স্যন্দন প্রতিনিধি। আগরতলা। ১১ জানুয়ারি : দ্রুত ভিলেজ কমিটির নির্বাচন সংগঠিত করা, ১২৫ তম সংবিধান সংশোধনী বিল পার্লামেন্টে পাস করা, ককবরক ভাষা অষ্টম তপশিলি ভাষার অন্তর্ভুক্ত করা, বন সংরক্ষণ আইন ২০২৩ বাতিল করা, লাগামহীন সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি বন্ধ করা সহ পাঁচ দফা দাবিতে শনিবার রাজভবন অভিযান সংগঠিত করল ত্রিপুরা উপজাতি গণমুক্তি পরিষদ। আগরতলা শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে সার্কেট হাউস সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে এক বিক্ষোপ সভা সংগঠিত করে।
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকার, বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী, সংগঠনের নেতা রাধা চরণ দেববর্মা সহ অন্যান্যরা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকার বক্তব্য রেখে বলেন, ২০১৮ সালে বামফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতার থেকে হটাবার জন্য ভারতীয় জনতা পার্টি ২৯৩ টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল শূন্যপদ পূরণ করা। তাদের প্রতিশ্রুতি সরকারের প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে বছরের ৫০ হাজার চাকরি দেবে। বিশেষ করে সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে পঞ্চাশ হাজার শূন্যপদ পূরণ করা হবে এবং তারপর যখনই শূন্যপদ সৃষ্টি হবে তখনই সেই শূন্যপদ পূরণ করার উদ্যোগ নেবে। শূন্যপদ তৈরি হওয়ার সুযোগ দেবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। বামফ্রন্ট সরকারের পক্ষ থেকে তাদের এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে বলা হয়েছিল কোথায় ৫০ হাজার শূন্য পদ, ১৫ থেকে ১৬ হাজার শূন্যপদ রয়েছে। তখন তারা বলেছিল যখন শূন্যপদ পূরণ করা হবে তখন দেখবেন কোথা থেকে এত শূন্যপদ এসেছে। এখন বোঝা যাচ্ছে এটা অসত্য বলেছিল তারা। তিনি আরো বলেন, মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি যাতে ক্ষমতায় ফিরতে না পারে তার জন্য তিপরা মথা গত বিধানসভা নির্বাচনে বেছে বেছে মাত্র ৪২ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। তারা জানত উপজাতিদের অংশের মানুষ আগে কংগ্রেস এবং বর্তমানে বিজেপি দ্বারা প্রতারণা শিকার হয়েছে। তাই প্রতারক বিজেপিকে ভোট দেবে না, এবং কংগ্রেসকেও তারা ভোট দেবে না।
তাই বিজেপি -র রক্ষা কবচ হিসেবে ৬০ টি আসনে প্রার্থী না দিয়ে ২২ টি অসংরক্ষিত আসনে প্রার্থী দিয়েছিল তারা। তারপর ভোটে বিভাজন তৈরি করে তথাকথিত উপজাতি ঐক্যের কথা বলে বিজেপি সরকারকে বাঁচতে সাহায্য করেছে। তারপর ১৩ টি আসন পেয়ে ভোটের ফলাফলের ছয় মাসের মাথায় দুজন মন্ত্রী নিয়ে বিজেপি দলে ঢুকে যায় মথা। এভাবে তারা উপজাতি, অনউপজাতি, বেকার যুবক-যুবতিস সহ লক্ষ লক্ষ মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে। এখন বিধানসভা অধিবেশনে যখন বিরোধী দলের বেঞ্চ থেকে বেকারদের কর্মসংস্থান নিয়ে বিধায়ক নয়ন সরকার প্রস্তাব তোলার পর এক পায়ে দাঁড়িয়ে তিপরা মথার বিধায়করা বিজেপি -কে সমর্থন করে বিরোধী দলের বিধায়ক নয়ন সরকারের উত্থাপিত প্রস্তাব পরাস্ত করেছে। কিন্তু এটা বিরোধী দলের বিধায়ক নয়ন সরকারের পরাস্ত করে না, এটা মথার বিধায়কদের অপদার্থতা চেহারা, প্রতারকের চেহারা এবং বেকার যুবক যুবতীদের স্বার্থের পরিপন্থী চেহেরা। এটাই প্রমাণিত হয়েছে ১০ জানুয়ারি শীতকালীন বিধানসভা অধিবেশনের শুরুর দিন।
কিন্তু রাজ্যের ঘরে ঘরে ৪২ লক্ষ মানুষ প্রস্তুত হচ্ছে। মাঠে ময়দানে জবাব দিতে হবে বিজেপি এবং তিপরা মথা। কেউ আপনাদের রেহাত করবে না। সমাজ জীবনে কোন ঠাসা করে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে মানুষ। তিনি আরো বলেন রাজবাড়ী দেখিয়ে আর কতদিন মানুষকে আর কতদিন মানুষকে ভুলিয়ে রাখবেন। মানুষ যখন জবাব চাইছে তখন জবাব দিতে পারছেন না, কিভাবে আর কতদিন নিজেকে গুটিয়ে রাখবেন? তাদের মুখের চেহারা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এখন তারা মানুষের কাছে ধরা পড়ে গেছে। আরো বলেন, বিজেপি, আইপিএফটি এবং তিপরা মথা তিন দলই অপবাদী। তাদের কাছ থেকে ত্রিপুরাকে মুক্ত করতে হলে লড়াই ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই। আগামী দিন যদি জাতি জনজাতি নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করে তাহলে তার ছিন্ন ভিন্ন করে তাদের বোঝাতে হবে ত্রিপুরায় জাতি জনজাতির ঐক্যের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এভাবেই এদিন বর্তমান টিপল ইঞ্জিনের সরকারকে কামান দাগলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।