Sunday, June 22, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদকোভিড-১৯: ছয় মাসে শনাক্ত রোগী দ্বিগুণ, ছাড়িয়ে গেল ৪০ কোটির ঘর

কোভিড-১৯: ছয় মাসে শনাক্ত রোগী দ্বিগুণ, ছাড়িয়ে গেল ৪০ কোটির ঘর




স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৯ ফেব্রুয়ারি। মাত্র এক মাসে শনাক্ত হল ১০ কোটি কোভিড রোগী, করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরন ওমিক্রনের দাপটের মধ্যে বিশ্বজুড়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ৪০ কোটির দুঃখজনক মাইলফলক।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেমস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তথ্য বলছে, মহামারীর শুরু থেকে বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বে ৪০ কোটি ৭ লাখ ৮০৫ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার ১৫৪ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এ ভাইরাস।।অবশ্য এর সবই সরকারি তথ্য। সংক্রমণ ও মৃত্যুর অনেক তথ্যই এ হিসাবের বাইরে রয়ে গেছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।মহামারীকালে সময় যত গড়াচ্ছে নতুন এ ভাইরাসের একের পর এক নতুন ধরনের আবির্ভাবে কোভিডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পরিমাণ ততই বাড়ছে।মহামারীর পরবর্তী ধাপে বিশ্বের সামনে কোন চ্যালেঞ্জ আসবে এবং তা মোকাবেলা করে কীভাবে ভাইরাসকে সঙ্গী করে বেঁচে থাকা শেখ যাবে, তার কৌশল আবিষ্কারের চেষ্টায় রীতিমত যুঝতে হচ্ছে রাষ্ট্রনেতা আর বিজ্ঞানীদের। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষে চীনের উহানে নতুন এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রথম খবর আসে। এরপর সেই ভাইরাস দ্রুত পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তে পৌঁছে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে আনুষ্ঠানিকভাবে মহামারী ঘোষণা করে। ওই বছর ২৮ জুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটিতে পৌঁছায়।

এক বছরের কিছু সময় পর ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ কোটির ঘর ছড়িয়ে যায়। করোনাভাইরাসের প্রাণঘাতী নতুন ধরন ডেল্টার দাপটের মধ্যে তা দ্বিগুণ হয়ে যায় ছয় মাসের সামান্য বেশি সময়ের মধ্যে। ৪ অগাস্ট বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছায় ২০ কোটিতে।পরের ১০ কোটি রোগী শনাক্ত হতে সময় লাগে আরও কম, পাঁচ মাসের মত। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ কোটি ছাড়ানোর খবর আসে, তার মাসখানেক আগেই অতি সংক্রামক আরেক নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপট শুরু হয়ে গেছে।বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়া ওমিক্রন বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩০ কোটি থেকে ৪০ কোটিতে নিতে সময় নিয়েছে মাত্র এক মাস। অর্থাৎ, শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হতে সময় লেগেছে মাত্র ছয় মাস।  নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে গত কয়েক দিনে বিশ্বজুড়ে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সামান্য কমেছে। তারপরও প্রতিদিন গড়ে ২৭ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এ ভাইরাসে।

মহামারীর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও নিম্ন আর মধ্যম আয়ের অনেক দেশেই এখনও পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যায়নি। উপসর্গ না থাকায় কিংবা সুযোগের অভাবে অনেকেই পরীক্ষা করাতে যাচ্ছেন না। উন্নত অনেক দেশে ঘরেই র‌্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে কোভিড পরীক্ষা করা যাচ্ছে। কিন্তু সেসব তথ্য আবার সরকারের খাতায় আসছে না। ফলে কোভিড আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি হতে পারে বলেই বিজ্ঞানীদের ধারণা।   

মহামারীর এই পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত আশা জাগিয়ে রেখেছে কোভিড টিকা। ২০২০ সালের শেষ দিকে করোনাভাইরাসের প্রথম টিকা তৈরি হয়েছিল। এর পর এক বছরের সামান্য বেশি সময়ে বিশ্বের ৫০০ কোটি মানুষ অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছে।

টিকা এখনই মহামারীর অবসান ঘটাতে পারছে না। তবে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি থেকে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি বহু মানুষের জীবন বাঁচাতে পারছে বলে গবেষকদের ভাষ্য।এবার বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ওমিক্রন ধরনটি আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক হলেও হাসপাতালে ভর্তি বা মৃত্যুর হার গত বছরের ডেল্টার সময়ের তুলনায় কম।সে কারণে বিজ্ঞানীরা বলছেন, সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা এখন কম গুরুত্বপূর্ণ সূচকে পরিণত হয়েছে, বিশেষ করে যেখানে টিকাদানের হার বেশি।উদাহরণ হিসেবে নিউ ইয়র্ক সিটির কথা বলা যায়, যেখানে এই শীতে সংক্রমণের হার আগের শীতের তুলনায় ৫৪১ শতাংশ বেড়েছে, কিন্তু সে তুলনায় মৃত্যুর হার বেড়েছে ৪৪ শতাংশ।

অনেক এলাকায় ওমিক্রনের কারণে বেড়ে চলা সংক্রমণ কমতে শুরু করায় বিধিনিষেধ শিথিল করা শুরু হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া দ্রুতই টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য তাদের সীমান্ত খুলে দিতে চলেছে। ডেনমার্ক ও নরওয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সুইডেনও বেশিরভাগ বিধিনিষেধ তুলে নিতে শুরু করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, কানেটিকাট, ডেলাওয়ার, নিউ জার্সি ও ওরেগন রাজ্যের গভর্নররা এ সপ্তাহে জানিয়েছেন, তারা চার দেয়ালের ভেতরে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা শিথিল করতে যাচ্ছেন।

কাইজার হেলথ নিউজের মহামারী বিশেষজ্ঞ ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. সেলিন গাউন্ডার মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এ ধরনের শিথিলতা যথাযথ হচ্ছে কিনা তা পুরোপুরি নির্ভর করে স্থানীয় পরিস্থিতি, টিকাদানের হার, সংক্রমিতের সংখ্যা, ও হাসপাতালে ভর্তির তুলনায় হাসপাতালের সক্ষমতার ওপর।

তিনি বলেন, ক্যালিফোর্নিয়া জুড়ে বিধিনিষেধ শিথিল করার সিদ্ধান্তে তিনি বিস্মিত হয়েছেন, কারণ সেখানে একেক এলাকার পরিস্থিতি একেক রকম। তার ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এলাকায় এখন বিধি শিথিলের সুযোগ থাকলে সেটা হচ্ছে উত্তরপূর্বের কিছু অংশ।

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, মানুষ দুই বছর ধরে মহামারীর বিধিনিষেধের মধ্যে থেকে কতটা হাপিয়ে উঠেছে, তা বোঝা যায় রাজ্যগুলোর এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে। সবাই বুঝতে পারছে যে করোনাভাইরাস অন্তত আরও কিছু দিন থাকবে। কিন্তু কীভাবে করোনাভাইরাসের সঙ্গে বসবাস করা যাবে, সেই কৌশল এখনও স্পষ্ট হযনি। 

বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশের বিশ্বাস, করোনাভাইরাস মহামারী ধীরে ধীরে প্যানডেমিক দশা থেকে এনডেমিকে পরিণত হবে। তবে এর সংজ্ঞা নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে।

এনডেমিক পর্যায়ে একটি ভাইরাসজনিত রোগ কোনো এলাকায় সাধারণ রোগে পরিণত হতে পারে। এর মানে হল, ওই এলাকায় রোগীটি থাকবে, মানুষ আক্রান্তও হবে, তবে এর প্রকোপ এবং ভয়াবহতা হবে মহামারী পর্যায়ের চেয়ে অনেক কম, এ রোগের ব্যবস্থাপনাও সহজ হবে।তবে সব ক্ষেত্রেই যে এটা হবে, তা নয়। সাধারণ জ্বর-সর্দি একটি এনডেমিক, কিন্তু বিশ্বের কিছু প্রান্তে ম্যালেরিয়াও এনডেমিক। তাই করোনাভাইরাসও হয়ত বিভিন্ন অঞ্চলভেদে বড় বা ছোট হুমকি হয়ে থাকবে। সেটা নির্ভর করবে টিকাদানের হার ও অন্যান্য বিষয়ের ওপর।কিন্তু মিউটেশন বা জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে করোনাভাইরাসের নতুন কেনো ধরন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে আবির্ভূত হলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে, কারণ বিশ্বের একটি বড় অংশের মানুষ এখনও টিকা পায়নি।

ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটার তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মাত্র ১১ শতাংশ জনগোষ্ঠী করোনাভাইরাসের এক ডোজ টিকা পেয়েছে, এর বিপরীতে ধনী ও উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ৭৮ শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছে।টিকা প্রাপ্তির দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে আফ্রিকা মহাদেশ, যেখানে মাত্র ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছে।

করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত যে ৫৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার ৯ লাখই যুক্তরাষ্ট্রে ।সেখানে গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ৫৯৮ জনের মৃত্যু হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে মারা যাচ্ছে গড়ে ১০ হাজার ৯০০ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস গত সপ্তাহে বলেন, “টিকার কারণে এবং ওমিক্রনের উচ্চ সংক্রমণের হার ও কম অসুস্থ হওয়ার প্রবণতার কারণে কিছু দেশে এমন একটি আলোচনা উঠে আসছে যে সংক্রমণ প্রতিরোধ এখন আর সম্ভব নয় এবং দরকারও নেই। এটা শুধুই সত্যের অপলাপ।”

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!