স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৭ জুন : রাজ্য সফরে এসে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কংগ্রেসের সর্বভারতীয় প্রতিনিধি দলটি মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে যান। মুখ্যমন্ত্রীকে বলা হয়েছে যাতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ব্যবস্থা করা হয়। সোমবার রাজ্য সফরে এসে সংসদীয় টিম মহাকরণে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করার পর প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা জানান কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন মুখ্যমন্ত্রীকে এদিন আরো বলা হয়েছে
কংগ্রেস মাত্র একটি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপরও কেন কংগ্রেসকে নিয়ে এত ভয় পাচ্ছে বিজেপি। নির্বাচনের পরে এত সন্ত্রাসের খবর কি তিনি রাখেন না। মুখ্যমন্ত্রী এইগুলির শোনার পর আশ্বস্ত করেছেন কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের উপর আক্রমণ হলে যেন সাথে সাথে মুখ্যমন্ত্রীকে অবগত করা হয়। তিনি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেছেন সবকিছু তার নিয়ন্ত্রণে নেই। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে সবকিছু আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। আস্তে আস্তে বিজেপির উপর থেকে মানুষের মোহভঙ্গ হচ্ছে। আগামী দিন আরও বেশি মোহভঙ্গ হবে। কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ আরো বেশি উজ্জ্বল হবে। এ ধরনের সন্ত্রাস দিল্লির নির্দেশে ত্রিপুরা রাজ্যে বিজেপি কর্মী সমর্থক করে চলেছে। ত্রিপুরায় কংগ্রেস সরকার গড়ার জন্য কাজ করে যাবে। বিশেষ করে দুদিনে যে আক্রমণ সংঘটিত হয়েছে, সে বিষয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীকে অবগত করা হবে বলে জানান তিনি।
যে প্রধানমন্ত্রীর স্লোগান সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, তার কর্মীরা ত্রিপুরা রাজ্য জুড়ে তান্ডব করছে। কারণ কংগ্রেসের উপর মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। মোদির স্বপ্ন ছিল কংগ্রেস মুক্ত ভারতবর্ষ। কিন্তু তিনি চাইলেও ভারতবর্ষে কংগ্রেস মুক্ত হচ্ছে না। ত্রিপুরা রাজ্যে কংগ্রেসের অস্তিত্বের সংকট দেখা দিয়েছিল, সেই ত্রিপুরায় এখন মানুষ দুহাত ভরে কংগ্রেসের সমর্থন করছে। সদ্য সমাপ্ত উপ নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীকে জয়ী করতে কংগ্রেস প্রার্থী আশীষ কুমার সাহাকে পরাজিত করতে নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে লুটের রাজত্ব তৈরি করেছিল বিজেপি, অন্যতম নজির সৃষ্টি করেছে গোটা দেশে। তার মধ্যেও কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছে মানুষ। তাই কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রাজ্যের মানুষকে অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা জানানো হচ্ছে বলেন তিনি।
এ মুহূর্তে রাজ্য সফরের কোনো পরিকল্পনা ছিল না কংগ্রেস নেতৃত্বদের। কিন্তু উপ নির্বাচনের আগে এবং পরে রাজনৈতিক সন্ত্রাস চলছে। সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা, বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন সহ কর্মী সমর্থকরা। সন্ত্রাসের বিষয়ে অবগত হয়ে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী বিচলিত হন। তিনি নির্দেশ দেন ত্রিপুরার এসে কংগ্রেস কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে। প্রদেশ কংগ্রেস ভবনের বিপরীতে পুলিশের থানা রয়েছে। কিন্তু তারপরও প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে আক্রমণ করছে বিজেপির দুর্বৃত্তরা। থানার সামনে যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে তাহলে মানুষের নিরাপত্তা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অধির রঞ্জন চৌধুরী।
প্রতিনিধিদলটি হাসপাতাল গিয়ে আহত কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের সাথে দেখা করেছেন। সঠিক চিকিৎসা যাতে হয় তার জন্য চিকিৎসকদের সাথে কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা এবং প্রদেশ কংগ্রেস ভবনের সামনে ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যবসায়ীর সাথে দেখা করে তাদের খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে। বিজেপি এই ধরনের প্রাণনাশক হামলার তীব্র নিন্দা জানায় কংগ্রেস।
এ ধরনের সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে কংগ্রেসকে রুখতে পারবে না বলে জানান তিনি। আরো বলেন মানুষ জাগ্রত হতে শুরু করেছে। কংগ্রেসের ওপর বিজেপির বিকল্প দেখতে শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রীকে বলা হয়েছে ত্রিপুরার মানুষ শান্তিতে বাস করতে চায়। ভয় আতঙ্ক এগুলি যেন অবিলম্বে বন্ধ করা হয়। উপনির্বাচনে শুধু সুদীপ রায় বর্মনকে দিয়ে কংগ্রেসের ট্রেইলার দেখেছে বিজেপি। পিকচার দেখবে আগামী ২০২৩ -এর নির্বাচনে বলে জানান লোকসভার পরিষদীয় দলের উপনেতা গৌরভ গগই।
মুখ্যমন্ত্রীকে বলা হয়েছে তিনি শুধু বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী নয়। তিনি পুরো রাজ্যবাসীর মুখ্যমন্ত্রী। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সন্ত্রাস সংগঠিত হয়েছে প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। নিরপেক্ষভাবে পুলিশকে মামলা হাতে নিয়ে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এমনটিই দাবি জানানো হয়েছে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলে জানান কংগ্রেস নেতা নাসির হুসেন।
এদিন আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন, সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সম্পাদিকা জারিতা লাইফ্রাং ও প্রদেশ কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক অজয় কুমার।