স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ২৫ মে : ত্রিপুরার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুরবস্থা এবার যেন ট্র্যাজেডি নয়, সোজা কমেডি! জেলার প্রাণকেন্দ্রের সরকারি হাসপাতাল থেকে রেফার করা রোগীকে অক্সিজেন দিতে না পেরে অ্যাম্বুলেন্স চালক চম্পট দিলেন। ঘটনা বাবুর বাজার এলাকায়। ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স থেকেও নেই। যান দুর্ঘটনায় আহত রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আগরতলায় রেফার করলেও অ্যাম্বুলেন্স চালকের জন্য নাস্তানাবুদ হতে হয় রোগীর পরিবারকে। জানা যায়, একটি যানবাহন দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন এক মহিলা।
নাম মর্তেজা বেগম। আহত মহিলা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রেফার করা হয় আগরতলা জিবি হাসপাতালে। তারপর রোগীকে তোলা হল অ্যাম্বুলেন্সে। চালকও যথাসময়ে হাজির। কিন্তু গাড়িতে উঠেই দেখা গেল রোগীর শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ছিলেন না কোন স্বাস্থ্যকর্মী। চালকও অক্সিজেন দিতে জানেন না! আধঘণ্টা ধরে হাবুডুবু খেয়ে শেষে তিনি অকপটে জানালেন, “আমি নতুন, আমাকে কেউ শেখায় নি!” তারপর চালক অ্যাম্বুলেন্স ফেলে রেখে চলে গেলেন। রোগীর অবস্থা তখন আরও সংকটজনক। রোগীর পরিবার বাধ্য হয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক এবং নার্সদের ডাকেন। অথচ কেউ আসতে রাজি হয়নি। তারা বলেন হাসপাতাল এবং এম্বুলেন্স পৃথক দপ্তরের। সুতরাং তারা আসতে পারবে না। অ্যাম্বুলেন্স এর ভেতর ছিল না কোন অক্সিজেনের ব্যবস্থাও। শেষ পর্যন্ত রোগীকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে নিতে বাধ্য হয় রোগীর পরিবার।
শেষ পর্যন্ত রোগীর পরিবার বাধ্য হয়ে একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ডাকে। তাঁরা রোগীকে আগরতলা নিয়ে গেলেন। এদিকে প্রশ্ন উঠছে—এই যদি হয় জেলা হাসপাতালের দশা, তাহলে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কী হয়? সেখানে কি অ্যাম্বুলেন্স চালকরা গুগল ঘেঁটে অক্সিজেন ব্যবহার শেখেন? না কি রোগীর পরিবারকে ইউটিউবে টিউটোরিয়াল খুঁজতে হয়? সবশেষে বলতেই হয়—ত্রিপুরার স্বাস্থ্যব্যবস্থা আর “জীবনদায়ী পরিষেবা” এখন পরিণত হয়েছে এক ব্যঙ্গচিত্রে! যেখানে রোগীকে বাঁচাতে চালকের কাছে দরকার প্রশিক্ষণ নয়, অলৌকিক শক্তি! এদিকে অ্যাম্বুলেন্স এর মধ্যে কোন স্বাস্থ্যকর্মী না থাকার বিষয়টি নিয়েও রীতিমতো গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একজন স্বাস্থ্যকর্মী থাকেন। রোগীর অবস্থা বেশি আশঙ্কা জনক হলে সেই স্বাস্থ্যকর্মী প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। অথচ এই পরিষেবা ছিল না এদিন অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর।