স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা। ৮ মার্চ : রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির দ্বিতীয় সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে প্রতিশ্রুতির খেলাপ করেছে বলে অভিযোগ তুলে কাঠগড়ায় তুললেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী। তিনি ত্রিপুরা বিধানসভায় বসে শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, তিপরা মথা আগেও পরোক্ষভাবে বিজেপির সাথে ছিল। বর্তমানে তারা প্রত্যক্ষভাবে সরকারের সাথে জোটে এসেছে। তাই বিজেপি, আই পি এফ টি এবং তিপরা মথা একইদল। গত সাত বছর কিংবা দ্বিতীয় মেয়াদের প্রতিশ্রুতি খেলাপ, অপপ্রশাসন, দুর্নীতি এবং নৈরাজ্যের দুইবছর। বিশেষ করে ত্রিপুরা গত দু বছরে ডাক্তার মানিক সাহার নেতৃত্বে দুর্নীতির মহাকুম্ভ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।
২০১৮ সালে সরকারে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় এই বিজেপি রাজ্যের মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রথম বছরই ৫০ হাজার চাকরি, আর পরে চার বছরে ছয় থেকে সাত লক্ষ চাকরি দেওয়া হবে। অথচ গত বিধানসভা অধিবেশনে তথ্য দিয়েছে গত সাত বছরে রাজ্যের মধ্যে অবসরে গেছেন এবং বিভিন্ন কারণে চাকরি চলে গেছে ৫০ হাজারের অধিক। দ্বিতীয় বলেছিল, প্রথম মন্ত্রী সভাতেই সিদ্ধান্ত হবে টুয়েপ ও রেগার মজুরি ৩৪০ টাকা এবং ২০০ শ্রম দিবস করা হবে। এবং এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বর্তমান মোদি মন্ত্রী সভার দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব তথা তৎকালীন বিজেপি -র সভাপতি অমিত শাহ। বর্তমানে ৪০ দিনও কাজ পায় না শ্রমিকরা। এবং মজুরির জন্য তিন থেকে চার মাস মজুরি পায় না। বর্তমানে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। আরো আশ্বস্ত করেছিল প্রথম মন্ত্রী সভাতে সপ্তম বেতন কমিশন ঘোষণা করা হবে। আরো বলেছিল চার বছর আগে থেকেই এই বেতন কমিশন কার্যকর হবে। যৎসামান্য বাড়িয়েছে। যা পূর্বের সরকারের সময় প্রতিবছর স্বাভাবিকভাবে বাড়ত। নির্বাচনের আগে আরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ডি.আর.ডব্লিউ, পাম্প অপারেটর, মিড ডে মিল সহ যারা অনিয়মিত কর্মচারী আছেন তাদের নিয়মিত করা হবে। এবং ত্রিপুরার ডিকশনারি থেকে অনিয়মিত কর্মচারীর শব্দ মুছে ফেলা হবে। বর্তমানে তাদের যখন জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে তখন তারা কুৎসা রটিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে চলেছে।
অথচ বামফ্রন্ট সরকারের সময় অর্থ দপ্তর দ্বারা অনুমোদন নিয়ে দশ বছর হলেই নিয়মিত চাকরি হয়ে যেত। অন্যতম দাবি ছিল ১০,৩২৩ শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিয়ে। তাদের চাকুরি কোনোভাবেই হারাতে হবে না। সংবিধান সংশোধন করে তাদের চাকরি যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। এছাড়া বিশেষ দাবি ছিল এইমস ধাঁচে রাজ্যে একটি হাসপাতাল তৈরি করা হবে। এর জন্য বড় অংক মঞ্জুর হয়ে গেছে। বোধজং নগরে আড়াই একর জমি দেওয়া হয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত এই প্রতিশ্রুতিও পালন হয়নি। এর সুবাদে বিরোধী দলনেতার প্রশ্ন যে টাকা মঞ্জুর হয়েছিল সে টাকা কোথায় গেছে? আরো বলেছিলেন আমবাসাতে একটি মেডিকেল কলেজ করা হবে। এর জন্য আমবাসায় জমি নির্ধারিত করা হয়েছিল। আরো বলেছিল ত্রিপুরার উন্নতির জন্য চিটাগাং বন্দর থেকে উদয়পুর পর্যন্ত জাহাজে পণ্য আনা হবে। এতে রাজ্যের বহু টাকা সাশ্রয় হবে। এগুলি আজ বিজেপি উচ্চারণ করে না। এটাই হলো গত সাত বছরে বিজেপির বিকাশের নমুনা। এবং এর জবাব আগামী কাল স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে দেবেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা সংসদ জেপি নাড্ডা, মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা, প্রদেশ বিজেপি সভাপতি রাজিব ভট্টাচার্য। তিনি আরো বলেন আগে ভারতীয় জনতা পার্টিকে ফ্যাসিস্ট সুলভ বলা হতো। এখন এ আর এস এস বিজেপিকে বলা হচ্ছে নয়া ফ্যাসিস্ট। এভাবেই ভারতীয় জনতা পার্টির সরকারকে দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে এক হাত নিলেন বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী। আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এদিন এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক নারায়ণ সরকার এবং সুদীপ সরকার।