স্যন্দন প্রতিনিধি। আগরতলা। ১৬ জানুয়ারি : বৃহস্পতিবার রাজধানীর এ ডি নগর স্থিত মনোরঞ্জন দেববর্মা স্মৃতির পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডে পুলিশ সপ্তাহ প্যারেড ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা। মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, রাজ্যের মুখ্য সচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন সহ রাজ্য পুলিশের অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে শহীদ স্মারকে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শ্রদ্ধা জানান।
পুষ্পাঘ্য অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতে প্যারেড প্রদর্শনী হয়। রাজ্য পুলিশ, টিএসআর এবং ট্রাফিক কর্মীরা এই প্যারেড পরিদর্শনীতে অংশ নেন। প্যারেডে অংশ নেন আটটি প্লাটুন। মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রেখে রাজ্য পুলিশের কর্মযজ্ঞ তুলে ধরে বলেন, রাষ্ট্রপতি কালার্স ত্রিপুরা পুলিশ প্রাপ্ত সকলের গর্ব। তারা সবকিছু দেখে রাখে। দেশের মধ্যে সততার দিক দিয়ে ত্রিপুরা পুলিশ শীর্ষস্থানে রয়েছে। মানুষ অসহায় অবস্থা পুলিশের কাছে যায়। কিন্তু মাঝে মাঝে কথা আসে রক্ষকই ভক্ষক। এই কথাগুলি দু-একটি কথার কারণেই আসে।
কোন অবস্থায় যাতে আগামী দিন এই ধরনের কথা পুলিশের উপর না উঠে সেদিকে লক্ষ্য রেখে দায়িত্ব পালন করার জন্য আহ্বান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ট্রান্সফারেন্সের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। যাতে পুলিশের উপর মানুষের আস্থা অর্জন হয়। কারণ মানুষ যখন কোন সমস্যা শিকার হয় তখন পুলিশের দ্বারস্থ হয়। তাই মানুষ যাতে সেই আস্হা রাজ্য পুলিশের উপর রাখে সেদিকে গুরুত্ব দিয়ে দায়িত্ব পালন করার। এবং মানুষের জন্য যেভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে সেভাবেই যাতে তারা দায়িত্ব পালন করে তার জন্য আহ্বান জানিয়েচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। আইন শৃঙ্খলা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুলিশ যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সঠিকভাবে করেন তাহলে ত্রিপুরার উন্নয়ন আরো বেশি সম্ভব। মুখ্যমন্ত্রী বলেন আইনশৃঙ্খলার দিক দিয়ে ত্রিপুরা ২০২৩ সালে নিচের দিক থেকে পঞ্চম স্থানে ছিল। ২০২৪ সালে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। যার কারণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে বিষয়টি গর্বের সাথে তুলে ধরা যায়। আগামী দিন আরো নিচের দিকে নেওয়ার লক্ষ্য রাখতে হবে। ২০২৪ সালে গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম অপরাধের পরিসংখ্যান লক্ষ্য করা গেছে। পুলিশের ভূমিকা কারণে শান্তিপূর্ণভাবে লোকসভা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। শুধু তাই নয় যে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে ত্রিপুরা পুলিশ প্রশংসা অর্জন করেছে। ২০২৪ সালে সম্পত্তির সংক্রান্ত অপরাধ ৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, হামলা এবং আঘাত জনিত অপরাধ ৩৭.২ শতাংশ কমেছে, শারীরিক অপরাধ ৩৮ শতাংশ কমেছে, মহিলা জনিত অপরাধ ৫৫ শতাংশ কমেছে, এর সাথে কাজের অগ্রগতি এবং উন্নয়নের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে ত্রিপুরায়। সরকার জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাজ্য পুলিশ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে, অপরাধমূলক ঘটনা হ্রাস পাওয়ার তথ্যে বুঝা যায়। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, জঙ্গি গোষ্ঠীর আত্ম সমর্পণের মধ্য দিয়ে বলা যায় ত্রিপুরা জঙ্গি মুক্ত। একই সাথে নেশা মুক্ত ত্রিপুরা করতে রাজ্য পুলিশ কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করছে। গত তিন বছরে ১,৬৬৬ টি এন ডি পি এস ধারা অনুযায়ী নেশা কারবারীদের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছে পুলিশ। ৩০৭৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০২৪ সালে প্রায় ৮৬৭ কোটি টাকার মূল্যের নেশা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ১.৬৪ কোটি গাঁজা গাছ ধ্বংস করেছে পুলিশ। অপরদিকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। ১৮ শতাংশ অনুপ্রবেশকারীর বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়েছে। ৩৬.৬ শতাংশ গ্রেফতার বেড়েছে। পাশাপাশি দালালদের গ্রেফতার সাত গুন বেড়েছে। গ্রেফতারের সংখ্যাও ৪০.৫ শতাংশ বেড়েছে। সাইবার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত এক বছরে ত্রিপুরা পুলিশ সাইবার সংক্রান্ত ঘটনার তদন্তে নেমে প্রচুর অর্থ বাজেয়াপ্ত করেছে। এদিন অনুষ্ঠানের শেষে মুখ্যমন্ত্রী সেরা পুলিশ অফিসার এবং সেরা থানার অফিসারদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এবছর কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সেরা পুলিশ স্টেশন হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে বিশ্রামগঞ্জ থানা। মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে সেরা পুলিশ স্টেশনের শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়।