাংশ বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ নেই। ৮৬.৯ শতাংশ বিদ্যালয় পানীয় জলের বন্ধ বক্তা রয়েছে। তের শতাংশ বিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত পানীয় জলে বন্দোবস্ত হয়নি। অন্যদিকে ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ সরকারি বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য শৌচালয়ের ব্যবস্থা নেই। ৪৭.৬ শতাংশ বিদ্যালয়ে কম্পিউটারের সুবিধা রয়েছে। ২.৬ শতাংশ বিদ্যালয় ডিজিটাল লাইব্রেরি রয়েছে। মাত্র ৩৩ শতাংশ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার আছে। একজন মাত্র শিক্ষক রয়েছে ৩১১ টি বিদ্যালয়ে। সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার প্রতিবাদে আগামী ২০ই জানুয়ারি সদর এস এফ আই এবং এস এফ আই ডুকলি বিভাগীয় কমিটির যৌথ উদ্যোগে আগরতলায় মিছিল সংঘটিত করা হবে। তারপর শিক্ষা দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে। আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এস এফ আই এবং টি এস ইউ -র রাজ্য নেতৃত্ব।