Sunday, September 8, 2024
বাড়িরাজ্যবামফ্রন্টের ইশতেহার প্রকাশ

বামফ্রন্টের ইশতেহার প্রকাশ

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৩ ফেব্রুয়ারি : আসন্ন বিধানসভায় নির্বাচনে সরকার গড়তে ইশতেহার প্রকাশ করলো বামেরা। শুক্রবার সকালে সিপিআইএম রাজ্য দপ্তরে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এর ঘোষণা দেন বামফ্রন্টের আহবায়ক নারায়ণ কর। তিনি জানান, বিজেপি এবং আইপিএফটি জোট সরকার ত্রিপুরায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ফ্যাসিস্ট সুলভ সন্ত্রাস চলছে রাজ্যে। গত পাঁচ বছরে ত্রিপুরা রাজ্যে নাগরিক অধিকার খর্ব হয়েছে। গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা হুমকির মুখে। স্বশাসিত জেলা পরিষদ শুকিয়ে মারার চেষ্টা করছে। গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে ত্রিপুরা অপরাধমূলক ঘটনার দিকে শীর্ষস্থান অধিকার করে আছে।

২০১৮ সালের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ত্রিপুরায় বিজেপি এবং আইপিএফটি জোট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই প্রতিশ্রুতি এখন জুমলা বলে মানুষের কাছে পরিচিত। এবং গত পাঁচ বছরে প্রতিটা নির্বাচন প্রহসন হয়েছে, সেটাও মানুষের কাছে পরিষ্কার। তাই আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে বামফ্রন্ট ত্রিপুরা থেকে জনগণের শত্রু বিজেপিকে পরাস্ত করতে সংকল্পবদ্ধ। কারণ নৈরাজ্য চলছে বিজেপি সরকারের আমলে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংকট নামে এনেছে। ত্রিপুরার অর্থনীতি এক প্রকার ভাবে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে এ সরকার। মানুষের অভাব অনটন চরম আকার ধারণ করেছে। রেগা কাজের ক্ষেত্রে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেটাও পূরণ করেনি। সরকারি দপ্তর গুলিতে শূন্যপদ পড়ে থাকার পরও নিয়োগ নীতি নেই বলে জানান তিনি। এ পাশাপাশি শ্রমিকদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, শ্রমিকদের অধিকার পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে কেড়ে নিয়েছে। ত্রিপুরায় লুটের বাণিজ্য শুরু হয়েছে। বাইরের ঠিকাদারেরা এসে ত্রিপুরায় কাজ করছে। মানুষ এর থেকে পরিত্রান চাইছে। তাই বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস আসন সমঝোতা করে আসন্ন নির্বাচন লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ফলে বিজেপি আতঙ্কে ভুগছে। গোহারে হারবে বলে জানান নারায়ণ কর। এদিন তিনি রাজ্যের আপামর জনগণের জন্য ইশতেহার স্বরূপ একাধিক বিষয় তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো নাগরিকদের মৌলিক অধিকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা হবে, আইনের শাসন ফিরিয়ে আনা হবে। মানুষের ধর্মীয় ও সামাজিক অধিকার নিবিঘ্নে ভোগ করার সুযোগ পাবে। গত পাঁচ বছরে ৪৭ জন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছে। মামলা হলেও কোন তদন্ত হয়নি এবং অভিযোগ করা পুলিশের নাগালের বাইরে। তাই সংবাদ মাধ্যমে স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা হবে। সবগুলি মামলা তদন্ত হবে। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ দমনে আইনের অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর পাশাপাশি যারা রাজনৈতিক সন্ত্রাসে নিহিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের পরিবারকে সরকারি সাহায্য করা হবে বলে জানান তিনি। ইশতেহারে উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতি মধ্যে রয়েছে ১০,৩২৩ চাকরিচ্যুত শিক্ষক শিক্ষিকাদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ করা হবে। প্রয়াত চাকুরিচ্যুতদের পরিবারে যদি কেউ চাকরির যোগ্য থাকে তাহলে চাকুরির ব্যবস্থা করা হবে। এবং বর্তমানে সরকারি কর্মচারীদের যে পেনশন স্কিমটি চালু রয়েছে তার পরিবর্তন করে পুরনো পেনশন প্রকল্প চালু করা হবে। বছরে দুবার মহার্ঘ ভাতা প্রদান করা হবে। কৃষকদের উপর থেকে শোষণ নির্যাতন বন্ধ করে সরকারি সহযোগিতা হিসেবে সার বীজ কীটনাশক, ওষুধ, যন্ত্রপাতি সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। এর পাশাপাশি গরিবংশের মানুষদের জন্য ২০০ দিনের রেগা কাজের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হবে। এবং ২০১৮ সালের পর যাদের সামাজিক ভাতার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বা নাম কাটা হয়েছে তাদের সকলকে সামাজিক ভাতার আওতায় আনা হবে। ভাতার তালিকা থেকে যাদের নাম কাটা হয়েছে তাদের পুনরায় সামাজিক ভাতার তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে। এর মধ্যে যারা ৬০ ঊর্ধ্বে রয়েছেন রোজগার এক লক্ষ টাকার কম, তাদের কোন না কোন ভাতার আওতায় আনা হবে। অনিয়মিত কর্মীদের ছাটাই বন্ধ করা হবে। যারা অনিয়মিত কর্মী রয়েছে তাদের চুক্তিবদ্ধ করার নিয়ম মেনে নিয়মিত করা হবে। হাসপাতাল গুলিতে স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা হবে। এবং একটি হাসপাতাল তৈরি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এর পাশাপাশি হাসপাতাল গুলিতে পর্যাপ্ত ঔষধ, শয্যা সহ অন্যান্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে।

আড়াই লক্ষ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। সরকারি দপ্তর গুলিতে শূন্য পদ পূরণ করা হবে বলে জানান শ্রী কর। আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এদিন এছাড়াও উপস্থিত সিপিআই রাজ্য কমিটির সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী জানান, পাঁচ বছরে রাজ্যে যে অনিয়ম হয়েছে সেগুলি তদন্ত করা হবে। মানুষের মধ্যে বিভাজন বন্ধ করা হবে। সিএনজি এবং পিএনজি মূল্যবৃদ্ধি বিষয়টি রিভিউ করা হবে। তিনি আরো জানান আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটি যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করা হবে। এবং নির্বাচনের আগে যৌথভাবে কি কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে সে বিষয়ে অবগত করা হবে রাজ্যের মানুষকে। আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এদের এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বামফ্রন্টের অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা পরেশ চন্দ্র সরকার, সিপিআই দলের নেতা মিলন বৈদ্য সহ অন্যান্যরা।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য