স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,২৫ জুলাই: বেন স্টোকস ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অধীনে প্রথমবারের মতো ড্র হলো কোনো টেস্ট। সেই ড্র ম্যাচটি এল এমন সময়ে, বলা যায়, ইংল্যান্ডের জন্য এর চেয়ে বাজে সময় আর হতে পারে না কোনো ড্র ম্যাচের জন্য! অ্যাশেজে টিকে থাকতে গেলে ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে জিততেই হতো ইংল্যান্ডকে, টেস্টের প্রথম তিন দিন শেষে তাদের অবস্থানও ছিল দাপুটে। কিন্তু শেষ দুই দিনে বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ইংল্যান্ডের আশা।শেষ পর্যন্ত তাই অ্যাশেজ ধরে রেখেছে অস্ট্রেলিয়াই। ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ওভালে যাবে তারা, এ সিরিজ আর হারছে না প্যাট কামিন্সের দল। বৃষ্টির কারণে ইংল্যান্ড ওল্ড ট্রাফোর্ডে জয়বঞ্চিত হয়েছে, এমন বলা হলেও সাবেক অস্ট্রেলিয়া পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা দেখছেন আরেকটি কারণও। তাঁর মতে, ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রথম ইনিংসে আগেভাগেই ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়া উচিত ছিল বেন স্টোকসের। আবার সাবেক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক রিকি পন্টিং বলছেন, এজবাস্টনে প্রথম টেস্টে স্টোকসের ইনিংস ঘোষণার কারণেই সিরিজে এমন অবস্থায় পড়েছে ইংল্যান্ড।
ম্যানচেস্টারে টেস্টের শেষ দুই দিনে বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল আগে থেকেই। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে ৩১৭ রানে অলআউট করে দেওয়ার পর আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে বেশ দাপুটে অবস্থানে চলে যায় ইংল্যান্ড। তবে ইংল্যান্ড অপেক্ষা করে অলআউট হওয়া পর্যন্ত। ম্যাকগ্রা সেখানেই ভুলটা দেখছেন।বিবিসিতে লেখা এক কলামে ১৫৭টি অ্যাশেজ উইকেটের মালিক বলেছেন, ‘তাদের বাজবল স্টাইলের দারুণ রূপ ছিল এটি, কিন্তু বেন স্টোকসের আগেই ইনিংস ঘোষণা না করাটা তাদের জয়বঞ্চিত করেছে। ইংল্যান্ড ৫০৬-৮ ছিল, ১৮৯ রানে এগিয়ে ছিল, কিন্তু বিকেলের সেশনে স্টোকস ব্যাটিং করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। জনি বেয়ারস্টোর ৯৯ রানের অপরাজিত ইনিংস হয়তো দলকে উজ্জীবিত করতে দারুণ কাজে দিয়েছে, কিন্তু স্টোকস যদি ইংল্যান্ডকে আরও ১০ ওভার আগে তুলে নিত, তাহলে আরও ১০ ওভার পেত বোলিংয়ের জন্য। তৃতীয় দিনের শেষে এসে তো বল রিভার্স সুইং-ও করছিল।’
পন্টিং অবশ্য ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ খোয়ানোর পেছনে দায় দেখছেন এজবাস্টনে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়াকেই। প্রথম দিনই ৮ উইকেটে ৭৮ ওভারে ৩৯৩ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছিলেন স্টোকস, যখন ক্রিজে ছিলেন জো রুট। স্টোকস অবশ্য এরপর থেকেই বলে আসছেন, টেস্টে ফল আনতে সেটিকেই সঠিক সিদ্ধান্ত মনে হয়েছিল তাঁর। তবে শুরু থেকেই এর সমালোচনা করে আসা পন্টিং স্কাই স্পোর্টসকে বলেছেন, ‘আমার মনে হয় তারা ওই ইনিংস ঘোষণা নিয়ে আক্ষেপ করবে। আমার মনে হয় দ্বিতীয় ইনিংসে বেশি আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টারও আক্ষেপ করবে তারা।’এজবাস্টনে দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়েরও সমালোচনা করেছেন পন্টিং, ‘আমার মনে হয় না সব সময় তারা এটি (বাজবল) করতে পারবে। আমার মনে হয় তারা এজবাস্টনে যতটা আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছে, এরপর লর্ডসে শর্ট বলে উইকেটগুলো হারিয়েই ২-০-তে পিছিয়ে পড়েছে।’বলা হচ্ছে, প্রথম তিন টেস্টের গতিপথ এমন ছিল, জিততে পারত যেকোনো দলই।
তবে প্রথম দুটি টেস্টে হারের পরই খাদের কিনারে চলে যায় ইংল্যান্ড। অ্যাশেজ জিততে টানা তিনটি টেস্ট জিততে হতো তাই তাদের। সেদিক থেকে অস্ট্রেলিয়া বেশ স্বস্তিতেই ছিল বলা যায়। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ড্রয়ের পর তো এখন অ্যাশেজ ধরে রাখা নিয়েও চিন্তা নেই তাদের। ওভালে এখন প্যাট কামিন্সের দলের সামনে সুযোগ ২০০১ সালের পর প্রথম অস্ট্রেলিয়ান দল হিসেবে ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজ জয়ের।
তবে সেটি করতে গেলে অস্ট্রেলিয়াকে আরও আগ্রাসী হতে হবে, মনে করেন ম্যাকগ্রা, ‘আশা করি অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের খেলার ধরনের সেরা থেকে কিছু নেবে, যখন তারা দক্ষিণ লন্ডনে যাবে। এ সপ্তাহে কী ঘটেছে, তা বিশ্লেষণ করবে।’এরপর তিনি যোগ করেন, ‘সিরিজের প্রথম বল থেকেই তারা বাউন্ডারিতে ফিল্ডার রেখেছে। কিন্তু ওল্ড ট্রাফোর্ডে তাদের চার-ছক্কা নয়, এক-দুই রানই ভুগিয়েছে। ভালো বলে যাতে ভালো শটেই বাউন্ডারি হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। উইকেট পাওয়ার জন্যই ফিল্ড সেট করতে হবে।’অ্যাশেজ ধরে রাখার পর অস্ট্রেলিয়ার সামনে এখন আক্রমণাত্মক হওয়ার সুযোগ বলেও মনে করেন ম্যাকগ্রা, ‘অস্ট্রেলিয়া বলতে পারে এতক্ষণ পর্যন্ত এ কৌশল কাজে দিয়েছে। তবে অ্যাশেজ যেহেতু ধরে রাখা নিশ্চিত হয়েছে, আমি তাদের আরেকটু আক্রমণাত্মক দেখতে চাই। মুক্তমনে খেলো, মাঠে ভয়ডর ছাড়াই নামো।’