স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৪ নভেম্বর : ২০১৮ পর ত্রিপুরার মানুষের মানসিকতা বদলেছে। ত্রিপুরার মানুষের মধ্যে স্বনির্ভর মানসিকতা এসেছে। মানুষ স্বনির্ভর মানসিকতায় বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করছে। ৩১ হাজারের অধিক সেল্ফ হেল্প গ্রুপ রয়েছে রাজ্যে। এর সাথে জড়িত ২ লক্ষ ৭০ হাজার মহিলা। পূর্বে ত্রিপুরা রাজ্যে ইকোনমিক ছিল মাত্র ১০০ কোটি টাকা, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৭০০ কোটি টাকা।
ইকোনমির অন্তরের পেছনে মূল কারণ হলো মানুষ আগে স্বনির্ভর মানসিকতা জানত না। রবিবার টাউন হলে রাজ্য ভিত্তিক ৬৮ তম সমবায় সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক সূচনা করে এ কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। তিনি বলেন বর্তমানে ত্রিপুরা কোন কিছুর জন্য মিছিল বা আন্দোলন করতে হয়না। দীর্ঘ ২৫ বছরে শুধু কেন্দ্র দেয়না বলে আন্দোলন করা হয়েছে। ২০১৮ -র ১০ বছর আগে ত্রিপুরা পরিচালনা করার সুযোগ পেলে এতদিনে ত্রিপুরাকে ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠতম রাজ্যের দুয়ারে নিয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু দিন শেষ হয়ে যায়নি। ত্রিপুরার মানুষের মানসিকতা বদলেছে। যুবকরা নিজেরা কিছু করতে চায়। আর এটাই ত্রিপুরাকে স্বনির্ভর ত্রিপুরা করতে সহযোগিতা করবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী। ত্রিপুরায় পূর্বের সরকারের ২৫ বছরে ১৫০৬ টি সমবায় সমিতি ছিল। সমবায় সমিতির সংখ্যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯১০ টি।
কর্পোরেট সকলকে প্রতিযোগিতা আসতে হবে। অনলাইনে বাণিজ্য করার চিন্তা ধারা নিতে হবে। এবং সামগ্রীর প্রচার, গুণগতমান, প্যাকেটিং যদি উন্নত মানের হয় তাহলে ত্রিপুরা থেকে বিশ্বের বাজারে পৌঁছানো অসম্ভব নয় বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। ত্রিপুরায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে পেট্রোলের উপর থেকে ৭ টাকা কমানোর নির্দেশের পর কার্যকরী হওয়ার একদিন সময়ের মধ্যেই রাজ্যের বিরোধীদলের সিপিআইএম অভিযোগ তুলেছিল বিপ্লব দেব রাজ্যের মানুষের সাথে জুমলা বাজি করছে। এই সুযোগে তারা এ ধরনের অপপ্রচার করেছে। আসলে জুমলা বাজি রাজনীতি বিপ্লব দেব করে না। জুমলা বাজি করে দীর্ঘ ২৫ বছর যারা ত্রিপুরাকে চালিয়েছিল তারা বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
ত্রিপুরা রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্র গুলি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে মুখ্যমন্ত্রী বাসভবনের সামনে কালো সিট লাগানো হয়েছিল। পরের দিন তা নিয়ে খবরের কাগজে প্রকাশ করা হয়েছিল। আর এখন যখন সেখানে পর্যটন কেন্দ্রের ছবি লাগানো হয়েছে, তখন তারাই এখন এসে সেখানে বসে সেলফি তুলেন। কিন্তু পর্যটন কেন্দ্রের ছবি লাগানোর পেছনের মূল কারণ হল যাতে পর্যটকরা রাজ্যে এসে ত্রিপুরার পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে যায়। তাহলে ত্রিপুরার আয় বৃদ্ধি পাবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন শ্রীদেব। অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রী রামপসাদ পাল, পশ্চিম জেলা সভাধিপতি অন্তরা সরকার সহ দপ্তরের সচিব। অনুষ্ঠানে দপ্তরের ম্যাগাজিন এবং বাৎসরিক ক্যালেন্ডারের উন্মোচন করা হয়।
পাশাপাশি জেলাভিত্তিক সেমিনারে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে দপ্তরের পক্ষ থেকে। সমবায় সপ্তাহ হিসেবে ১৫ নভেম্বর ঊনকোটি জেলায় ফটিকরায়ের নজরুল কলা কেন্দ্রে, ১৬ নভেম্বর উত্তর জেলায় হাফলংয়ের চিন্তালোহর সদন, ১৭ নভেম্বর খোয়াই জেলায় কল্যাণপুরের লোটাস মঞ্চে এবং সিপাহীজলা জলায় চড়িলামে লিলাদেব স্মৃতি কমিউনিটি হল, ১৮ নভেম্বর ধলাই জেলায় সালমা কমিউনিটি হলে, ১৯ গোমতী জেলায় গকুলপুরে পি আর টি আই, ২০ নভেম্বর দক্ষিণ জেলায় মনু বাজার বসুন্ধরা হলে সমবায় সপ্তাহের সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো সমবায়ের মাধ্যমে সমৃদ্ধি। সমবায় সমিতিকে আরো কিভাবে উন্নত করা যায় সেই বিষয়ে সেমিনারে তুলে ধরা হবে। ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক কৃষক, যুবক মহিলারা এতে উপকৃত হবে। রাজ্যের বর্তমান সরকার সমবায় পরিকাঠামো আরও বেশি উন্নত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সমবায় সমিতি এগিয়ে নিয়ে যেতে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা, খোয়াই জেলা এবং সিপাহীজলা জেলার জন্য ৩ টি প্রজেক্ট মঞ্জুর করেছে। এ প্রকল্পের ব্যয় হবে ৩৫ কোটি টাকা। রাজ্যে লকডাউন এর সময় ১৪৩ টি সমবায় সমিতির মাধ্যমে চাষীদের কাছ থেকে তাদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী সহায়ক মূল্য ক্রয় করা হয়। ২০১৮ সালে ৩১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ পর্যন্ত ত্রিপুরা রাজ্য সমবায় ইউনিয়নের মাধ্যমে ২৪৩ টি শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ শিবির করা হয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্য সমবায় ব্যাংক ২০১৮ থেকে তিনটি ভ্রাম্যমান এটিএম, জমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত ব্যবস্থা জন্য প্রয়োজনীয় ই-স্টাম পরিষেবা বিভিন্ন মহকুমা চালু করা হয়েছে।