স্যন্দন প্রতিনিধি। আগরতলা। ২৩ জানুয়ারি : বৃহস্পতিবার আগরতলা নেতাজি সুভাষ বিদ্যানিকেতনের উদ্যোগে স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৯ তম জন্ম জয়ন্তী যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করা হয়। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা। তারপর নেতাজি সুভাষ বিদ্যানিকেতনের সামনে থেকে এক বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। নেতাজি সুভাষ বিদ্যানিকেতনের উদ্যোগে আয়োজিত এইদিনের বর্নাঢ্য শোভা যাত্রায় বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে অংশগ্রহণ করে। এই সুসজ্জিত শোভা যাত্রার মধ্যমে বিভিন্ন থিম তুলে ধরা হয়।
উল্লেখযোগ্য থিম গুলির মধ্যে রয়েছে, অগ্রগতির লক্ষ্যে ভারত, জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত জালিয়াত খেলছ জুয়া, সাহিত্যে চলচ্চিত্রে আজও আসর গুপি বাঘা ও ভূতের বর, বঙ্গ সংস্কৃতির অন্তরালে বহুরূপী আজও কথা বলে, সবুজায়ন, রিদম অব্ ইউনিভার্স, বীর সেনানী গোপাল পাঁঠা, জাগো নারী, ঘুরে দাঁড়াও, করো এবার প্রতিবাদ, নবান্নের আনন্দে মাতোয়ারা অহমিয়া রমণীরা ইত্যাদি। শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার আগে অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আজ এই বিশেষ দিনে সকলকে শুভেচ্ছা। দেশ স্বাধীন করার জন্য যার নাম সর্ব প্রথমে নিতে হয় তিনি হলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। দেশ স্বাধীন করার জন্য তিনি ছিলেন একজন কিংবদন্তি নেতা। দেশ স্বাধীন করার জন্য এমন উজ্জল চরিত্র খুব কম রয়েছেন।

এবং তিনি যেভাবে কাজ করে গেছেন তাতে বলা যায় দেশবাসীর অন্তরে তিনি একটি স্থান অধিকার করে রয়েছেন। ব্রিটিশরা বহুবার তাকে কারারুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু কোথাও তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি। তার এই বীরগাঁথা সকলে অবগত রয়েছেন। নতুন প্রজন্মকে আরো বেশি অবগত করতে হবে। সুতরাং এই দিন নেতার সম্পর্কে যত বেশি অবগত হওয়া যাবে ততই দেশ এগিয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সম্পর্কে তুলে ধরে আরো বলেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভারত বর্ষ থেকে ব্রিটিশদের তাড়াতে চেষ্টা করেছিলেন। এর জন্য তিনি জাপানে আজাদ হিন্দ ফৌজ পুনঃ গঠন করেছিলেন। বলতে গেলে জাপানে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে ভারতবর্ষে প্রথম সরকার গঠন হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত লাহোরে কংগ্রেসের যে ঐতিহাসিক অধিবেশন ছিল সেখানে বাধ্য হয়ে কংগ্রেস পূর্ণ স্বরাজ মতবাদ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যখন ভারত বর্ষ থেকে ব্রিটিশকে বিতাড়িত করার জন্য চেষ্টা করছিলেন তখন কিছু নেতা এবং কিছু দলের লোক কি বলেছিল সেটা সবাই জানে। আর বলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র যুবসমাজের কাছে অনুপ্রেরণা। নেতাজি সুভাষচন্দ্রকে আরও বেশি উপলব্ধি করার প্রয়োজন। এ দিনের আয়োজিত অনুষ্ঠান সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগরতলায় ১৯৪৮ সালে নেতাজি সুভাষ বিদ্যানিকেতন স্থাপিত হয়েছিল। এই বিদ্যালয় স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য ছিল, যারা উদ্বাস্তু রয়েছে তাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা। শিক্ষার্থীদের সত্যিকার অর্থে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাও বিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য ছিল। পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের চরিত্র গঠনে দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল এই স্কুলে। বর্তমানেও এই বিদ্যালয় অত্যন্ত সুনামের সাথে পরিচালনা হচ্ছে। সুশৃংখলভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন গঠন করা হচ্ছে। এই বিদ্যালয় থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বহু ছাত্র-ছাত্রী আজ দেশ-বিদেশে রয়েছেন। শিক্ষা ও ক্রীড়া সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় স্তরে এবং রাজ্য স্তরে সুনাম অর্জন করেছে এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে যথাযথ সম্মান দেওয়ার জন্য ১৯৫১ সাল থেকে প্রতি বছর সুসজ্জিত শোভাযাত্রা পালন করে আসছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করার চেষ্টা করেছেন। আন্দামান নিকোবর ও পোট ব্লেয়ারে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় নেতাজিকে সম্মান জানানোর জন্য যে পতাকা দিয়ে মর্যদা দেওয়া হয়েছিল সেই পতাকা প্রথম উত্তোলন করা হয়েছে। স্বরাজ দ্বীপকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস দ্বীপ হিসেবে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনকে পরাক্রম দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ২৬ শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের সাথে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনকে সংযুক্ত করার জন্য বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ইন্ডিয়া গেটে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর স্ট্যাচু উন্মোচন করা হয়েছে বলে জানান মু্খ্যমন্ত্রী। ২৩ জানুয়ারি পালন একটা ঐতিহ্যের বিষয়। এই দিনটির জন্য সমগ্র আগরতলাবাসী অপেক্ষা করে থাকে। ২৩ জানুয়ারি উপলক্ষ্যে নেতাজি সুভাষ বিদ্যানিকেতনের শোভা যাত্রা দেখতে সকাল থেকে রাস্তার পাশে মানুষ অপেক্ষা করতে থাকে। নেতাজি সুভাষ বিদ্যানিকেতনের জন্য একটা গৌরব ও আনন্দের বিষয় বলা চলে। এদিন শোভাযাত্রাটি পোস্ট অফিস চৌমুহনি, প্যারাডাইস চৌমুহনি, আই.জি.এম চৌমুহনি, ওরিয়েন্ট চৌমুহনি, কামান চৌমুহনি, নেতাজি কর্নার, নেতাজি চৌমুহনি হয়ে স্কুল প্রাঙ্গনে এসে শেষ হয়।