স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২১ ডিসেম্বর : নতুন ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে পাহাড়ি প্রান্তিক রাজ্য ত্রিপুরা। দ্বিতীয়বারের মতো উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন পরিষদের ৭২ তম প্লেনারি বৈঠকের আয়োজন করা হয় রাজ্যে। শনিবার আগরতলা প্রজ্ঞা ভবনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ -র পৌরহিত্যে শুরু হল উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন পর্ষদের ৭২ তম প্লেনারি বৈঠক। বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য মাধবরাও সিন্ধিয়া, ডোনার মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার সহ সিকিম, অরুনাচল প্রদেশ, মনিপুর, মেঘালয়, আসাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা ও মিজোরামের রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী সহ প্রশাসনিক আধিকারিকরা উপস্থিত রয়েছেন।
প্রজ্ঞা ভবনে এইদিন এক এক করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য মাধবরাও সিন্ধিয়া, ডোনার মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার সহ বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী সহ প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা। পরে প্রজ্ঞা ভবনে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন পর্ষদের ৭২ তম প্লেনারি বৈঠকের সুচনা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পরে শুরু হয় বৈঠক। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যের বিগত দিনের উন্নয়ন মূলক কাজ সহ আগামী দিনের কাজের বিষয়ে আলোচনা হয়। বিগত এক বছরে উত্তর পূর্ব উন্নয়ন পর্ষদ ও ডোনার মন্ত্রকের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যে সকল উন্নয়ন মূলক কাজ হয়েছে সেই সকল কাজ নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়।
আয়োজিত বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বক্তব্য রেখে বলেন, গত ১০ বছর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গত ১০ বছরের উত্তর পূর্বাঞ্চলকে গোটা বিশ্বের ফোকাসে এনে দাঁড় করিয়েছেন। এটা উত্তর পূর্বাঞ্চলের জন্য একটা বড় প্রাপ্তি। আগে দিল্লির জন্য উত্তর পূর্বাঞ্চল ছিল শুধুমাত্র ভাষণের একটি সুযোগ। গত ১০ বছরে উত্তর পূর্বাঞ্চলের ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নত হওয়ায় দিল্লির সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যের দূরত্ব কমেছে। একই সাথে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দিল্লির মনের দূরত্ব কমানোর জন্য কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে বিকাশের রাস্তায় এগিয়ে চলেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে সবচেয়ে বড় কাজ হলো উত্তর পূর্বাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ হয়েছে।
এর জন্য কুড়িটির বেশি চুক্তি এবং ৯ হাজারের অধিক যুবককে অস্ত্র ছেড়ে আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের সাধারণ জীবন যাপনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তারপর শান্তির প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের বক্তব্য রেখে তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী চান যাতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রত্যেকটি মানুষ স্বনির্ভর হয় এবং দেশের বিকাশে যাতে শামিল হয়। আর এটাই নরেন্দ্র মোদীর সরকারের মূল লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে একটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চলেছে। এখন পর্যন্ত তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রাজ্য গুলিতে ৬৫ বার সফর করেছেন। আর প্রত্যেকবারই তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে কিছু না কিছু উপহার দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, দশ বছর আগে কেন্দ্রে যখনই বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তখন থেকেই উত্তর পূর্বাঞ্চলের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করা শুরু হয়েছে।
কিন্তু কেন্দ্রে যখন অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন সরকার ছিল তখন ডোনার মন্ত্রক স্থাপন করা হয়েছিল। এই ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার যখনই কেন্দ্রে ছিল তখনই উত্তর পূর্বাঞ্চলের সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কোন সুযোগ হাতছাড়া করে নি। বিশেষ করে উন্নয়নের ক্ষেত্রে নর্থ ইস্ট কাউন্সিল বৈঠকের বড় ভূমিকা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে আর কিছুদিন পর বিশ্বের কানেক্টিভিটির সমস্যা থাকবে না। সরকারের লক্ষ্য উত্তর-পূর্বকে দ্রুত বিশ্বের সাথে জুড়ে দেওয়ার। তারপর বিশ্বের বাজার উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে প্রবেশ করতে খুলবে। এর জন্য উত্তর পূর্বাঞ্চলে সমস্ত রাজ্যকে প্রচেষ্টা করতে হবে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের সব কটি রাজ্যে বিনিয়োগকারী আসার জন্য উৎসাহিত করবে কেন্দ্র। ইতিমধ্যে কেন্দ্র সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেমি কন্টাকটার ও ডিসপ্লে নির্মাণের ইকো সিস্টেমের জন্য তিন সেমি কন্ডাক্টর ইউনিট উত্তর পূর্বাঞ্চলে স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা মিলবে উত্তর পূর্বাঞ্চলের। তিনি আরো বলেন, বড় বড় বিনিয়োগকারী রাজ্যগুলিতে আসতে চাইলে তা নিয়ে আরও বেশি উৎসাহিত হতে হবে। এতে আপত্তি করলে চলবে না।
রাজ্যের বিকাশ দিয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চল সব সময় শান্ত থাকবে না। একই সঙ্গে ব্যক্তি, গ্রাম এবং রাজ্যের মধ্যে বিকাশের সামঞ্জস্যতা থাকতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এদিন বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পামওয়েলের উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন পামওয়েল দ্বারা আত্মনির্ভর সম্ভব। একই সাথে তিনি নেশা নিয়ে বলেন উত্তর পূর্বাঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালদের উদ্দেশ্যে বলেন, নেশার দ্বারা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যে কলঙ্ক হয়েছে সে কলঙ্ক মুছতে হবে। এর জন্য নেশা মুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। একই সাথে গোটা ভারতকে পর্যন্ত নেশা মুক্ত করার জন্য বড় কর্মযজ্ঞ করতে পারে উত্তর-পূর্বাঞ্চল। তিনি আরো বলেন, গত কয়েক মাস আগে কেন্দ্রীয় সরকার ন্যায় সংহিতা আইন কার্যকর করেছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে দিল্লিতে এক বৈঠক করা হবে। সেই বৈঠকের আগে এনসিআরবি এবং বিপিআরএনডি নিয়ে রাজ্যের পুলিশ আধিকারিকদের সাথে মুখ্যমন্ত্রীদের আলোচনা করার জন্য নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পুরোপুরিভাবে তিনটি ন্যায় সংহিতা কার্যকর হলে সুপ্রিম কোর্ট থেকে তিন বছরের মধ্যে অভিযোগকারী ন্যায় মিলবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিনের বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি ব্যাংক সামিটে অংশ নেন। রাজ্যের বর্তমান আয় সহ বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পর্কে আলোচনা করেন ব্যাংকের আধিকারিকদের সাথে।