স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১২ অক্টোবর : নোবেল পুরস্কারের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বা জাতীয়তার ভিত্তিতে কোনো ধরনের কোটা চালুর সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস।
অ্যাকাডেমির প্রধান গোরান হ্যানসন বলেছেন, তারা চান, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন যারা করছেন, তারাই এ পুরস্কার পাক। লিঙ্গ বা জাতীয়তার ভিত্তিতে বিজয়ী নির্ধারণের পক্ষে তারা নন।
সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের শেষ ইচ্ছা অনুসারে গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবতার কল্যাণে অবদানের জন্য প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
১৯০১ সালে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তনের পর এ পর্যন্ত ৯৪৭ জন ব্যক্তি এবং ২৮টি সংস্থা এ পুরস্কার পেয়েছে। বিজয়ীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা মাত্র ৫৯ জন।
ছয়টি বিভাগে নোবেল পুরস্কারের জন্য এবছর মোট ১৩ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে নোবেল কমিটি। তাদের মধ্যে ফিলিপিন্সের সাংবাদিক মারিয়া রেসাই একমাত্র নারী। এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কার তিনি ভাগ করে নেবেন রাশিয়ার সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভের সঙ্গে।
গোরান হ্যানসন বলেন, “নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা সত্যিই খুব কম এবং এটা দুঃখজনক। সমাজে যে ন্যায্যতার অভাব, সেটাই এখানে প্রতিফলিত হয়েছে, বিশেষ করে যে বছরগুলো আমরা পার করে এসেছি। সে সমস্য এখনও রয়ে গেছে এবং এ বিষয়ে আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে।”
তিনি বলেন, “আমরা ঠিক করেছি, লিঙ্গ বা জাতীয়তার ভিত্তিতে কোনো কোটা আমরা রাখব না। আলফ্রেড নোবেলের শেষ ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
মৃত্যুর এক বছর আগে ১৮৯৫ সালে করা ওই উইলে নিজের সম্পদ থেকে এই পুরস্কার প্রবর্তনের ইচ্ছা প্রকাশ করে গিয়েছিলেন নোবেল।
গোরান হ্যানসন বলেন, “আমরা তাদেরই এ পুরস্কার দেব, যারা সবচেয়ে যোগ্য। তারাই এ পুরস্কার পাবেন, যারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানগুলো রাখছেন।”
আগের দশকের তুলনায় এখন নোবেল পুরস্কারে নারীর সংখ্যা বাড়লেও সেই বৃদ্ধির হার যে খুবই ধীর, তা মানছেন নোবেল কিমিটির প্রধান।
তিনি বলেন, পশ্চিম ইউরোপ আর উত্তর আমেরিকায় ন্যাচারাল সায়েন্স নিয়ে যে গবেষকরা কাজ করছেন, তাদের মাত্র ১০ শতাংশ নারী। পূর্ব এশিয়ায় এই সংখ্যা আরও কম।
“আমরা এটা নিশ্চিত করব যাতে, পুরস্কারের জন্য যারা মনোনয়নের নাম প্রস্তাব করেন, তাদের মধ্যে নারী বিজ্ঞানীদের সংখ্যা যেন বাড়ে। আমরা এটাও নিশ্চিত করব যাতে আমাদের কমিটিগুলোতেও নারীর অংশগ্রহণ বাড়ে। কিন্তু সেজন্য আমাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। সমাজকেও এ বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।”
নারীরা যাতে বিজ্ঞানের গবেষণায় আরও এগিয়ে আসতে পারেন, সেজন্য সমাজের মনোভাবে পরিবর্তন আনার ওপর জোর দিয়ে গোরান হ্যানসন বলেন, “তারা যেন সেইসব উদ্ভাবনের সুযোগটা পায়, যেগুলো পুরস্কৃত হতে পারে।”
জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে ডিএনএ সম্পাদনার ‘সূক্ষ্মতম’ কৌশল উদ্ভাবনের স্বীকৃতিতে জার্মানির গবেষক ইমানুয়েল কার্পেন্টার এবং যুক্তরাষ্ট্রের জেনিফার এ ডাউডনারকে গতবছর রসায়ন শাস্ত্রের নোবেল দেওয়া হয়। নোবেলের ইতিহাসে সেই প্রথম দুজন নারী কোনো বিষয়ের নোবেল পুরস্কার ভাগ করে নেন।
অধ্যাপক কার্পেন্টার সে সময় বলেছিলেন, “আমি আশা করব, আমাদের এই নোবেল জয় একটা ইতিবাচক বার্তা দেবে, বিশেষ করে তরুণ নারীদের জন্য, যারা বিজ্ঞানের পথে হাঁটতে চায়, যারা দেখাতে চায় যে নিজেদের কাজের মধ্য দিয়ে নারীরাও বিজ্ঞানের জন্য ভূমিকা রাখতে পারে।”
প্রথম নারী হিসেবে ১৯০৩ সলে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেয়েছিলেন মেরি কুরি। তিনিই প্রথম বিজ্ঞানী এবং একমাত্র নারী, যিনি দুবার এ পুরস্কার জিতেছেন। ১৯১১ সালে তার দ্বিতীয় নোবেল আসে রসায়নে।