স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১২ জুলাই : বারোটায় অফিস আসি, দুটোয় টিফিন। তিনটায় যদি দেখি সিগন্যাল গ্রীন, চটিটা গলিয়ে পায়ে নির্দ্বিধায় চেয়ারটা কোনমতে ছাড়ি। কোন কথা না বাড়িয়ে ধীরে ধীরে পা বাড়িয়ে চারটেয় চলে আসি বাড়ি। আমি সরকারি কর্মচারী! আমি আমি সরকারি কর্মচারী! এমনটাই বাস্তবতা নোচিকতার গানে একাংশ সরকারি কর্মচারীর বাস্তবতা প্রকাশ পেয়েছিল। কিন্তু এবার সেই গান পিছে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা। বহু রাত জাগা ঘুম ঘুমাচ্ছেন স্কুলে এসে সেসব গুণী শিক্ষিকারা।
আর ছবি যখন ক্যামেরা বন্দী হয় তখন হতবাক হবেন সেসব শিক্ষিকারা। কারণ মন্ত্রীর বিধানসভায় এলাকায় স্কুলে মধ্যে এসে টিফিন বাটি নিয়ে দিনদুপুরে রাতের ঘুম ঘুমাচ্ছেন শিক্ষিকারা। আর প্রাতঃ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকা দিয়ে চলছে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর পঠন-পাঠন। বিষয়টি মন্ত্রী থেকে শুরু করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সকলে অবগত রয়েছেন। কিন্তু নেই কোন ধরনের উদ্যোগ। গুণগত শিক্ষার নামে এমনই অরাজক পরিস্থিতির অভিযোগ উঠেছে জিরানিয়া স্থিত সংহতি বিদ্যামন্দির উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। স্কুলে স্টাফ রুমে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘুমিয়ে পড়েছেন সেই ছবিও ক্যামেরাবন্দি হয়েছে। কিন্তু এধরনের অরাজক পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছে না ছাত্রছাত্রীরা। স্কুলে এক ছাত্রী জানান, তাদের স্কুল বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। কিছুদিন আগে এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী স্কুলে যান। ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলের সমস্যা সম্পর্কে মন্ত্রী মশাইকে জানান। ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ ছিল প্রাতঃ বিভাগ থেকে একজন শিক্ষককে এনে একাদশ শ্রেণি এবং দ্বাদশ শ্রেণীর ইংরেজি অংক বিজ্ঞান সমস্ত বিষয় পড়াচ্ছেন। এই শিক্ষক মশাইয়ের পড়া ছাত্রছাত্রীরা কিছুই বুঝতে পারছে না। ছাত্র-ছাত্রীরা প্রধান শিক্ষককেও এ বিষয়ে লিখিত দিয়েছে। কিন্তু বারবারই প্রধান শিক্ষক বলেন সেই শিক্ষকই নাকি তাদের ক্লাস করাবে। তাই যেসব শিক্ষক শিক্ষিকা স্কুলে রয়েছেন তারা প্রায়ই দেরিতে আসেন এবং স্কুলে চলে আমোদ প্রমোদের পার্টি। স্কুল পরিচালন কমিটি সেই বিষয়গুলি দেখেও না।
এমনকি এন এস এস -এর দায়িত্বে যে শিক্ষক শিক্ষিকারা রয়েছেন তারাও ছাত্র-ছাত্রীদের গালিগালাজ করেন। কারণ তাদের বক্তব্য সরকারি অর্থ তারা পায় না। নিজেদের পকেটের টাকা ব্যয় করে ছাত্রছাত্রীদের খাবার খাওয়াতে হয়। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো স্কুলে আইকার্ড এবং সিলেবাস বইয়ের জন্য টাকা নেওয়া হলেও, আই কার্ড এবং সিলেবাস পায়না ছাত্র-ছাত্রীরা। গত তিন বছর ধরে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয় না। তারপরও ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার নাম করে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু কাদের পকেটে সেই টাকা ঢুকছে, তা জানেন না ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবক মহল। স্কুলে যে শৌচালয় রয়েছে, এর অবস্থা করুন। অত্যন্ত অপরিষ্কার। জলের অভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা শৌচালয়ে যেতে পারে না। এমনকি এই বিষয়গুলি যাতে কোন মন্ত্রী মহোদয়ের কানে না যায় তার জন্য বারণ করা হয় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পক্ষ থেকে। ফলে ছাত্রছাত্রীরা বুঝে উঠতে পারছে না কার কাছে গেলে এই সমস্যা সমাধান হবে।
এ ধরনের অভিযোগ স্কুলের বিরুদ্ধে কোন নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে এ ধরনের জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে আছে। স্কুলের একাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কোন ধরনের দায় বদ্ধতা নেই বলে এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়। এর পেছনে মূলত রহস্য জড়িয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। আর এটাই রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় হাল হাকিকাত বলে মনে করছে একাংশ।