স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২১ অক্টোবর: নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে রোববার দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩২ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো নিউ জিল্যান্ড।টানা দ্বিতীয় ফাইনালে হারল দক্ষিণ আফ্রিকা। মাস চারেক আগে পুরুষদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও হারে প্রোটিয়ারা।প্রথম দুই আসরের রানার্সআপ নিউ জিল্যান্ড ১৪ বছর পর আরেকটি ফাইনালে উঠে পেল শিরোপার স্বাদ।২০০৯ ও ২০১০ সালের ফাইনালে হারের অংশ ছিলেন ডিভাইন ও বেটস। নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবকটি (৯) আসরে খেলা সাত ক্রিকেটারের দুজন তারা। বারবাডোজে ২০১০ আসরের ফাইনালে শেষ বলে ৫ রানের প্রয়োজনে ডিভাইনের শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে কিউদের হৃদয় ভেঙেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার এলিস পেরি। অবশেষে ডিভাইন ৩৫ বছর বয়সে এসে, বেটস ৩৭ বছর বয়সে পেলেন ট্রফির স্বাদ।দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বেটসের ত্রিশোর্ধ, অ্যামেলিয়া কার ও ব্রুক হ্যালিডের চল্লিশোর্ধ ইনিংসে ৫ উইকেটে ১৫৮ রানের পুঁজি গড়ে নিউ জিল্যান্ড।
জবাবে ৪১ বলে ৫১ রানের উদ্বোধনী জুটিতে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা, কিন্তু এরপর পথ হারিয়ে শেষ পর্যন্ত তারা ৯ উইকেটে করতে পারে ১২৬।লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার অ্যামেলিয়া বোলিংয়েও নিজেকে মেলে ধরেন দারুণভাবে। ব্যাট হাতে ৩৮ বলে সর্বোচ্চ ৪৩ রানের ইনিংস খেলার পর দলের সফলতম বোলারও তিনিই, ৪ ওভারে ২৪ রানে নেন ৩ উইকেট। ফাইনালের সেরাও ২৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।৬ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়ে এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ডও গড়েছেন অ্যামিলিয়া। ২০১৪ আসরে ১৩ উইকেট নিয়ে আগের রেকর্ডটি গড়েন ইংল্যান্ডের পেসার আনিয়া শ্রুবসোল, ২০২০ আসরে সমান উইকেট নিয়ে তার পাশে বসেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার মেগান শাট।
দারুণ বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতে ১৩৫ রান করে টুর্নামেন্ট-সেরার পুরস্কারও জিতেছেন অ্যামিলিয়া।এদিন মাঠে নেমে ভারতের মিতালি রাজকে (৩৩৩) পেছনে ফেলে মেয়েদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড নিজের করে নেন বেটস (৩৩৪)। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মুখোমুখি দ্বিতীয় বলে চার মেরে শুরু করেন তিনি। তার উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী জর্জিয়া প্লিমার দুটি চার মেরে বিদায় নেন দ্বিতীয় ওভারে।বেটস ও অ্যামিলিয়া এরপর এগিয়ে নেন দলকে। পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৪৩ রান করে নিউ জিল্যান্ড। অষ্টম ওভারে বেটসের বিদায়ে (৩১ বলে ৩২) ভাঙে ৩৭ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি।
চারে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি অধিনায়ক ডিভাইন। চতুর্থ উইকেটে ৪৪ বলে ৫৭ রানের ইনিংস সেরা জুটি উপহার দেন অ্যামিলিয়া ও ব্রুক হ্যালিডে।২৮ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ৩৮ রান করে বিদায় নেন হ্যালিডে। শেষের আগের ওভারে থামেন অ্যামিলিয়া।শেষ ওভারে একটি ছক্কায় ৬ বলে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাডি গ্রিন।লক্ষ্য তাড়ায় পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৪৭ রান তুলে শুরুটা ভালো করে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু তাজমিন ব্রিটসের বিদায়ে শুরুর জুটি ভাঙার পর নিয়মিত উইকেট হারায় তারা।একই ওভারে বড় দুটি শিকার ধরেন অ্যামিলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে রান তাড়ায় ৯৬ রানের ম্যাচ জয়ী জুটি উপহার দেওয়া লরা উলভার্ট ও আনেকা বশকে ফিরিয়ে দেন তিনি।
উলভার্টের ২৭ বলে ৩৩ রানই হয়ে থাকে ইনিংসের সর্বোচ্চ। পরে শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমাতে পারেন অন্যরা।অ্যামিলিয়ার মতো পেসার রোজমেরি মেয়ারও নেন ৩ উইকেট, ২৫ রান দিয়ে।টি-টোয়েন্টিতে টানা ১০ ম্যাচ হেরে এবারের আসরে পা রেখেছিল নিউ জিল্যান্ড। গত তিনটি আসরে তারা বিদায় নিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকে। সব মিলিয়ে এবার তাদের নিয়ে বাজি ধরার লোক খুব বেশি হয়তো ছিল না। সেই দলই এশিয়ার তিন দল ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে হারিয়ে উঠে আসে সেমি-ফাইনালে। গ্রুপ পর্বে তারা হারে কেবল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
শেষ চারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাধা পেরিয়ে, ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে ট্রফি উঁচিয়ে ধরলেন বেটস-ডিভাইনরা।নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটে আলাদা জায়গা নিয়েই থাকবে দিনটি। দুপুরে তাদের পুরুষ দল ভারতের মাটিতে টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় ৩৬ বছর পর। রাতে মেয়েদের হাতে উঠল বিশ্বকাপের ট্রফি!নিউ জিল্যান্ডের পুরুষ ক্রিকেট দল এখনও কোনো বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। মেয়েরা সেই স্বাদ পেল দুই সংস্করণেই। ২০০০ সালে তারা জিতে নেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৫৮/৫ (বেটস ৩২, প্লিমার ৯, অ্যামিলিয়া ৪৩, ডিভাইন ৬, হ্যালিডে ৩৮, গ্রিন ১২*, ইসাবেলা ৩*; ক্যাপ ৪-০-২৫-০, খাকা ৪-০-৪৪-১, ট্রায়ন ৪-০-২২-১, এমলাবা ৪-০-৩১-২, ডি ক্লার্ক ২-০-১৭-১, লিস ২-০-১৭-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১২৬/৯ (উলভার্ট ৩৩, ব্রিটস ১৭, বশ ৯, ক্যাপ ৮, ডি ক্লার্ক ৬, ট্রায়ন ১৪, লিস ৮, ডের্কসেন ১০, জ্যাফটা ৬, এমলাবা ৪*, খাকা ৪*; রোজমেরি ৪-০-২৫-৩, কার্সন ৪-০-২২-১, জোনাস ৪-০-২৮-১, তাহুহু ৩-০-২১-০, অ্যামিলিয়া ৪-০-২৪-৩, হ্যালিডে ১-০-৪-১)
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৩২ রানে জিতে চ্যাম্পিয়ন
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: অ্যামিলিয়া কার
প্লেয়ার অব দা টুর্নামেন্ট: অ্যামিলিয়া কার