স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১২ নভেম্বর : মঙ্গলবার সাম্প্রদায়িক হিংসায় ক্ষতিগ্রস্ত কদমতলা পরিদর্শনে গেলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহা, বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন সহ একটি প্রতিনিধি দল। গত ছয় অক্টোবর কদমতলায় ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত হিংসাত্মক ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কদমতলা বাজারের প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল কদমতলা বাজার মসজিদ, ভেঙে দেওয়া হয়েছিল একটি শনি মন্দির।
এছাড়াও দুষ্কৃতিকারীরা ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করেছিল প্রায় দশটি বসত বাড়ি। পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিল মোবাইল দোকানের এক ব্যবসায়ী এবং আহত হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন। মঙ্গলবার কদমতলায় গিয়ে গোটা দৃশ্য সর জমিনের পরিদর্শন করেন তারা। ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলে ঘটনার সম্পর্কে অবগত হন। তারপর ঘৃনা বর্ষণ করে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহা বলেন, গন্ডাছড়া, রানীর বাজার এবং কদমতলার ঘটনার মতো কোনো ঘটনা আগে ঘটেনি। এই ধরনের ঘটনা সরকারের ইন্দনে, পুলিশের মদতে এবং একজন বিধায়ক ও জেলা পরিষদের চেয়ারপার্সনের উপস্থিতিতে সেদিন এই ঘটনা ঘটেছে। গন্ডারছড়া এবং রানীবাজার ব্যর্থ হলেও কদমতলায় খানিকটা সাফল্য পেয়েছে বলে দাবি করলেন তিনি। পাশাপাশি রাজ্য প্রশাসনের দুর্বলতা এবং শাসকদলের জেলা নেতৃত্ব সহ বিধায়কের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি।
তাছাড়া হিংসাত্মক ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সহ দোকান ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং পুলিশের গুলিতে নিহত পরিবারে একটি সরকারি চাকরি, আহতদের সাহায্যের আবেদন রাখেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহা। এদিকে বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন এ সমস্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়ে বলেন, রাজ্য সরকার এবং প্রশাসন উক্ত ঘটনার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী। তাদের ঢিলে মনোভাবের কারণে উভয় সম্প্রদায়ের একটা দুষ্টচক্র এমন জঘন্যতম ঘটনার সুযোগ পেয়েছে। শুধু কদমতলা নয় রাজ্যের একাধিক জায়গায় এমন ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। সাধারণ মানুষের দিশা ঘুরাতে এমন চক্রান্ত করে যাচ্ছে একটা গোষ্ঠী। তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। তিনি অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে বলেন উক্ত কাণ্ডে লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের পাঁচ হাজার টাকা করে আপাতত আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে বলে। যেটা ঘোষণা করা হয়েছিল তারমধ্যে মাত্র ২১ জনকে মনে হয় দেওয়া হয়েছে বলে শুনতে পাওয়া যায়। বাকিরা একটি টাকাও পায়ি। নাম না করে তিনি সরকার বাহাদুরকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি বলেন অযোগ্য এবং বর্বর একটা লোক রাজ্য চালাচ্ছে।পাশাপাশি তিনি এলাকার সর্বস্তরের সুবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাছে আবেদন রাখেন যেন শান্তি-শৃঙ্খলা-সুভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার জন্য। কারণ চক্রান্তকারীরা আবারো এসব চক্রান্তের চেষ্টা করবে।
তাই তাদের ফাঁদে পা দিতে না করা হয়। তিনি আরো বলেন দলমত নির্বিশেষে মানুষ হিসাবে মানবতার জয় নিশ্চিত করতে জেহাদ ঘোষণা করুন। কারণ মানবতাই হচ্ছে আসল ধর্ম, সব ধর্ম সেই কথাই বলে। মানুষ যতক্ষণ না সেই জায়গায় গিয়ে পৌঁছাবে ততক্ষণ তারা এভাবেই চালিয়ে যাবে। তাই চক্রান্তকারীদের উৎখাত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের আহ্বান জানান বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন। তিনি আরো জানিয়েছেন আগরতলায় ফিরে রাজ্যের মুখ্য সচিবের কাছে যাবেন। ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার দাবি করা হবে। একই সাথে জেলা শাসককে সহযোগিতার কথা বলা হবে। প্রয়োজনে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে চিঠি লেখা হবে বলে জানিয়েছেন। তবে নিন্দনীয় ঘটনা হলো ঘটনার একমাস ৬ দিন অতিক্রান্ত হতে চলেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের খোঁজখবর নেয়নি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কেউ।