গ্যাংটক, ২৬ এপ্রিল — বিদ্যুৎ খাতে সংস্কারের জোয়ারে ত্রিপুরা ফের একবার দেশের মধ্যে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করল। শনিবার সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে অনুষ্ঠিত উত্তর-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিদ্যুৎ মন্ত্রীদের সম্মেলনে রাজ্যের স্মার্ট মিটার ব্যবস্থাপনা, সৌর শক্তির ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ বিতরণে আধুনিকীকরণ প্রকল্পে অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।
এই উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে পৌরহিত্যে ছিলেন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ, আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী মনোহর লাল। সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং ও উত্তর-পূর্ব ও পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রীরা। ত্রিপুরা থেকে অংশ নেয় রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল, যার সদস্য ছিলেন বিদ্যুৎ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব উদয়ন সিনহা, ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ বিভাগ লিমিটেডের-এর ব্যবস্থাপক অধিকর্তা বিশ্বজিৎ বসু, অর্থ অধিকর্তা সর্বজিত সিং ডোগরা এবং বিদ্যুৎ পরিবহন নিগমের জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন দেববর্মা।
সম্মেলনে ভাষণ প্রদানকালে রতন লাল নাথ বলেন, “ত্রিপুরা শুধু পরিসংখ্যান নয়, বাস্তবেও বিদ্যুৎ খাতে এক বিপ্লব ঘটাচ্ছে। পরিকল্পিত রূপায়ণ, প্রযুক্তি-নির্ভর ব্যবস্থাপনা ও একনিষ্ঠ পরিশ্রমই আমাদের এই সাফল্যের চাবিকাঠি।” তিনি তুলে ধরেন যে, ত্রিপুরা বর্তমানে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে স্মার্ট মিটার স্থাপনে প্রথম এবং গোটা দেশে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণে RDSS প্রকল্পের অধীনে রাজ্যের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্যভাবে দেশের মানচিত্রে নজর কেড়েছে।
তিনি জানান, AT&C ক্ষতির হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে রাজ্যে, যা বিদ্যুৎ ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং দক্ষতার প্রমাণ। রতন বাবু বলেন, “এই ফলাফল পরিকল্পনার ফল, কাকতালীয় কিছু নয়।”
ত্রিপুরার স্মার্ট মিটার স্থাপন প্রকল্পকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনোহর লাল “অনুকরণীয়” বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, “ত্রিপুরা অন্য রাজ্যগুলোর জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।”
শ্রী নাথ বলেন, “এই সম্মেলন শুধু একটা প্রশাসনিক বৈঠক নয়, এটি জনমুখী ও বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণের এক গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।” তিনি উল্লেখ করেন, গ্রীষ্মকালে রাজ্যের বিদ্যুৎ চাহিদা ৩৭০ মেগাওয়াট, কিন্তু ইতিমধ্যেই ৩৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে, যার ফলে কোনো লোডশেডিংয়ের সম্ভাবনা নেই।
সম্মেলনে ত্রিপুরার পক্ষ থেকে ১৩৩১.২৬ কোটি টাকার একটি বৃহৎ বিদ্যুৎ পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়, যার বাস্তবায়ন প্রস্তাবিত ২০৩১-৩২ সালের মধ্যে। এই প্রকল্পে নতুন ট্রান্সমিশন লাইন, সাবস্টেশন এবং পুরনো পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ অন্তর্ভুক্ত। শ্রী নাথ এই প্রকল্পের সম্পূর্ণ অর্থ কেন্দ্রীয় অনুদানে বাস্তবায়নের দাবি জানান।
সৌর শক্তির ব্যবহারেও ত্রিপুরা পিছিয়ে নেই। মন্ত্রী বলেন, “আমরা শুধু প্রচলিত জ্বালানির উপর নির্ভর করছি না, বরং পরিবেশবান্ধব শক্তি ব্যবহারে এগিয়ে চলেছি।” তিনি জানান, রাজ্যে একাধিক সৌর প্রকল্প চালু হয়েছে যা ভবিষ্যতের টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে তুলবে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনোহর লাল এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “ত্রিপুরা ভারতের নবায়নযোগ্য শক্তির দিশায় একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে।”
সম্মেলনের পুরো সময় জুড়ে রতন লাল নাথ নিজেকে তুলে ধরেন একজন দক্ষ, দূরদর্শী ও বাস্তবভিত্তিক নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে। তিনি বলেন, “আমরা শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের জন্যও কাজ করছি—একটি স্মার্ট, সবুজ এবং দুর্যোগ-প্রতিরোধী বিদ্যুৎ অবকাঠামো গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।”
ত্রিপুরা বিদ্যুৎ খাতে যে নজরকাড়া অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত নয়—এটি এক নেতৃত্বনির্ভর অভিযানের ফল। গ্যাংটকে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন শুধু আঞ্চলিক সহযোগিতার এক মঞ্চ নয়, বরং ত্রিপুরার বিদ্যুৎ উন্নয়নের নতুন অধ্যায়ের সূচনাও বটে।