স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ৬ মে : কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক পক্ষ থেকে যুদ্ধকালীন মহড়ার জন্য বেছে নেওয়া হলো রাজ্যের ভারত – বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী শহর আগরতলাকে। পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর ভারত – পাকিস্তানের মধ্যে চলছে টানটান পরিস্থিতি। এর মধ্যে ঢাকা এবং ইসলামাবাদের মধ্যে হয়েছে বন্ধুত্ব। তাই পাকিস্তানকে বাংলাদেশ সহযোগিতা করবে বলে ধারণা করছে দিল্লি। যার কারণে দিল্লি কূটনৈতিকভাবে লড়াই করার পাশাপাশি সব ধরনের প্রস্তুতি সেরে নিতে চাইছে। জানা যায়, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কী করা যাবে, আর কী করা যাবে না, সাধারণ নাগরিকদের সচেতনতার পাঠ দিতে দেশ জুড়ে অসামরিক মহড়া হতে চলেছে বুধবার। দেশের ২৭ টি রাজ্য এবং আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ২৫৯ টি জায়গায় এই মহড়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
তালিকায় রয়েছে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা। কারণ ইসলামাবাদ এবং ঢাকার মধ্যে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে তাতে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়েও সরকারের চিন্তা রয়েছে। তাই ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী শহর আগরতলাতে পুরোপুরি নিরাপত্তা দিতে সরকার মহড়া থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজকর্ম সেরে নিতে চায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এই প্রথম দেশজুড়ে এমন অসামরিক মহড়া হতে চলেছে। দেশের সব রাজ্যকে পাঠানো নির্দেশে মূলত বিমান হামলা হলে কী ধরনের পদক্ষেপ করতে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যগুলিকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, আগামী বুধবারের মহড়ায় খতিয়ে দেখে নিতে হবে যে, বিমান হামলার সময়ে সতর্কতামূলক সাইরেন ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে কি না।
পাশাপাশি রাতে হামলার ক্ষেত্রে যুদ্ধবিমানের খবর পাওয়া মাত্র যাতে হঠাৎ করে সমস্ত আলো নিভিয়ে দিয়ে ‘ক্র্যাশ ব্ল্যাকআউট’ করে শত্রু বিমানবাহিনীকে বিভ্রান্ত করে দেওয়া যায়, তারও মহড়া সেরে রাখতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার আবহে সম্ভাব্য হামলা থেকে যথাসম্ভব ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন, সেতু, তেলের ডিপো, রেলস্টেশন বা বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো আগে থেকেই ঢেকে দেওয়া বা সেগুলিকে যথাসম্ভব লুকিয়ে ফেলার প্রস্তুতিও সেরে রাখতে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে মোদী সরকার।
এ ছাড়া সিভিল ডিফেন্স বা অসামরিক প্রতিরক্ষা প্রোটোকল সম্পর্কে নাগরিক ও পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, হামলার সময়ে বা জরুরি অবস্থায় নাগরিকদের যথাসম্ভব সমন্বয় রেখে দ্রুততার সঙ্গে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার প্রশ্নে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা বানিয়ে তা অভ্যাস করে রাখতেও বলা হয়েছে রাজ্যগুলিকে। এ জন্য জেলাশাসক, অসামরিক প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবক, হোমগার্ডদের সঙ্গে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছে। তবে ইসলামাবাদ এবং ঢাকা বন্ধুত্ব হওয়ার পর উদ্বেগ বেড়েছে উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলির জন্য। কারণ বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানকে সার্বিক সহযোগিতা করতে পারে বলে মনে করছে অনেকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্র অনুযায়ী, পাকিস্তানের আইএসআই জঙ্গি বাহিনী ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশে। গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগাওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনার পর পাকিস্তানের আইএসআই জঙ্গি গোষ্ঠীর ১০ জন সদস্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে ব্যবহার করে উত্তর-পূর্ব ভারতে আক্রমণ করার ব্ল্যাক প্রিন্ট তৈরি করছে।
সর্বভারতীয় ওই সংবাদমাধ্যম কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্র ধরে দাবি করেছে, ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর রিপোর্ট অনুযায়ী ঢাকা বিমানবন্দর থেকে আইএসআইয়ের ৫ জঙ্গি চট্টগ্রামে ঘাঁটি গেড়েছে আর ৫ জঙ্গি ঘাঁটি গেড়েছে ঘাগড়াছড়িতে। উল্লেখ্য গত বছরের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশে চলছে ইউনুস সরকার। ইউনুস সরকারের আমলে বাংলাদেশে বর্তমানে রাজত্ব কায়েম রেখেছে মৌলবাদীদের কট্টরপন্থীরা। সূত্রের খবর এই কট্টরপন্থীরা মদত জোগাচ্ছে আইএসআই জঙ্গিদের। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর গত বছর ডিসেম্বর মাসে প্রথম বারের মত বাংলাদেশ সফরে এসেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ দুই আধিকারিক। এই তথ্য রয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও। যা ভারত সরকার মোটেও ভালো চোখে নেয় নি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্র অনুযায়ী একটা বিষয় স্পষ্ট পাকিস্তান ভারতের মাটিতে জঙ্গি কার্যকলাপ অব্যাহত রাখতে চাইছে এখন বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে কাজে লাগিয়ে। যার কারণে পেহেলগাওয়ে জঙ্গি হামলার পর আইএসসি জঙ্গি গোষ্ঠী বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে ব্যবহার করে উত্তর-পূর্ব ভারতে আক্রমণ শানাতে পারে এমন আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
যার কারণে ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোকে চরম সতর্কতা জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বাংলাদেশের তিন দিক থেকে বেষ্টিত হওয়ার কারণে স্বাভাবিক ভাবেই ত্রিপুরাকে করিডোর হিসেবে ব্যবহার করার জন্য স্ক্যানিং করে নিয়েছে আইএসআই জঙ্গি সংগঠন। এই বিষয়টাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যার কারণে ত্রিপুরায় ভারতীয় সীমান্ত মুড়ে দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার বেস্টনিতে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্য সহ ত্রিপুরায় প্রতিদিন বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী ধরা দিচ্ছে পুলিশের জালে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী রাজ্য হওয়ার সুবাদে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যাটা ত্রিপুরাতেই বেশি। যা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছেও উদ্বেগের কারণ। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মহড়ায় উপস্থিত থাকবেন জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, বিদ্যুৎ বিভাগের আধিকারিক, দমকল কর্মী, পুলিশ, সিভিল ডিফেন্স, হোম গার্ড, চিকিৎসক, নার্স সহ বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা।