স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ২৫ মে : চরম গাফিলতিতে মৃত্যু হল তিন মাসের শিশু কন্যার। ঘটনা কৈলাসহরের আর.জি.এম মহকুমা হাসপাতালে। পরিবারের অভিযোগ কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কাছ থেকে সঠিকভাবে চিকিৎসা পরিষেবা পায়নি শিশুটি।
জানা যায়, কুমারঘাট মহকুমা অধীন সায়দার পাড় গ্রামের দেব পাড়ার বাসিন্দা উজ্জ্বল দাসের তিন মাসের শিশু কন্যা অসুস্থ হওয়ায় গত ২৩ মে চিকিৎসার জন্য কৈলাসহরে নিয়ে আসেন। সেদিন রাতে আর জি এম মহকুমা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৩ মাসের শিশু দিব্যা দাসকে। পরিবারের বক্তব্য শনিবার বিকেল পর্যন্ত শিশুর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। শনিবার রাত থেকে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং দায়িত্বে থাকা সিস্টারদের জানানোর পরেও শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ফোন করা হয়নি। রবিবার সকালে যখন শিশুটি শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়, তখন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ফোন দেওয়া হয়, তিনি হাসপাতালে এসে দু-ঘন্টা চেষ্টা করার পরও শিশুটিকে বাঁচাতে পারেন নি।
শিশু মৃত্যুর ঘটনায় সব থেকে চাঞ্চল্যকর যে বিষয়টি সামনে উঠে এসেছে সেটা হল, তিন মাসের অসুস্থ শিশুকে নিয়ে পরিবারের লোক শুক্রবার বিকেলে কুমারঘাট থেকে প্রথমে কৈলাসহর স্বস্তি নার্সিংহোমে শিশু চিকিৎসক সঞ্জনা ঘোষকে দেখায়, তিনি শিশুটিকে নার্সিংহোমে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে পরিবারের লোক নার্সিংহোমে ভর্তি করানোর অক্ষমতা প্রকাশ করে অসুস্থ শিশুটিকে নিয়ে ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে ছুটে যান। পরিবারের অভিযোগ ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে শিশুটিকে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক দেখার পর ভর্তি করে জেলা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সঞ্জনা ঘোষকে ফোন দিলে তিনি এই শিশুটির চিকিৎসা না করে জিবি হাসপাতালে রেফার করে দেওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তী সময়ে তারা আর জি এম মহকুমা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। নিজের নার্সিংহোমে চিকিৎসা না করানোর কারণেই কি পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও এই শিশুকে জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা দিলেন না শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সঞ্জনা ঘোষ এটাই হচ্ছে সবচাইতে বড় প্রশ্ন। এদিকে ঘটনার ব্যাপারে আর জি এম মহকুমা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন শিশুটির মা শারীরিক জটিল পরিস্থিতিতে শিশুটিকে জন্ম দেয়। তাছাড়া শিশুটির জন্মগত ত্রুটি ছিল, একই সাথে অপুষ্টি জনিত কারনে ভুগছিল, তিন মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের ওজন বৃদ্ধি পায়নি। এই তিন মাস সময়ে শিশুটিকে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখায়নি পরিবারের লোকেরা। শুক্রবার রাতে যখন শিশুটিকে আর জি এম মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তখন শিশুটিকে প্রয়োজনীয় ঔষধ দেওয়ার পাশাপাশি পরিবারের লোককে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যেন শিশুটিকে আলাদা দুধ খাওয়ানো না হয়। কিন্তু পরিবারের লোকরা চিকিৎসকের পরামর্শ না মেনে শিশুকে বারবার আলাদা দুধ খাওয়ায়, ফলে জটিলতা সৃষ্টি হয়। পরিবারের লোকেরা যদি চিকিৎসকদের পরামর্শ শুনতো তাহলে আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না বলে জানান আর জি এম মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক। এই ঘটনায় হাসপাতাল চত্বরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। মৃত শিশুর পরিবার সরাসরি চিকিৎসকের গাফিলতির দিকেই আঙ্গুল তুললেন। কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবারের লোকজন।