স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২ জানুয়ারি : ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। দলমত নির্বিশেষে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার একটা দারুণ পরিমণ্ডল তৈরী হয়ে আসছিল রাজ্যে। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ত্রিপুরায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই উৎসব গুলি এখন দলীয়করণ করার চেষ্টা করছে। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী মানুষের উৎসবের মধ্যে তাদের লোক ছাড়া আর অন্যদের ঘেষতে দিচ্ছে না এ সরকার। এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য ২০০ মিটার অন্তর অন্তর কীর্তনের আয়োজন করে রেখেছে। রাজনৈতিক সংকীর্ণতার জন্য তারা এইগুলি করে চলেছে। শুধু তাই নয়, এ ধর্মীয় সংগঠনগুলির মধ্যে বিজেপির লোক ঢুকিয়ে দিয়ে যে সরকারটা তাদের রাজনৈতিক চরিতার্থ করার চেষ্টা করছে। এগুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।
যুগ যুগ ধরে রাজ্যে ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিয়ে মানুষ যেভাবে ঐক্যতা বজায় রেখেছিল সেইভাবে যাতে রাজ্য এগিয়ে যায়। এবং তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে প্রতিবাদ করতে হবে। বৃহস্পতিবার আগরতলা টাউন হলে ত্রিপুরা তপশিলি জাতি সমন্বয় সমিতির রাজ্যভিত্তিক কনভেনশনে বক্তব্য রেখে এই কথাগুলি রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পলিটব্যরোর সদস্য মানিক সরকার। গত ১৭ ডিসেম্বর পার্লামেন্টের অধিবেশনে বাবা সাহেব আম্বেদকরের প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অপমানজনক মন্তব্যের প্রতিবাদ, তপশিলি ছাত্র-ছাত্রীদের স্টাইপেন্ড বৃদ্ধি, সরকারি বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান ও সংরক্ষণ এবং অধিকার সুরক্ষার দাবিতে এই কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। কনভেনশনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলিত শোষণমুক্ত মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক রামচন্দ্র ডোম, ত্রিপুরা তপশিলি জাতি সমন্বয় সমিতির সভাপতি রতন ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক সুধন দাস সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। মহিলা স্ব-সহায়ক দল প্রসঙ্গে এদিন বিজেপি সরকারকে কাঠগড়ায় তোলেন তিনি।
তিনি বলেন, এস এস জি বিজেপি আসার পর নতুন করে রাজ্যে আরম্ভ হয়েছে কিনা? বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ত্রিপুরা দেশে সাত থেকে আটটি রাজ্যের মধ্যে অন্যতম সাফল্য অর্জন করেছিল। তখন মহিলাদের নিয়ে কোন রাজনীতি করণ করা হতো না। মহিলাদের কিভাবে নিজের পায়ে নিজে দাঁড় করানো যায় সেদিকে গুরুত্ব দিয়েছিল তৎকালীন সরকার। বর্তমানে এসএসজি -র মহিলাদের নিয়ে রাজনীতি করতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। যেসব মহিলারা বিজেপির মেম্বার হয়েছে শুধু তারাই এস এস জি -র অন্তর্ভুক্ত হতে পারছে। যার ফলে ভালো অংশের মহিলারা এস এস জি -র আওতায় আসতে পারছে না। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে এস এস জি -র মেরুদন্ড পর্যন্ত ভেঙে দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার। আগে স্বল্প সুদে মহিলাদের স্বাবলম্বী করার জন্য ঋণ দেওয়া হতো।
বর্তমানে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয় এস এস জি -র। কনভেনশনে এ দিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি সরকারকে কর্মসংস্থান নিয়েও কাঠগড়ায় তুললেন। তিনি বলেন, বেকারদের সমস্যা নিয়ে যখন ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তখন বিরোধী দলের বক্তব্য কাউন্টার করার চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু কাউন্টার দিতে গিয়ে যদি চাঁদকে সূর্য এবং সূর্যকে চাঁদ বানিয়ে ফেলার চেষ্টা করে তাহলে চলবে না। রাজ্যে গত কয়েক বছর ধরে দেখা গেছে মন্ত্রী সভার বৈঠকে শূন্যপদ তৈরি হচ্ছে কিন্তু পূরণ হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের জন্য চাকরি হলেও নিয়মিত চাকরি দেখা নেই। ফলে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে রাজ্যের ছেলেমেয়েরা। এক প্রকার ভাবে ছেলেমেয়েদের বঞ্চিত করে চলেছে এ সরকার। এটা শুধু যুবকদের লড়াই নয়। এ লড়াইয়ে শামিল হতে হবে সকলকে। কারণ যুবকরা সকলের পরিবারের সন্তান। এমনটাই দাবি করলেন তিনি। নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট কায়দায় একদলীয় স্বৈরশাসনের লক্ষ্য নিয়ে এক দেশ এক ভোট স্লোগান তুলেছে বিজেপি। পাশাপাশি দেশের সংবিধানকে তারা পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে। এক দল, এক দেশ, এক নেতা, এক ভাষা, এক কৃষ্টি, এক সংস্কৃতি চালু করতে তারা উঠে পড়ে লেগেছে। অর্থাৎ মুখে গণতন্ত্র বললেও বাস্তবে গণতন্ত্র নেই। এর বিরুদ্ধে নতুন বছর আন্দোলন গড়ে তুলতে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন কর্মীদের উদ্দেশ্যে। তিনি আরো বলেন বিজেপি সরকারের আমলে জিনিসপত্রের মূল্য বেড়েছে, কিন্তু দাম কমেছে টাকার। এক জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে দেশ। একই সাথে নির্বাচন কমিশনকে তুলোধুনো করে বলেন নির্বাচন কমিশন বগল দাবা করেছে বিজেপি। চিফ জাস্টিস ছড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজের মতো করে নির্বাচন কমিশন চালিয়ে যাচ্ছেন। এই কমিশন সর্বদলীয় বৈঠক করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভোটকেন্দ্রে ওয়েট কাস্টিং মেশিন লাগানো হবে, সিসি ক্যামেরা বসানো হবে এবং যে প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়াবে তার ইতিহাস খতিয়ে দেখবে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এগুলো নিয়েও সমস্যায় পড়ে গেছে বিজেপি। তাই এগুলো পূরণ হচ্ছে না এখন। তাই দেশকে রক্ষা করতে এ সমস্যাগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে বলে জানান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।