স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৭ এপ্রিল : বিজেপি’র ৪৯ মাস চলছে। আর ১১ মাস পর তাদের বা তার আগেও বিজেপি’র বিধানসভা নির্বাচনে জনগণের সামনে পরীক্ষা দিতে হবে। কিন্তু পরীক্ষার আগে শাসকদল ভদ্র, জনকল্যাণমুখী, গণতান্ত্রিক, জনদরদি এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, আরো সহানুভূতিশীল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা না হয়ে সর্বত্র বেপরোয়াভাবে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। আর এটা কোন অন্ধকারে ঢিল ছোড়া নয়।
নিজেদের পতাকা এবং লাঠিসোটা নিয়ে দা হাতে নিয়ে বিরোধী দল সিপিআইএম -কে বাধা দিচ্ছে। এর তীব্র নিন্দা জানায় সিপিআইএম। বুধবার সিপিআইএম রাজ্য কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে একথা বলেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী। পাশাপাশি তিনি আরো বলেন বর্তমানে রাজ্যের সাধারণ ডিগ্রি কলেজ গুলির মধ্যে প্রিন্সিপালের মাধ্যমে জোর করে ছাত্র-ছাত্রীদের মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য শোনানো হচ্ছে। এবার ছাত্র-ছাত্রীদের আরও বলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর পরীক্ষা পে চর্চা, মন কি বাত, প্রধানমন্ত্রীর টুইট, মুখ্যমন্ত্রীর টুইট দেখার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এগুলি ছাত্র-ছাত্রীরা দেখতে চাইছে না। প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর টুইট হলো অসত্য ভরা, লোক ঠকানো এবং এ দেশের মানুষকে কিভাবে প্রলোভিত করা যায় তার জন্য মস্তিষ্ক বিকৃত করা হচ্ছে বলে কটাক্ষ করেন জিতেন্দ্র চৌধুরী। রাজ্যে হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী নেই।
কিন্তু এ এন এম, জি এন এম সহ নার্সিং কোর্স পড়ে বেকার বসে আছেন যুবক যুবতীরা। শূন্যপদ থাকার পরও তাদের নিয়োগ করা হচ্ছে না। এমনকি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠার পর বলেছেন ত্রিপুরায় শিক্ষকতার চাকরি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে টেট উত্তীর্ণ যুবক-যুবতীরা নেই। কিন্তু এখন টেট উত্তীর্ণ হয়ে বহু বেকার যুবক-যুবতী চাকরির দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু তাদের নিয়োগ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেন তিনি। এবছর এখনো এমন কোন কালবৈশাখী ঝড় এখনো হয়নি। কিন্তু দেখা গেছে দীর্ঘ ১৫ দিন, কুড়ি দিন যাবত বহু এলাকায় কালবৈশাখী ঝড়ের জন্য বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কিন্তু পূর্ব এই ধরনের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন কালবৈশাখী ঝড়ে হয়েছে, তবে তিন চার ঘন্টার অধিক সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকে নি এলাকা। এবং বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পানীয় জলের। মানুষ পানীয় জলের দাবিতে জাতীয় সড়ক দখল করছে প্রতিদিন। আর মন্ত্রী বাহাদুর মহাকরণ থেকে বলেছেন মিশন মুডে কাজ হচ্ছে। আসলে মিশন মুডে মানুষের অর্থ গায়েব করা হচ্ছে, উন্নয়নের টাকা অন্যদিকে পরিচালনা করা, মানুষের অধিকার হরণ করা হচ্ছে, চাকরির প্রত্যাশিত যুবক-যুবতীদের অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, যার ফলশ্রুতি বর্তমানে রাজ্যের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। যদিও এটা বাঞ্ছনীয় নয়। রাজ্যের শাসক দল নেতাদের দিয়ে গাঁজা চাষ এবং নেশা সামগ্রী পাচার করা হচ্ছে। আসলে নেশায় ভাসছে ত্রিপুরা রাজ্য। এর জন্য বিজেপি সরকারের নীতি দায়ী। তাদের অপদার্থতা এবং কার্যকলাপ দায়ী বলে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন তিনি। সকলকে সতর্ক হওয়া দরকার । গত চার বছরে কোনো কাজ হয়নি রাজ্যে, শুধুমাত্র রং – এর প্রলেপ দেওয়া ও পুরনো সাইনবোর্ড খুলে মধ্যে সাইনবোর্ড লাগানো কাজ করেছে।
আর মন্ত্রীদের ছবি ঝুলিয়ে আজব স্কিম নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাই মানুষ অতিষ্ট। তাই বিরোধীরা যাতে কথা বলতে না পারে, কোন কর্মসূচি গ্রহণ করতে না পারে তার জন্য পুলিশকে সাথে নিয়ে আজকেও তেলিয়ামুড়া মোহড়ছড়া বাধা সৃষ্টি করেছে। যদিও এটা তাদের পরিকল্পিত। গত কয়েকদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল এলাকার বিধায়ক পিনাকী চৌধুরী কর্মীদের নিয়ে সিপিআইএমের সভা বানচাল করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছেন। তাই আজকে তারা এলাকায় কিছু মানুষকে রেগা কাজ আটকানোর ভয় দেখিয়ে মানুষকে প্রভাবিত করে সিপিআইএমের কর্মসূচি বানচাল করেছে বলে অভিযোগ তুলে জিতেন্দ্র চৌধুরী। এদিন সিপিএমের কর্মসূচিতে বাধা দিতে বহু সমাজদ্রোহীদের বিভিন্ন জায়গা থেকে এনে বানচাল করেছে। এ বিষয়ে গত কয়েকদিন আগে আইজি -কে অবগত করা হয়েছিল।
কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি। বুধবার সেটাই হয়েছে। বুধবার তেলিয়ামুড়া মোহড়ছড়ায় সিপিআইএম -এর কর্মসূচি বানচাল করতে গুন্ডা বাহিনী মাঠে নামিয়ে দিয়েছে বিজেপি। আর যারা এদের গুন্ডামি করেছে তাদের না আজকে সিপিআইএমকে জলকামান দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেছে পুলিশ। দেশের রাষ্ট্রপতি দলটি একনায়কতন্ত্র চালাতে চাইছে। অন্য কোন দল তাদের মিছিল-মিটিং এবং কর্মসূচি করতে পারছে না। গায়ের জোরে তারা আটকাতে চাইছে। আর সেই রাষ্ট্রবাদী দলে কর্মীরা যাতে মার না খায় তার জন্য পুলিশ তাদের সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। এদিন স্বচ্ছ ভারত অভিযানের নাম করে বানচাল করেছে সি পি আই এম-এর কর্মসূচি। পরবর্তী সময় ছোট পরিসরে রাস্তার উপরে কর্মসূচি করে যখন বাড়ি ফিরছিল তখন বাজারে চারজন সিপিআইএম কর্মী-সমর্থককে মারধোর করে বিজেপির গুন্ডারা। পরবর্তী সময়ে তাদের চিকিৎসার জন্য তেলিয়ামুড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আর এটাই ত্রিপুরা রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার চিত্র। তাই সিপিআইএম আজকে রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে বলতে চায় এভাবে চলতে থাকলে রাজ্যের মানুষ গণতন্ত্র এবং আইন-শৃঙ্খলা উপর থেকে আস্থা হারাবে। নিজের হাতে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার অধিকার বহন করবে। তখন সামাল দেওয়া যাবে না। মানুষ তৈরি হচ্ছে বলে জানান তিনি।